মোসাদ্দেকের আরেকটি উইকেট। হারারেতে আজ এমন উদ্‌যাপন পাঁচবার করেছেন এ অফ স্পিনার
মোসাদ্দেকের আরেকটি উইকেট। হারারেতে আজ এমন উদ্‌যাপন পাঁচবার করেছেন এ অফ স্পিনার

পরপর দুই দিনে দুই রকম বাংলাদেশ

একই মাঠ, প্রায় একই ধরনের উইকেট। টস–ভাগ্যও একই। কিন্তু বদলে গেল ফলটা, সেটিও প্রায় ১৮০ ডিগ্রি। মোসাদ্দেক হোসেনের ৫ উইকেট, লিটন দাসের অর্ধশতকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭ উইকেটের অনায়াস জয়ে ৩ ম্যাচ সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে সিকান্দার রাজার টানা দ্বিতীয় অর্ধশতকে ১৩৫ রান পর্যন্ত গেলেও বাংলাদেশ সেটি টপকে গেছে ১৫ বল ও ৭ উইকেট বাকি রেখেই। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে তিন বিভাগেই আগের দিনের তুলনায় পুরো অন্য চেহারায় দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ।

আগের দিনের মতোই তিন পেসার, একজন স্বীকৃত স্পিনারের সঙ্গে পঞ্চম বোলার হিসেবে দুজন—এমন কম্বিনেশনে নামে বাংলাদেশ। যদিও নাম বদলেছে দুটি। নাসুম আহমেদ ও তাসকিন আহমেদের বদলে এসেছেন হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান। তবে বাংলাদেশের বোলিংয়ে যেটি সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম, খণ্ডকালীন বোলার হিসেবেই তাঁর পরিচয়—মোসাদ্দেক হোসেন। রেজিস চাকাভার সঙ্গে বাঁহাতি ক্রেগ আরভিনের ওপেনিং জুটির সামনে অফ স্পিনার মোসাদ্দেকের হাতেই নতুন বল তুলে দেন নুরুল হাসান। মোসাদ্দেক উইকেট এনে দেন প্রথম বলেই!

এরপর একে একে জিম্বাবুয়ের আরও চার ব্যাটসম্যান নীল হয়ে গেলেন মোসাদ্দেকের অফ স্পিনে। পতঙ্গ যেমন আগুনের দিকে ছুটে যায়, জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানরাও তেমনি ছুটে গিয়েছেন মোসাদ্দেকের বলের দিকে। রেজিস চাকাভা ও ওয়েসলি মাধেভেরে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন, ক্রেগ আরভিন ফিরলেন রিভার্স সুইপের চেষ্টায়। ততক্ষণে ৩ উইকেট নিয়ে ফেলা মোসাদ্দেকের ওপর চড়াও হতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন শন উইলিয়ামস ও মিল্টন শুম্বাও। ইনিংসের সপ্তম ওভারে ৩১ রান তুলতেই ৫ উইকেট নেই জিম্বাবুয়ের, সব কটি উইকেটই মোসাদ্দেকের!

স্বীকৃত ক্রিকেটেই সেরা বোলিং এটি মোসাদ্দেকের

ইলিয়াস সানি, সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানের পর বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট মোসাদ্দেকের। শুধু এই সংস্করণেই নয়, ২০ রানে ৫ উইকেট স্বীকৃত ক্রিকেটেই মোসাদ্দেকের সেরা বোলিং। টি-টোয়েন্টিতে এর আগে ১৯ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন, কোনো ম্যাচেই ২ উইকেটের বেশি পাননি। ওয়ানডেতে ১৬টি উইকেট আছে তাঁর, সেখানেও এক ম্যাচে ৩ উইকেটের বেশি নেই। টি-টোয়েন্টিতে পুরো ৪ ওভার বোলিংও করলেন মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো।

