আহমেদাবাদে ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ভেন্যু। তবু ১৪ অক্টোবরের ম্যাচে দর্শক সংকুলান হচ্ছে না। অথচ ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে হওয়া বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্টেডিয়ামের প্রায় ৮৫ হাজার আসন খালি পড়ে ছিল।
সেই আহমেদাবাদেই হঠাৎ ১৪ অক্টোবরের ম্যাচের টিকিটের জন্য হাহাকারের কারণ নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন! ওই দিন মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মর্যাদার লড়াই নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ দেখে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ১৪ হাজার বাড়তি টিকিট ছেড়েছে।
সেটিরই ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছেন কয়েকজন তরুণ। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ৫০টি জাল টিকিট বানিয়ে ৩ লাখ রুপিতে বিক্রি করেছেন তাঁরা। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আহমেদাবাদ পুলিশের অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার চৈতন্য মান্দলিক আজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অপরাধ বিভাগের সদস্যরা চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। তাদের নাম জেমিন প্রজাপতি, ধ্রুমিল ঠাকুর, রাজবীর ঠাকুর ও কুশ মিনা। জেমিন, ধ্রুমিল ও রাজবীরের বয়স ১৮ বছর, কুশের বয়স ২১। তাদের বাড়ি আহমেদাবাদ ও গান্ধীনগরে।’
ওই চার তরুণ কীভাবে জাল টিকিট বানিয়েছেন, সেটাও জানিয়েছেন উপকমিশনার চৈতন্য মান্দলিক, ‘প্রাথমিক তদন্ত শেষে আমরা জানতে পেরেছি, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রথমে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের একটি আসল টিকিট কিনেছিল। এরপর অভিযুক্ত একজনের দোকানে সেই আসল টিকিটটি স্ক্যান করে। সেই স্ক্যান কপি ফটোশপে নিয়ে ২০০টি কপি তৈরি করেই সেগুলো বিক্রি করেছিল তারা। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৫০টি ভুয়া টিকিট প্রতিটি ২ হাজার থেকে ২০ হাজার রুপিতে বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ রুপি হাতিয়ে নেয়। আমরা ওই ৫০টিসহ ২০০টি ভুয়া টিকিট উদ্ধার করেছি।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, পুলিশ চার আসামির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ এবং জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেছে।
ভারত-পাকিস্তান সরকারের শীতল সম্পর্ক ও রাজনৈতিক বৈরিতার প্রভাব সরাসরি ক্রিকেটের ওপর পড়েছে। যে কারণে দুই দল দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে না প্রায় ১১ বছর হলো। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের লড়াই দেখতে ক্রিকেটপ্রেমীদের তাই বৈশ্বিক ও মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের দিকে চেয়ে থাকতে হয়।
আইসিসি নিজেও একাধিকবার স্বীকার করেছে, বিশ্বজুড়ে দর্শকদের তুমুল আগ্রহের কারণেই ভারত-পাকিস্তানকে তারা ইচ্ছা করে একই গ্রুপে রাখে। সবচেয়ে বেশি অর্থকরী ম্যাচের ব্যাপার তো আছেই।
ভারত-পাকিস্তানের অন্য ম্যাচের মতো ১৪ অক্টোবরের ম্যাচের টিকিটও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ‘হাই ভোল্টেজ’ ম্যাচটির একটি টিকিটের দাম কালোবাজারে ৫৭ লাখ রুপি পর্যন্ত উঠেছে।
১০ গুণ বেশি ভাড়ার পরও আহমেদাবাদ নগরীর হোটেলগুলোর বুকিং শেষ সেই জুলাই মাসে। হোটেলে কক্ষ না পেয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা আহমেদাবাদের হাসপাতালে পর্যন্ত বুকিং দিয়েছেন। কোহলি-বাবরদের খেলা মাঠে বসে দেখতে সাধারণ মানুষের যে আবেগ, সেটারই সুযোগ নিয়ে টিকিট জালিয়াতির ফন্দি এঁটেছিলেন আটক ওই চার তরুণ।