সুপারস্টার হয়ে ওঠার সেই মুহূর্ত।
সুপারস্টার হয়ে ওঠার সেই মুহূর্ত।

অপচয় হয়নি চেলসির ১০ কোটি ২০ লাখ ডলার

গোটা মৌসুমই তাঁর কাছে ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। কিন্তু সেই মৌসুমই আবার কী দারুণভাবেই না শেষ হলো কাই হাভার্টজের। অনেক আশা, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে চেলসি এই জার্মান তরুণকে দলে ভিড়িয়েছিল, মৌসুমজুড়ে হাভার্টজ প্রত্যাশার ধারকাছ দিয়েও যেতে পারেননি। অথচ তাঁর গোলেই কিনা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতল চেলসি!

ম্যানচেস্টার সিটির রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে ম্যাচের ৪২ মিনিটে হাভার্টজের গোলেই চেলসির এগিয়ে যাওয়া। শেষ পর্যন্ত রক্ষণে শৃঙ্খলা আর দৃঢ় প্রত্যয়ে ফাইনালটা নিজেদের করে নিয়েছে তারা। বায়ার্ন লেভারকুসেন থেকে নিয়ে আসার জন্য হাভার্টজের পেছনে চেলসির ১০ কোটি ২০ লাখ ডলার খরচ করা নিয়ে যখন চাপা আলোচনা; পুরো অর্থ ‘জলে ফেলা’র দায়ে চেলসি–সমর্থকেরা যখন ক্লাব কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তুলছেন, তখনই হাভার্টজ জ্বলে উঠলেন। জ্বলে উঠলেন মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনই, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেই।

ঠিক সময়ই জ্বলে উঠলেন হাভার্টজ।

ক্যারিয়ারের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ গোলটাই হাভার্টজের জন্য কী মহিমান্বিত! ম্যাসন মাউন্টের চমৎকার এক থ্রু থেকে বল ধরে গতিতে ম্যানচেস্টার সিটির ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলেন। এরপর গোলকিপার এদেরসনকে বোকা বানিয়ে ঠান্ডা মাথায় জালে ঠেলে দিলেন বলটা। তাঁর উদ্‌যাপনই বলে দিচ্ছিল গোলটা করে কী ভারী এক পাথর বুক থেকে নামিয়েছেন!

অথচ এই হাভার্টজই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলতে এসে মৌসুমজুড়েই যেন অসহায় বোধ করছিলেন। তাঁকে পুরোপুরি মনে হচ্ছিল ডাঙায় খাবি খাওয়া মাছের মতো। দলের চাহিদা মেটাতে পারছিলেন না, প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চেও তাঁকে বড্ড বেমানান মনে হচ্ছিল। সেই হাভার্টজই যখন জয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন, তখন সেটিকে তো রূপকথাই মনে হয়। চ্যাম্পিয়নস লিগ তো এমনই। এ টুর্নামেন্টের মঞ্চ তো প্রতিনিয়ত জন্ম দিয়ে যায় রূপকথার।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হাভার্টজ খুঁজলেন প্রিয়জনের সান্নিধ্য।

এমনিতেই বাজে ফর্মে ছিলেন, তার ওপর গত নভেম্বরে কোভিডে আক্রান্ত হন তিনি। পুরো সুস্থ হয়ে মাঠে নামার অবস্থায় ফিরতে লেগে গিয়েছিল তিন সপ্তাহের মতো। কিন্তু সব দুঃস্বপ্নই পেছনে ফেলেছেন হাভার্টজ। গতকালের গোল তাঁকে দারুণ এক কীর্তির সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। ১৯৯৭ সালের পর তিনিই সবচেয়ে কম বয়সী জার্মান ফুটবলার, যিনি গোল পেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে। ২৫ বছর আগে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে গোল পেয়েছিলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের লার্স রিকেন, এত দিন তিনিই ছিলেন ইউরোপসেরা লড়াইয়ের চূড়ান্ত মঞ্চে গোল করা তরুণতম জার্মান।

চ্যাম্পিয়নস লিগের রুপালি ট্রফিটা হাত দিয়ে ধরার পর তাই আবেগ বাঁধ ভেঙেছিল হাভার্টজের। কথাই বলতে পারছিলেন না ঠিকমতো। কেবলই বলছিলেন, ‘আমি জানি না কী বলব! সত্যিই জানি না কীভাবে এ অনুভূতি প্রকাশ করব! কেবল বলতে পারি, এই মুহূর্তের জন্য আমি দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় ছিলাম। এ মুহূর্তের স্বপ্ন আমি দেখেছি ১৫ বছর ধরে। অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হলো। অপেক্ষার পালা ফুরাল।’

দুঃস্বপ্নের মতো একটা মৌসুম শেষ হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের গৌরবে।

মৌসুমের শুরুতে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের অধীনেই নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না হাভার্টজ। অনেকেই বলেন, হাভার্টজের বাজে ফর্ম ল্যাম্পার্ডের চাকরি যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। গত জানুয়ারিতে সাবেক ইংলিশ তারকা চেলসির কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হন। তাঁর অধীনে হাভার্টজের গোল ছিল মাত্র একটি। ল্যাম্পার্ডের পর পিএসজি থেকে এসে দায়িত্ব নেন টমাস টুখেল। কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় যে স্বদেশি কোচ পেয়েই হাভার্টজ নিজেকে ফিরে পেয়েছেন।

গত এপ্রিল পর্যন্ত একটি গোলও করতে পারেননি হাভার্টজ। কিন্তু এরপর থেকেই ধীরে ধীরে টুখেল তাঁর মধ্য থেকে ভালোটা বের করে নিয়ে আসতে থাকেন। সমর্থকেরা বুঝতে পারেন, কেন এই তরুণের পেছনে এত টাকা খরচ করেছে চেলসি। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে যে তিনি গোল করে দলকে জেতাবেন, এমনটি বোধ হয় মাথায় আনতে সাহস পাননি সমর্থকদের বেশির ভাগই। এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের প্রথম একাদশে হাভার্টজকে দেখে অবাক হয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার বিরক্তও হয়েছিলেন! কিন্তু সেই বিরক্তি আর বিস্ময় এখন রূপ নিয়েছে ভালোবাসায়!