টি-টোয়েন্টিতে শুরুতেই যেখানে ঝড় তোলার লক্ষ্য নিয়ে নামেন ব্যাটসম্যানরা, একের পর এক উইকেট পড়ায় তা ভাবার অবকাশই পাননি জিম্বাবুইয়ানরা। ৩১ রানেই ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়ে যাওয়ার পর উল্টো নামতে হয় ইনিংস মেরামত করার কাজে। রায়ান বার্লকে নিয়ে সেটিই করার চেষ্টা করেছেন সিকান্দার রাজা। আগের দিন ২৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা রাজা এদিন খেললেন ৫৩ বলে ৬২ রানের ইনিংস, বার্লকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে তুললেন ৮০ রান।

প্রথম ম্যাচে মাঝের ওভারগুলোতে বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য বিস্তার করার কাজটা করেছিল জিম্বাবুয়ে, এদিন আর সেটির পুনরাবৃত্তি করার মতো অবস্থা ছিল না। বাংলাদেশি বোলাররাও করেছেন আঁটসাঁট বোলিংই। শেষ দিকে গতির বৈচিত্র্য দেখাতে গিয়ে একটু বেশি রানই অবশ্য খরচ করে ফেলেন শরীফুল ইসলাম। এই বাঁহাতি পেসারের ৪ ওভারে উঠেছে ৩৭ রান। ২০২০ সালের পর আবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা হাসান মাহমুদ বেশ সাহসী বোলিংই করেছেন, বাউন্ডারির পরও লাইন–লেংথ হারাননি। বার্লকে বোল্ড করে রাজার সঙ্গে জুটিটাও ভাঙেন হাসানই। দলে আসা মেহেদী ৩ ওভারে দেন মাত্র ১০ রান, যদিও মাঝে আফিফ হোসেনকে আনার কারণে পুরো ৪ ওভার করতে হয়নি তাঁর। উইকেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বোলিং করেছেন ৩০ রানে ১ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজও।

অর্ধশতক পেয়েছেন লিটন দাস

লক্ষ্য ছোট, ফলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সামনে সুযোগ ছিল নির্ভার হয়ে খেলার। মুনিম শাহরিয়ার তা কাজে লাগাতে পারেননি। পঞ্চম ওভারে রিচার্ড এনগারাভার বলে উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৮ বলে ৭ রান করেই। তবে অন্য প্রান্তে লিটন দাস দেখা দিয়েছেন পরিচিত রূপে। মাঝে ক্রমাগত শর্ট বলে তাঁকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করেন তানাকা চিভাঙ্গা। তবে ফল হয় উল্টো—৩ বলে লিটন তোলেন ১৬ রান। লিটন অর্ধশতক পান ৩০ বলে। মুনিমের সঙ্গে ৩৭ রানের পর এনামুলের সঙ্গে গড়েন ৪১ রানের জুটি। ৯ ওভারে ৭৮ রান উঠে যাওয়ার পর আউট হয়েছেন লিটন, যাঁর ৩৩ বলে ৫৬ রানের ইনিংসে ছিল ৬টি চারের সঙ্গে ২টি ছয়।

লিটন ফেরার ৩ বল পরই সিকান্দার রাজাকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন এনামুল। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে টি-টোয়েন্টির সঙ্গে বেমানান এক ইনিংস তাঁর। আজ অবশ্য শুরুটা ইতিবাচকই ছিল, একসময় লিটনকে সঙ্গও ভালোই দিচ্ছিলেন। তবে ১৫ বলে ১৬ রান করে আক্রমণের জন্য ভুল সময় বেছে নেওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে তাঁকে।

৪ বলের মধ্যে লিটন ও এনামুলকে হারিয়ে হঠাৎই ১ উইকেটে ৭৮ থেকে ৩ উইকেটে ৮৩ হয়ে যায় বাংলাদেশের স্কোর। আফিফ হোসেন ও নাজমুল হোসেন এরপর ঝুঁকি নেননি। সতর্ক থেকেই দলকে জয়ের দিকে নিয়ে গেছেন তাঁরা। ১টি করে চার ও ছক্কায় ২৮ বলে ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন আফিফ, নাজমুল অপরাজিত থেকেছেন ২১ বলে ১৯ রানে। আগের দিন এমন ইনিংস টি-টোয়েন্টির চেতনাবিরোধী বলে বিবেচিত হতো। আজ যা স্বীকৃতি পাচ্ছে সময়োপযোগী বলে।

এক দিনে কত কিছুই না বদলে যায়!