ইতিহাস জার্মানির বিপক্ষে এবার। ইউরোপ থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া শেষ তিন দলই পরের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়েছে। জার্মানিও কি সেই ভাগ্য বরণ করবে? প্রথম ম্যাচের পরই এতটা বলা বাড়াবাড়ি। তবে প্রথমার্ধ দেখে সেই প্রশ্নটা উঠে গিয়েছিল। গতিময় মেক্সিকোর সামনে এতটাই অসহায় মনে হচ্ছিল জার্মানিকে। মেক্সিকোর কাছে ১-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ শুরু হলো চ্যাম্পিয়নদের।
৩৫ মিনিটে হিরভিং লোজানোর দারুণ এক গোলে এগিয়ে যায় মেক্সিকো। সেই গোলের অগ্রগামিতা তারা ধরে রেখেছে বাকি ৫৫ মিনিট। বিশ্বকাপে প্রথমে গোল খেয়েও জার্মানি ম্যাচ জিতেছিল ২০ বছর আগে। সেটা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার প্রথমে পিছিয়ে পড়েও ২-১ ম্যাচ ব্যবধানে ম্যাচ বের করে নিয়ে গিয়েছিল জার্মানরা। প্রতিপক্ষ? মেক্সিকো! আজ আর সেটা হয়নি।
এবার প্রত্যাশার চূড়াটা বেশ উঁচুতে বেঁধে দিয়েছে পর্তুগাল ও স্পেন। টানটান উত্তেজনার সেই ম্যাচের মতো না হলেও প্রথমার্ধটা বিমল আনন্দ দিয়েছে সবাইকে। ম্যাচের শুরু থেকেই গতিময় ফুটবল দেখা গেছে। গতির তোড়ে জার্মানদের বারবার ভয় দেখাচ্ছিল মেক্সিকো। শুধু ডি–বক্সের আশপাশে এসে মাথা ঠান্ডা রাখতে না পারায় গোল আর পাচ্ছিল না। ১১ মিনিটের মধ্যে ম্যানুয়েল নয়্যারকে তিনবার বল গ্লাভসে নিতে হয়েছে। এ ছাড়া বার দুয়েক শেষ মুহূর্তে হার্নান্দেজ কিংবা লায়ুনরা বোকামি না করলে ২০ মিনিটের মধ্যেই দুইবার এগিয়ে যেতে পারত মেক্সিকো।
মেক্সিকোর সব কটি আক্রমণই ছিল প্রায় একই ছন্দে। বল দখলের জন্য জার্মান ফুলব্যাকরা মাঝমাঠের অনেক ওপরে চলে যাচ্ছেন, সেই সুযোগ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে উঠেছে মেক্সিকো। বোয়েটেং আর হামেলস মেক্সিকোর গতির সঙ্গে ঠিক পেরে উঠছিলেন না। কিন্তু ভেলা-লোজানোরা বারবার বেশি সময় নিয়ে ফেলছিলেন শট নিতে গিয়ে।
২৭ মিনিটে গোল বাঁচানো এক ট্যাকল করতে হয়েছে হামেলসকে। ৩৫ মিনিটে ভুলের ধারা ভাঙলেন হিরভিং লোজানো। প্রতি–আক্রমণে ওঠা মেক্সিকোকে আটকাতে গিয়ে মাঝমাঠেই ট্যাকল করতে গিয়ে পড়ে গেলেন বোয়েটেং। হাভিয়ের হার্নান্দেজের কাছ থেকে পাওয়া বল পেয়ে এবার আর কোনো ভুল করলেন না লোজানো। বক্সের মধ্যে জার্মান ডিফেন্ডারের স্লাইড ট্যাকল এড়িয়ে নিচু এক শটে ফাঁকি দিলেন নয়্যারকে।
৩৯ মিনিটে ম্যাচে সমতা প্রায় এনেই দিয়েছিলেন টনি ক্রুস। জোশুয়া কিমিখকে বক্সের বাইরে ফাউল করা হয়েছিল। সেখান থেকে নেওয়া ফ্রিকিক নিশ্চিতভাবেই যখন জালে জড়াবে মনে হচ্ছে, তখনই যেন বাজপাখির মতো উড়ে এলেন গিয়ের্মো ওচোয়া। দুর্দান্ত এক সেভে দলকে এগিয়ে রাখলেন গত বিশ্বকাপের চমক ওচোয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও মেক্সিকান গতি টের পেয়েছে জার্মানি। বেশ কয়েকবারই প্রতি-আক্রমণে উঠেছে দলটি। আর সাজিয়ে-গুছিয়ে আক্রমণে উঠেছে জার্মানি। কিন্তু গোলের প্রথম সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে মেক্সিকো। কিন্তু কার্লোস ভেলার চমৎকার এক পাস নষ্ট করেছেন আন্দ্রেস গুয়ারদাদো। এরপরই আক্রমণের ঝড় বইয়ে দিয়েছে জার্মানি। ৬১ ও ৬৫ মিনিটে দুটি সুযোগ নষ্ট করেছেন ড্রাক্সলার ও কিমিখ। ৬৭ মিনিটে টিমো ভেরনারও যোগ দিলেন তাঁদের দলে।
৭৩ মিনিটে একটা রেকর্ড হলো। বদলি হিসেবে মাঠে নামলেন রাফায়েল মার্কেজ। ব্যস, তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপে মাঠে নামার গৌরবে নাম লেখানো হলো ৩৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের। মজার ব্যাপার, আগের দুজন মেক্সিকোরই আন্তোনিও কারবাহাল ও জার্মানির লোথার ম্যাথাউস। সে রেকর্ড নিয়ে গৌরব নয়, বরং তাঁকে যে কাজে নামানো হয়েছে তাতেই মন দিতে হয়েছে মার্কেজকে। সেটা হলো জার্মানির গোল আটকানো।
সেটা পুরো দল মিলেই করল। ৭৬ মিনিটে ক্রুসের শট তাই গোলমুখে গেল না। পরের মিনিটে জুলিয়ান ড্রাক্সলারের শটটাও তাই গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিলেন। ৭৯ মিনিটেও মেসুত ওজিল শুধু হতাশাই বাড়ালেন। এর মাঝেই অবশ্য মেক্সিকো এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুর্দান্ত প্রতি-আক্রমণ নষ্ট করতে তো মিগেল লায়ুন একাই যথেষ্ট ছিলেন। ৮২ মিনিটেও আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন লায়ুন।
শেষের ১০ মিনিটে একের পর এক আক্রমণ করে গেল জার্মানি। কিন্তু কখনো ক্রুস, কখনো গোমেজ, কখনোবা ইউলিয়ান ব্রান্ট শুধু আক্ষেপই বাড়ালেন। এর মাঝে ৮৯ মিনিটে মারিও গোমেজ দারুণ এক জায়গায় থেকেও জোরালো হেড করতে পারলেন না। সেই হতাশা ম্যাচ শেষে হারের যন্ত্রণাতেই রূপ নিয়েছে।