সিরিজজুড়ে কী এক রান উৎসবই না দেখা গেল!
প্রথম দুটি টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া পেরিয়েছিল ২০০ রানের গণ্ডি। হোবার্ট ও অ্যাডিলেডে ম্যাচ দুটি জিতে সিরিজও নিজেদের করে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পার্থে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য আজকের ম্যাচটি তাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল ধবলধোলাই এড়ানোর চ্যালেঞ্জ। ক্যারিবীয়রা সেই চ্যালেঞ্জ উতরাতে পারল আন্দ্রে রাসেল আর শেরফেন রাদারফোর্ডের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে।
অপ্টাস স্টেডিয়ামে আজ টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ৬৭ বলে ১৩৯ রানের জুটি গড়েন রাসেল-রাদারফোর্ড, যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই উইকেট জুটিতে বিশ্ব রেকর্ড। দুজন ভেঙেছেন ২০২২ সালে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে পাপুয়া নিউ গিনির টনি উরা ও নরমান ভানুয়ার ১১৫ রানের রেকর্ড।
রাসেল-রাদারফোর্ডের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২২০ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ।
লক্ষ্য তাড়া করে নেমে ডেভিড ওয়ার্নার এবং টিম ডেভিড ছাড়া আর কেউ এই ম্যাচের দাবি মেটাতে পারেননি। রোস্টন চেস-রোমারিও শেফার্ডদের দারুণ বোলিংয়ে স্বাগতিকেরা থামে ৫ উইকেটে ১৮৩ রানে। ৩৭ রানের বড় জয়ে ধবলধোলাই এড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া সফর শেষ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এবারের অস্ট্রেলিয়া সফর শুরু হয়েছিল টেস্ট সিরিজ দিয়ে। তরুণ শামার জোসেফের বীরত্বে পিছিয়ে পড়েও সিরিজটি ড্র করেছিল ক্যারিবীয়রা। স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বে ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অবশ্য ধবলধোলাই করে অস্ট্রেলিয়া। আর মিচেল মার্শের নেতৃত্বে টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতল ২–১ ব্যবধানে।
আগের দুই টি–টোয়েন্টিতে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল। তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে পারেননি সতীর্থ বোলাররা। বল হাতে দুই ম্যাচেই বেধড়ক মার খান আন্দ্রে রাসেল, জেসন হোল্ডাররা। ডেভিড ওয়ার্নারের অর্ধশতকে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ২১৩ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের শতকের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে ২৪১ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া।
পার্থে আজ তৃতীয় টি–টোয়েন্টিতেও টস জেতেন পাওয়েল। এবার নিজেরাই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তবে অভিষিক্ত জাভিয়ের বার্টলেটের দারুণ বোলিংয়ে একপর্যায়ে ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ধবলধোলাইয়ের শঙ্কা তখন ক্যারিবীয়দের ওপর ভালোভাবেই জেঁকে বসেছিল। কিন্তু রাসেল–রাদারফোর্ড ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বিশ্ব রেকর্ড করে গল্পটা বদলে দেন।
৪টি চার ও ৭টি ছক্কায় ২৯ বলে ৭১ রান করে আউট হন রাসেল, রাদারফোর্ড ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৪০ বলে অপরাজিত ছিলেন ৬৭ রানে। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এটাই তাঁদের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস।
রাসেল–রাদারফোর্ড সবচেয়ে বড় ঝড়টা বইয়ে দিয়েছেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার ওপর দিয়ে। ৪ ওভারে ৬৫ রান দিয়েছেন জাম্পা, যা আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে কোনো অস্ট্রেলিয়ান বোলারের সবচেয়ে খরুচে বোলিং। আগের বিব্রতকর রেকর্ডটা ছিল অ্যান্ড্রু টাইয়ের (৪ ওভারে ৬৪)।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে উড়ন্ত শুরু এনে দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। উদ্বোধনী জুটিতে মার্শকে নিয়ে পাওয়ার প্লেতে তুলেছিলেন ৬১ রান। কিন্তু সপ্তম ওভারে মার্শের আউটে এ জুটি ভাঙার পর ৫০ পেরোনো আর কোনো জুটি হয়নি। ওয়ার্নার এক প্রান্তে তাঁর স্বভাবসুলভ ব্যাটিং চালিয়ে গেলেও হার্ডি, ম্যাক্সওয়েল, ইংলিসরা এদিন ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারেননি।
জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রানরেট তাই ক্রমেই বেড়ে চলছিল। সেই চাপ সরাতেই রোস্টন চেসের বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ধরা পড়েন ম্যাচের নায়ক রাসেলের হাতে। ইনিংসটি খেলার পথে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন ওয়ার্নার। এরপর টিম ডেভিডের ১৯ বলে ৪১ রানের ইনিংসটা শুধু অস্ট্রেলিয়ার হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।
টেস্ট–ওয়ানডেকে আগেই বিদায় বলেছেন ওয়ার্নার। আগামী জুনে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে এই সংস্করণকেও বিদায় বলবেন। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে এটাই ছিল অস্ট্রেলিয়ার শেষ ম্যাচ। সে হিসেবে ওয়ার্নারও দেশের মাটিতে তাঁর শেষ ম্যাচটি খেলে ফেললেন। তিন ম্যাচে দুই অর্ধশতকে সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা ওয়ার্নারের হাতেই উঠেছে। তবে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ওপেনার পুরস্কারটা উপহার দিয়েছেন এক খুদে ভক্তকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২০ ওভারে ২২০/৬
(রাসেল ৭১, রাদারফোর্ড ৬৭*, চেস ৩৭, পাওয়েল ২১, মায়ার্স ১১, চার্লস ৪, শেফার্ড ২*, পুরান ১; বার্টলেট ৪–০–৩৭–২, বেহরেনডর্ফ ৪–০–৩১–১, হার্ডি ৪–০–৩৬–১, জনসন ৪–০–৪৯–১, জাম্পা ৪–০–৬৫–১)।
অস্ট্রেলিয়া : ২০ ওভারে ১৮৩/৫
(ওয়ার্নার ৮১, ডেভিড ৪১*, মার্শ ১৭, হার্ডি ১৬, ম্যাক্সওয়েল ১২, ওয়েড ৭*, ইংলিস ১; চেস ৪–০–১৯–২, শেফার্ড ৪–০–৩১–২, আকিল ৩–০–৩৩–১, রাসেল ১–০–১১–০, জোসেফ ৪–০–৩৮–০, হোল্ডার ৪–০–৪৯–০)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৭ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : আন্দ্রে রাসেল।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : ডেভিড ওয়ার্নার।
সিরিজ : অস্ট্রেলিয়া ২–১ ব্যবধানে জয়ী।