রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে জেতাতে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে জেতাতে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি

কোহলি একা কী করবেন

শিরোনামটা দেখে কি কিছু মনে পড়ছে? ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত ফুটবল–বিশ্বে এমন একটা কথা খুব শোনা যেত—মেসি একা কী করবেন?

আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে নিয়ে এমন আলোচনার কারণ ছিল একটাই—ক্লাব ফুটবলে যাবতীয় দলীয় আর ব্যক্তিগত অর্জনে ভেসে চলা মেসি কাতার বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছিলেন শুধু একটা কোপা আমেরিকা ও লা ফিনালিসিমা। ২০১৪ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। সেবার টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জেতেন তিনি। কিন্তু ব্রাজিলের বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামের সেই ফাইনালে মারিও গোটশের ১১৩ মিনিটের গোলে হেরে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভাঙে মেসির। সেই ফাইনালে গঞ্জালো হিগুয়েইনসহ আর্জেন্টিনার একাধিক খেলোয়াড় গোলের সহজ কয়েকটি সুযোগ মিস করার পর মেসিকে নিয়ে ফুটবল–বিশ্বে তৈরি হয় ওই সংলাপ!

আপনারা আমাকে বলুন, কোহলি একা আর কত করবে—তাকে তো কারও সঙ্গ দিতে হবে।
সুনীল গাভাস্কার

বিরাট কোহলি কি তাহলে ক্রিকেটের মেসি! দলীয় আর ব্যক্তিগত অর্জনের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি বিবেচনা করলে এখন তো আর মেসির সঙ্গে কোহলির ক্যারিয়ার মিলবেই না। কিন্তু ২০২২ বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত মেসির ক্যারিয়ার যদি ধরা হয়, তাহলেও কি কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে ফুটবলের মেসি আর ক্রিকেটের কোহলির ক্যারিয়ারের? হয়তো না, হয়তো হ্যাঁ! কোহলি ক্যারিয়ারের শুরুর লগ্নেই তো জিতেছেন বিশ্বকাপ আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। কেউ কেউ অবশ্য বলতে পারেন, ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তো আর কোহলির নয়, দুটিই ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির। কারণ, সেই সময় তো আর ভারতকে কোনোভাবেই কোহলির দল বলা হতো না।

আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি

কোহলি ক্রিকেটের মহাতারকা হওয়ার পর ব্যক্তিগত অর্জনের ডালাটা তাঁর কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে। একাধিকবার আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন, আইসিসির বর্ষেসরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের পুরস্কারও জিতেছেন, এমনকি ২০১১ থেকে ২০২০—এই এক দশকের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি হিসেবে স্যার গারফিল্ড সোবার্স পুরস্কারও গেছে তাঁর দখলে। কিন্তু ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর বৈশ্বিক কোনো শিরোপা ভারতের হয়ে জেতা হয়নি কোহলির।

মেসির ক্যারিয়ারের দিকে আরেকবার তাকানো যাক। মেসি ২০২২ বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলের হয়ে একটি কোপা আমেরিকা ও লা ফিনালিসিমা জেতার পাশাপাশি ক্লাব ফুটবলে জিতে ফেলেছিলেন প্রায় সব পুরস্কারই। ২০২২ সালের আগেই ক্লাব ফুটবলে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ জিতে ফেলেছেন ৩০টির ওপর শিরোপা। ফুটবলের ব্যক্তিগত অর্জনের চূড়া বলে গণ্য ব্যালন ডি’অরও তখন পর্যন্ত জিতেছেন সাতবার।

আর কোহলি? জাতীয় দলের হয়ে শুরুর দিকের ওই ট্রফি বাদে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত কিছুই জেতা হয়নি তাঁর। অথচ বিশ্বের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। টুর্নামেন্টটিতে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিও তাঁর। ২০১৬–এর আইপিএলে তো ১৬ ম্যাচে রেকর্ড ৯৭৩ রানও করেছিলেন।

ব্যাট হাতে এবারের আইপিএলে দারুণ ছন্দে আছেন কোহলি

এবারের আইপিএলের কথাই ধরুন, এখন পর্যন্ত ৩ ম্যাচ খেলেছে তাঁর দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এই ৩ ম্যাচে কোহলি ৯০.৫০ গড়ে করেছেন ১৮১ রান, যা এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ। অথচ তাঁর দল জিতেছে মাত্র একটি ম্যাচ! বেঙ্গালুরুর বাকি ব্যাটসম্যান আর বোলাররা যে কোহলির মতো ছন্দে নেই, সে তো বোঝাই যাচ্ছে। গতকাল কলকাতার বিপক্ষে ম্যাচটির কথাই ধরুন, কোহলির ৫৯ বলে অপরাজিত ৮৩ রান ছাড়া দলের ইনিংসে বলার মতো ব্যাটিং আর কেই–বা করেছেন! দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ বলে ৩৩ রান ক্যামেরন গ্রিনের, তৃতীয় সর্বোচ্চ গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ১৯ বলে ২৮ আর এরপর দিনেশ কার্তিকের ৮ বলে ২০ রান।

এবারও যদি কোহলি এভাবে টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত ভালো খেলে যান এবং তাঁর দল শিরোপা না জেতে, গল্পটা সেই মেসির মতোই হয়ে যাবে না! মেসি যেমন আর্জেন্টিনার জার্সিতে দুর্দান্ত টুর্নামেন্ট কাটিয়েও ফিরতেন শিরোপা না জেতার যন্ত্রণা নিয়ে আর সেটা শুধু সতীর্থদের ব্যর্থতার কারণে। কোহলির বেলায়ও বলতে গেলে সেটাই হচ্ছে। ভারতের মাটিতে হয়ে যাওয়া গত বছরের বিশ্বকাপটাও তো একই গল্প বলে

টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও হয়েছেন তিনিই। ফাইনালেও ৬৩ বলে করেছেন ৫৪ রান। কিন্তু সতীর্থের ব্যর্থতায় কোহলিকে ফিরতে হয়েছে শিরোপা না জেতার আক্ষেপ নিয়ে। মেসির বেলায়ও তো ২০১৪ বিশ্বকাপে ঘটেছিল একই ঘটনা

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার

এরপরও মেসির ২০২২ বিশ্বকাপ–পূর্ব ক্যারিয়ারের সঙ্গে কোহলির ক্যারিয়ারের মিল খুঁজে পাচ্ছেন না! একজন অবশ্য পাচ্ছেন, তিনি কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার। তাই তো মেসিকে নিয়ে তৈরি হওয়া সংলাপটা তিনি দিলেন কোহলির বেলায়ও—কোহলি একা কী করবে! স্টার স্পোর্টসে গাভাস্কার অবশ্য কথাগুলো বলেছেন এভাবে, ‘আপনারা আমাকে বলুন, কোহলি একা আর কত করবে—তাকে তো কারও সঙ্গ দিতে হবে। আজ (গতকাল) কেউ যদি তাকে সঙ্গ দিতে পারত, সে ৮৩ রানের বদলে ১২০ করত। এটা দলীয় খেলা, একজনের নয়। সে আজ (গতকাল), কোনো সমর্থন পায়নি।’

তা গাভাস্কার যেভাবেই কথাগুলো বলুন, সেই তো একই সংলাপ—কোহলি একা কী করবেন!