সাগরিকার (মাঝে) গোলের পর মেয়েদের উদ্‌যাপন
সাগরিকার (মাঝে) গোলের পর মেয়েদের উদ্‌যাপন

অনূর্ধ্ব-১৭ নারী সাফ

বাংলাদেশের মান বাঁচালেন সাগরিকা

সেই একই ভেন্যু। প্রতিপক্ষও সেই নেপাল। কিন্তু এবারও নেপালের মেয়েদের হারাতে পারল না বাংলাদেশ। গত ১১ নভেম্বর অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করলেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু পেনাল্টি নেওয়ার আগেই চাপে ভেঙে পড়েন জয়নব বিবি। ওই ম্যাচের পেনাল্টি মিসের দুঃখটা নিশ্চয় ভুলতে পারেননি জয়নব। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ অনূর্ধ্ব-১৭ সাফে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। একমাত্র গোলটি করেছেন মোসাম্মত সাগরিকা।

নেপালের সঙ্গে এই ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলো বাংলাদেশের। আজ সন্ধ্যায় পরের ম্যাচে রাশিয়া মুখোমুখি হবে ভারতের। টানা ৩ জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে রাশিয়া। ভারতের সঙ্গে ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হবে রাশিয়া। সে ক্ষেত্রে রানার্সআপ হবে বাংলাদেশ।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর আজ একাদশে একটিই পরিবর্তন আনেন কোচ গোলাম রব্বানী। দুই হলুদ কার্ডের নিষেধাজ্ঞায় থাকা অধিনায়ক রুমা আক্তারের বদলে দলে ঢোকেন রিতু আক্তার। অবশ্য রক্ষণে রুমার অভাবটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছে বাংলাদেশ।

পুরো টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশ ভুগেছে গোলের সমস্যায়। দুর্বল ভুটান ছাড়া অন্য কোনো দলের বিপক্ষেই গোলমুখ খুঁজে নিতে পারেননি ফরোয়ার্ডরা। ভুটানের বিপক্ষে ৮ গোল দিলেও ভারতের বিপক্ষে জেতে আত্মঘাতী গোলে। আজও বাংলাদেশের মেয়েরা গোলপোস্টে সেভাবে শটই নিতে পারেননি। অ্যাটাকিং থার্ডে ঢুকে ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পাননি।

সাগরিকার গোলে ১ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ

সারা বছর বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পে থেকে অনুশীলন করেন এই ফুটবলাররা। কিন্তু ক্যাম্পে থাকা মেয়েদের কেউ গোল পাননি। গোল করেছেন গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়া নারী লিগ থেকে জাতীয় বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পাওয়া এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফরোয়ার্ড সাগরিকা।

গত লিগে সাগরিকা করেছিলেন ১০ গোল। আজও অন্য মেয়েরা যখন গোলের জন্য হন্যে হয়ে দৌড়েছেন, তখন সাগরিকার সুবাদেই ১ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। শুধু গোলই করেননি তিনি, বেশ কয়েকবার দুর্দান্ত কিছু ক্রস ফেলেছেন বক্সে। কিন্তু সুরভী আকন্দ, সুলতানা আক্তাররা সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি।

প্রথমার্ধের ২০ মিনিট তো নেপালই আধিপত্য দেখিয়ে খেলেছে। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত নেপাল। ফরোয়ার্ড সেনু পারিয়ার লম্বা শট বাংলাদেশের গোলরক্ষক সঙ্গীতা রানী দাসের মাথার ওপর দিয়ে গোলপোস্টে ঢুকে যাচ্ছিল। একেবারে শেষ মুহূর্তে বলটি মুঠোয় নেন তিনি।

এরপর ৮ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠেন সেনু। একাই বক্সে ঢুকে দুজনকে কাটিয়ে গোলরক্ষক সঙ্গীতার মাথার ওপর দিয়ে নেন দুর্দান্ত শট। রক্ষণ সামলানো জয়নব বিবি আটকাতেই পারেননি সেনুকে। ম্যাচের ৫১ মিনিটে সাগরিকার ক্রসে সুরভী পা লাগালেই বল জড়াত জালে। কিন্তু সাগরিকা বলে পা ছোঁয়াতেই পারেননি।

নেপালি খেলোয়াড়ের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে সাগরিকা

গত তিন ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা মিডফিল্ডার নুসরাত জাহানকে আজ পুরো আনফিট মনে হয়েছে। বারবার ভুল পাস দিয়েছেন। নুসরাতের কারণেই বারবার মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য ৫৮ মিনিটে নুসরাতের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন থুইনু মারমা। সুলতানার বদলে নামেন কানম আক্তার।

৬৬ মিনিটে পূজার বদলে তৃষ্ণা রানীকে মাঠে নামিয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী। তৃষ্ণা মাঠে নামতেই ম্যাচে আক্রমণের ধার বেড়েছে। ৭১ মিনিটে নেপালের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকেও তৃষ্ণা অবশ্য বল তুলে দেন নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাংয়ের হাতে। সেই তৃষ্ণাই ৭৬ মিনিটে আবারও ভয়ংকরভাবে বক্সে ঢোকেন তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে। এবার তৃষ্ণার ক্রস থেকেই দারুণ প্লেসিংয়ে সাগরিকা করেন সমতাসূচক গোল। বাকি সময়ে অবশ্য চেষ্টা করেও আর গোল পায়নি কোনো দল।