কাল বার্নাব্যুতে ঝড় উঠেছিল। আর তাতে লন্ডভন্ড রিয়াল মাদ্রিদ। নিজেদের মাঠে মর্যাদার ম্যাচ এল ক্লাসিকোতে ৪-০ গোলে উড়ে গেছে।
ম্যাচ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বলবেন, গোল কমই হয়েছে। কাল যেভাবে খেলেছে রিয়াল, তাতে আরও গোটা তিন-চারেক গোল হলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। না, এটা শুধু উৎফুল্ল কোনো বার্সেলোনা-সমর্থক বা বিমর্ষ রিয়াল-সমর্থকের মত নয়; রিয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার থিবো কোর্তোয়াই বলছেন, ম্যাচের ফল আরও খারাপ হতে পারত।
৪-০ গোলে হারা ম্যাচে ঝড়টা গোলকিপারের ওপর দিয়েই যায়। বার্সেলোনার বিপক্ষে এর চেয়ে বড় ব্যবধানে হারার রেকর্ড আছে কোর্তোয়ার। নিজের প্রথম ক্লাসিকোতেই সে স্বাদ পেয়েছেন। কিন্তু গতকালের ম্যাচের মতো এমন পরীক্ষা তাঁকে আর কখনো দিতে হয়নি। কোচ কার্লো আনচেলত্তির ব্যাখ্যাতীত কৌশল রিয়ালের ভুল আর খুঁতগুলোকে আরও নগ্নভাবে তুলে ধরেছিল।
বার্নাব্যুতে সর্বশেষ ম্যাচেই অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ উপহার দিয়েছিল রিয়াল। তারকাভরা পিএসজিকে নিজেদের মাঠে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল রিয়াল। কাল তাই সমর্থকেরা হাজির হয়েছিলেন তেমন কিছু দেখার আশায়। কাগজে-কলমে বার্সেলোনা তো পিএসজির চেয়ে অনেক পিছিয়ে। কিন্তু করিম বেনজেমা ও ফারলাঁ মেন্দির অনুপস্থিতি আর সে সঙ্গে আনচেলত্তির ভুল কৌশল কাল সর্বনাশ ডেকে এনেছে রিয়ালের। নিজেদের মাঠই যেন বড় অচেনা ঠেকল তাঁদের কাছে!
ম্যাচ শেষে তাই প্রথমেই সমর্থকদের এমন কিছু দেখতে হয়েছে বলে একপ্রকার ক্ষমাই চেয়ে নিয়েছেন রিয়াল গোলকিপার, ‘আমরা যা খেলা দেখিয়েছি, তা অগ্রহণযোগ্য। আমরা তেড়েফুঁড়ে ম্যাচ শুরু করতে চেয়েছিলাম। তারা ফাঁকা জায়গা খুঁজে পেয়েছে। আমাদের রক্ষণ জমাট ছিল না। প্রথম গোলে সম্ভবত আমরা মনোযোগীও ছিলাম না। পরে আরেকটি গোলেও তা-ই হয়েছে। আমরা মনে করেছি, বিরতির পর হয়তো খেলায় ফিরতে পারব...’
কাল আনচেলত্তি ব্যাখ্যাতীত সব কৌশল ব্যবহার করেছেন। প্রথমে বার্সেলোনাকে প্রেস করতে চেয়েছেন, তাতে কোর্তোয়া যেমনটা বলেছেন, মাঝমাঠ ও রক্ষণের মধ্যে অনেক ফাঁকা জায়গা বের হয়ে গেছে। এরপর দুই ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস ও রদ্রিগোকে পেছনে টেনে মদ্রিচকে ফলস নাইন হিসেবে খেলিয়েছেন। যাঁর কাজ মাঝমাঠ থেকে খেলা গড়ে দেওয়া, তাঁকে এত ওপরে ওঠানোর ব্যাখ্যা কোর্তোয়ার কাছেও নেই, ‘কৌশল নিয়ে কথা আমরা নিজেদের মধ্যেই বলব। ম্যাচের শুরু বা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে করতে পারিনি।’
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কৌশলে আরও ভয়ংকর ভুল করেছেন আনচেলত্তি। এমনিতেই মেন্দির জায়গায় নাচো খেলছিলেন। প্রকৃত ফুল ব্যাক শুধু কারভাহাল ছিলেন। ২-০ অবস্থায় তাঁকে তুলে নিয়ে ভাসকেজকে না নামিয়ে নামানো হয়েছে স্ট্রাইকার মারিয়ানোকে। আর ক্রুসকে তুলে নিয়ে কামাভিঙ্গার মতো বল পায়ে স্বচ্ছন্দ মিডফিল্ডারকে কার্যত ডিফেন্ডার হিসেবে খেলানো হয়েছে। কোনো ফুলব্যাক নেই, মাঝমাঠে ক্রুস নেই। এতে রিয়ালের সমস্যা আরও বেড়েছে। ৬ মিনিটের মধ্যেই আরও ২ গোল খেয়েছে রিয়াল।
কোর্তোয়া এ ব্যাপারে বিতর্কিত কিছু বলতে চাননি। তবে স্বীকার করেছেন, যা হচ্ছিল, তাতে ম্যাচের স্কোরকার্ড আরও ভয়ংকর দেখালেও বিস্ময়ের কিছু ছিল না, ‘মাঝেমধ্যে খেলায় এটা করতে হয়। আমরা ভালোই শুরু করেছিলাম। ফেদে একটা সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু এরপর পিছিয়ে পড়লাম। আমরা বল বের করার জন্য কাউকে পাইনি সামনে। দ্বিতীয়ার্ধে তো লড়াই করা ছেড়ে দিয়েছি। ওরা সুযোগ পেয়েছে এবং ফল আরও খারাপ হতে পারত।’