মুশফিকুর রহিমের টেস্ট অভিষেকটা আর মাস পাঁচেক আগে হলেই হতো!
তাহলে কী হতো?
বাংলাদেশের জেতা ২১ টেস্টেই থাকতে পারতেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। কিন্তু ২০০৫ সালের মে মাসে ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে তাঁর অভিষেকের পাঁচ মাস আগেই চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
এই ঘটনায় তো আর মুশফিকের কিছু করার ছিল না, এ নিয়ে তাঁর কোনো আফসোস আছে বলেও কখনো শোনা যায়নি। তাতে শুধু একুশে ২১-ই হয়নি মুশফিকের। তবে বাংলাদেশের জেতা পরের ২০টি টেস্টেই দলে থেকে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার দারুণ এক কীর্তি গড়ে ফেলেছেন। দেশের প্রথম ২১টি টেস্ট জয়ের ২০টিতে দলের থাকার সৌভাগ্য যে আর কারও নেই টেস্ট ইতিহাসে।
রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করার দ্বিতীয় টেস্টটাই এই রেকর্ডে সবার ওপরে উঠিয়েছে মুশফিককে। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা মুশফিক পেছনে ফেলেছেন মুত্তিয়া মুরালিধরনকে। শ্রীলঙ্কান স্পিন গ্রেট শ্রীলঙ্কার জেতা প্রথম ২১ টেস্টের ১৯টিতেই দলে ছিলেন। তাঁর অভিষেকের আগেই ২টি টেস্ট জিতে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা।
দলের প্রথম ২১ টেস্ট জয়ের মধ্যে কমপক্ষে ১৫টিতে দলে ছিলেন এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা মুশফিক-মুরালিসহ মাত্র আটজন। এই আটের সাতজনই আবার বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার। অন্য একজন ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিখ্যাত ‘থ্রি ডব্লু’র একজন এভারটন উইকস দলের প্রথম ২১ জয়ের ১৬টিতেই খেলেছেন। ১৯৪৮ সালে উইকসের টেস্ট অভিষেকের আগেই চারটি ম্যাচ জিতে গিয়েছিল ক্যারিবীয়রা।
শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি অরবিন্দ ডি সিলভা প্রথম ২১ জয়ের ১৮টিতেই দলে ছিলেন, অর্জুনা রানাতুঙ্গা ছিলেন ১৭ ম্যাচে। সাবেক এই দুই লঙ্কান অধিনায়ক শ্রীলঙ্কার প্রথম ১৫টি টেস্ট জয়েই ছিলেন একাদশে। প্রথম ২১ জয়ের ১৫টিতে দলে থাকা দলটির আরেক ক্রিকেটার সনাৎ জয়াসুরিয়া।
মুশফিকের পরেই বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬টি টেস্ট জিতেছেন মুমিনুল হক। ১৫টি টেস্ট জিতে তিনে সাকিব আল হাসান। মুশফিক-সাকিব-তামিম, এই ত্রয়ী বাংলাদেশের দ্বিতীয় থেকে ১০ম জয়ের সব কটিতে দলে ছিলেন। একসঙ্গে টানা ৯টি টেস্ট জয়ের পর ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দলে না থাকায় সংখ্যাটাকে টানা ১০ করতে পারেননি সাকিব ও তামিম।
অন্য দলগুলোর খেলোয়াড়েরা যে এই তালিকার ওপরের দিকে নেই, সেটির বেশ কয়েকটি কারণ আছে। আজকালের মতো টেস্ট ক্রিকেটের শুরুর দিকে এত বেশি টেস্ট খেলত না দলগুলো। তাতে প্রথম ২১ ম্যাচ জিততে মোটামুটি লম্বা সময়ই লেগেছে বেশির ভাগ দলের। অনেক দল তো টেস্ট অভিষেকের কয়েক যুগ পরেই ছুঁতে পেরেছে সংখ্যাটি।
১৮৯২ সালে সবার আগে ২১তম জয় পায় ইংল্যান্ড। ২১ টেস্ট জয়ে সময়ের হিসাবে দ্রুততম ইংল্যান্ডই। দুই বছর আগেই সর্বশেষ টেস্ট খেলা অলরাউন্ডার জর্জ উলিয়েট এই ২১ জয়ের ১৪টি দলে ছিলেন। উলিয়েটের মতোই ১৮৭৭ সালে ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলা জ্যাক ব্ল্যাকহামের দখলে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ডটা। অস্ট্রেলিয়া ২১তম জয় পায় ১৯০২ সালে। সর্বোচ্চ ১১টি জয়ে দলে থাকা ব্যাটসম্যান ব্ল্যাকহাম অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ১২ জয়ের ১১টিতেই ছিলেন দলে।
১৮৮৯ সালে প্রথম টেস্ট খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা ২১তম জয় পায় ১৯৫৩ সালে। ১৯২৮ সালে টেস্ট অভিষিক্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৫৮ সালে জেতে ২১তম ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই বছর পর প্রথম টেস্ট খেলা নিউজিল্যান্ড ২১ নম্বর জয় পায় ১৯৮৫ সালে। ১৯৩২ সালে টেস্টের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ভারত ১৯৭৫ সালে পায় ২১তম জয়। ১৯৫২ সালে প্রথম টেস্ট খেলা পাকিস্তান ২১তম টেস্ট জেতে ১৯৮১ সালে।
টেস্ট অভিষেকের ১৯ বছর পর ২০০১ সালে ২১তম জয় পায় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের লাগল ২৪ বছর।