ফ্রাঁসোয়া জাভিয়ের ফুমু তামুজো নামটা বিশ্ব ফুটবলে একেবারেই অপরিচিত। কখনো নামীদামি ক্লাবে খেলার সুযোগও হয়নি। তবু তাঁকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে নতুন এক কারণে। চোটের কারণে ২০২২ সাল থেকে মাঠের বাইরে ছিলেন তামুজো। সেরে ওঠার লড়াইয়ে পেরে না ওঠায় কদিন আগে তিনি অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
সর্বশেষ ফ্রান্সের দ্বিতীয় স্তরের ক্লাব লাভালেতে খেলা ২৯ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের দাবি, তিনি অবসর নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ জন্য দায়ী করেছেন করোনার টিকা উৎপাদনকারী দুটি প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও বায়োএনটেককে। প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে তিনি মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএফ) ফুটবলারদের জন্য এই টিকা সরবরাহ করায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফ্রান্সের দৈনিক লে’কিপ গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
তামুজো মনে করেন, করোনার টিকা নেওয়ার সঙ্গে তাঁর চোটে পড়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির ওষুধ প্রস্তুত শিল্প ও জৈবপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও বায়োএনটেকের ৩ ডোজ টিকা নিয়েছিলেন তামুজো। প্রথম ডোজ ২০২১ সালের জুলাইয়ে, দ্বিতীয়টি একই বছরের আগস্টে এবং শেষটি ২০২২ সালের মার্চে। টিকা নেওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যা তাঁর শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তখন থেকে তাঁর বিভিন্ন মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথার উদ্রেক হয় এবং ঘন ঘন চোটে পড়তে থাকেন।
তামুজোর অভিযোগ, করোনার টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ নেওয়ার পর তাঁর মাংসপেশিতে সমস্যা দেখা দেয় এবং তিনি নিয়মিত চোটে পড়তে থাকেন, যা তাঁর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে এবং একসময় মাঠের বাইরে ছিটকে দেয়।
সমস্যা আরও বাড়ে যখন তিনি একিলিস টেন্ডনের চোটে পড়েন। এরপর তাঁকে অস্ত্রোপচার করাতে হয়। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় ৮ মাস। ২০২২ সালের জুলাইয়ে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হলেও খেলার মতো ফিট হয়ে উঠতে পারেননি।
এ জন্য তামুজো ও তাঁর আইনজীবী এরিক লাঁজারোন ফাইজার ও বায়োএনটেকের পাশাপাশি ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনকেও দায়ী করেছেন। মার্শেই আইনজীবী সমিতির সদস্য লাঁজারোন লে’কিপকে বলেছেন, ‘ফুমু তামুজোকে যখন টিকা দেওয়া হয় (জুলাই ২০২১), তখন এটা বাধ্যতামূলক ছিল না। পরে এটা পেশাদার ফুটবলারদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। আমি মনে করি, তিনি (তামুজো) এ ব্যাপারে বেশ সচেতন ছিলেন। আইন প্রবর্তনের (টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করার) আগেই তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছেন।’
লে’কিপ জানিয়েছে, অকালে অবসর নিতে বাধ্য হওয়ায় আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তামুজো। আগামী ২ জুলাই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিচারিক আদালতে শুনানি হবে। এর আগে আদালত একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়োগ দেবেন। এই প্যানেলই আদালতকে জানাবে করোনার টিকা তামুজোর শরীরে অস্বস্তি সৃষ্টি এবং তাঁর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছিল কি না। তামুজোর আশা, আদালতের রায় তাঁর পক্ষে আসবে।