এবারের অ্যাশেজ জিততে হলে প্রায় ৮৬ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভাঙতে হবে বেন স্টোকসের ইংল্যান্ডকে। ১৯৩৬-৩৭ সালের স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়ারই শুধু সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে অ্যাশেজ জয়ের রেকর্ড আছে। কুমার সাঙ্গাকারা বলছেন, ব্র্যাডম্যানের সে রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতে পারে স্টোকসের ইংল্যান্ড। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টটি জিততে পারলে ইংল্যান্ডই ৩-২ ব্যবধানে অ্যাশেজ জিতবে, এমন মনে করেন সাঙ্গাকারা।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রথম ইনিংসে ৩১৭ রানেই গুটিয়ে যাওয়ার পর গতকাল জ্যাক ক্রলিদের বাজবলের তোপে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তৃতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ২৭৫ রানের লিড নিয়েছে ইংল্যান্ড। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এ টেস্টে ম্যানচেস্টারের আবহাওয়াও স্টোকসদের প্রতিপক্ষ। আজও বৃষ্টির কারণে বন্ধ ছিল খেলা, আগামীকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী পুরো দিনই ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
শেষ পর্যন্ত যদি আবহাওয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে জয় করতে পারে ইংল্যান্ড, তাহলে সিরিজ তাদেরই হবে বলে মনে করেন সাবেক শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা। গতকাল স্কাই স্পোর্টস ক্রিকেটের অ্যাশেজ পডকাস্টে মাইকেল আথারটন ও মার্ক বুচারের সঙ্গে আলোচনার সময় শ্রীলঙ্কা কিংবদন্তি বলেন, যদি এ টেস্ট ইংল্যান্ড জেতে, তাহলে তারাই ৩-২ ব্যবধানে অ্যাশেজ জিতবে।
কেন এমন মনে করছেন, সে ব্যাখ্যায় সাঙ্গাকারা বলেছেন, ‘যদি এ টেস্টটি ইংল্যান্ডের পক্ষে যায়, তাহলে পরের টেস্টের আগে মাত্র তিন দিন সময়ে এ ম্যাচের স্মৃতি তরতাজা থাকবে। ইংল্যান্ড এটি বুঝতে পেরেছে কখন তারা এগিয়ে। তারা সেভাবেই খেলেছে, গতি বাড়িয়েছে, ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছে।’
গতকাল শুরুতেই বেন ডাকেটের উইকেট হারালেও মঈন আলীর সঙ্গে ক্রলির দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই নিয়ন্ত্রণ হারানো শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত দিন শেষে মাত্র ৭২ ওভারেই ৪ উইকেটে ৩৮৪ রান তুলে ফেলেছিল ইংল্যান্ড।
বোলিংয়ে আমি অনেক দিন অস্ট্রেলিয়াকে এমন ধন্দে পড়ে যেতে দেখিনি।সাবেক শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা
বিশেষজ্ঞ স্পিনার ছাড়াই খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়াকে মাঠে এমন হতশ্রী রূপে দেখে অবাকই হয়েছেন সাঙ্গাকারা, ‘অস্ট্রেলিয়ার বড় স্কোরের সুযোগ ছিল, কেউই সেটি নিতে পারেনি। আর বোলিংয়ে আমি অনেক দিন অস্ট্রেলিয়াকে এমন ধন্দে পড়ে যেতে দেখিনি। তারা বেশ দ্বিধায় ভুগছিল। জানে না কী করতে হবে, কোন ফিল্ডিংটা সেট করতে হবে। এরপর বোলিংও করেছে পরিকল্পনা থেকে সরে গিয়ে, ফিল্ড সেটিংয়ের চেয়ে পুরোই আলাদা। এটি সত্যিই ভুগিয়েছে তাদের।’
আগে ফিল্ডিং করেছে বলে ইংল্যান্ডের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করার। আবহাওয়া সে সুযোগ করে দিলেও কাজটি তাদের জন্য কঠিন। গতকালও যেমন জশ হ্যাজউডের বলে বোল্ড হয়েছেন জো রুট, যে বলটি ওঠেইনি প্রায়। তবে দীর্ঘদিন ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে এ মাঠে খেলা আথারটন বলেছেন, এখনো এ উইকেট বেশ ব্যাটিং সহায়ক। এবং সেটিই থাকবে, ‘আমার অভিজ্ঞতা বলে, এখানে কখনোই পিচ মাইনফিল্ড হয়ে ওঠে না ব্যাটিংয়ের জন্য। ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ জিততে আপনাকে খাটতে হবে অনেক। ফলে এটি প্রত্যাশা করবেন না যে হুট করেই এ পিচে বল ওঠানামা করে আপনাকে আউট করতে সহায়তা করবে।’
অবশ্য চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে স্পিনারের অনুপস্থিতি। নাথান লায়নের চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়াকে নিতে হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত। লায়নের চোটকে আথারটন তুলনা করেছেন গ্লেন ম্যাকগ্রার ২০০৫ সালের এজবাস্টন টেস্টের আগে অদ্ভুত চোটের সঙ্গে। ওয়ার্মআপের সময় ক্রিকেট বলের ওপর পা দিয়ে চোটে পড়ে সে ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন ম্যাকগ্রা। ইংল্যান্ড পেয়েছিল ২ রানের স্মরণীয় জয়। এরপর ইতিহাসের অন্যতম সে সিরিজটিও জেতে তারা।
এবারের অ্যাশেজ এখন পর্যন্ত এমনিতেই একের পর এক রোমাঞ্চ উপহার দিয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ড জিতলে সেটি যে তাদের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা সাফল্য হয়ে থাকবে, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সিরিজের পঞ্চম ম্যাচটি ওভালে শুরু হবে ২৭ জুলাই।