বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সিরিজ

অচেনা যুক্তরাষ্ট্রে চেনা প্রতিপক্ষ

অভিবাসীদের দল যুক্তরাষ্ট্রে খেলবেন নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসন, দলটির কোচও বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিচিত মুখ—স্টুয়ার্ট ল।

টেক্সাসের হিউস্টনে বাংলাদেশ দলকে স্বাগত জানিয়েছিল ভোরের অন্ধকার আর ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত এক শহর। ক্ষয়ক্ষতি এতটাই যে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজের ভেন্যু প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সের অস্থায়ী স্থাপনা ভেঙেচুরে একাকার অবস্থা। দুই দলের তিন ম্যাচের সিরিজটি মাঠে গড়াবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সেই শঙ্কা অবশ্য কেটে গেছে। আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় আজ রাত ৯টায় সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ঠিক সময়ই শুরু হচ্ছে। এটা নিশ্চিত করে গত পরশু সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশ দলও ম্যাচের ভেন্যুতে অনুশীলন করেছে।

বাংলাদেশের টেস্ট–পূর্ব যুগে আইসিসি ট্রফিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিকবার দেখা হয়েছে। তবে দুই দলের অফিশিয়াল আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবারই প্রথম। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র খেলেছেই শুধু আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ডকে একবার হারিয়েছেও মোনাঙ্ক প্যাটেলের দল। যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়কের নামটা আরেকটা তথ্যও বুঝে নিতে সাহায্য করবে।

অনুশীলনে বাংলাদেশ দল

দলটি সেজেছে মূলত অভিবাসীদের নিয়ে। ভারতীয়, পাকিস্তানি, ক্যারিবীয়, এমনকি কিউই ক্রিকেটারও আছেন এ দলে। তবে অচেনা যুক্তরাষ্ট্র দলেও খুঁজে পাবেন কিছু চেনা নাম। দলটির সবচেয়ে বড় তারকা কোরি অ্যান্ডারসন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে দুটি টি-টোয়েন্টি ও একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা এই অলরাউন্ডার নিজের দেশের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।

২০১৭ সালে টি–টোয়েন্টিতেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪১ বলে ৯৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন অ্যান্ডারসন। সে ম্যাচের একাদশে থাকা তাসকিন-সাকিবদের সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে থাকার কথা। ওয়ানডেতে অ্যান্ডারসনের ৩৬ বলে শতক ছিল সেই সময়ের বিশ্ব রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রের সহ-অধিনায়ক অ্যারন জোন্সেরও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ভালোই চেনা। ২০২২ সালের বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলে গেছেন। জোন্সের জন্ম নিউইয়র্কে হলেও বাবা-মা বার্বাডিয়ান হওয়ায় সেখানেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট খেলেছেন। পরে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। পেসার আলী খান সিপিএল–পিএসএলের নিয়মিত মুখ, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট যাঁরা নিয়মিত দেখে থাকেন, তাঁদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের এই পেসারের নামটা অপরিচিত নয়।

বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের দায়িত্বে যখন ছিলেন স্টুয়ার্ট ল

তবে যুক্তরাষ্ট্র দলের সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে দলটির কোচ স্টুয়ার্ট ল। কদিন আগেও যিনি ছিলেন বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের দায়িত্বে। তাঁর অধীনে যুবারা জিতেছে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ। তবে বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ান। ২০১৬ সালেও বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে কাজ করেছেন ল। এর আগে ২০১২ সালে ছিলেন জাতীয় দলের কোচ। অভিজ্ঞ কিংবা তরুণ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রায় সব ক্রিকেটারকেই এই অস্ট্রেলীয় কোচের চেনা।

আগামী কয়েক দিনে বাংলাদেশ দলও যুক্তরাষ্ট্রের সব ক্রিকেটারকে চিনে ফেলবে। বিশ্বকাপ প্রস্তুতির ব্যানারে হতে যাওয়া এই দ্বিপক্ষীয় সিরিজের ৩টি ম্যাচের পর আইসিসির বলয়ে ঢুকে যাবে দুই দল, এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেই আরও একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই দলের ৪টি ম্যাচ। বিশ্বকাপের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। বাংলাদেশ শুধু ভারতের বিপক্ষেই প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলতে চেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টানা ৪টি ম্যাচ খেলতে চায়নি। আইসিসি এই আপত্তি কানে না তোলায় টানা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খেলতে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের আগে মোট ৫টি টি-টোয়েন্টি পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দেশ ছাড়ার আগেই জানিয়েছেন, এ ম্যাচগুলোতে দল নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া হবে। চোটের কারণে তাসকিন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের ম্যাচগুলো খেলছেন না, এটা নিশ্চিত। হাসান মাহমুদকে সুযোগ দেওয়া হতে পারে তাঁর জায়গায়। অন্য পেসারদেরও ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ব্যবহার করা হবে। তবে বোলিংয়ের চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং নিয়ে। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পাঁচটি ম্যাচ খেলেও বড় রানের দেখা পাননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন।

ছন্দে নেই নাজমুল–লিটন

লিটন দাস তো তিন ম্যাচ খেলার পর একাদশ থেকেই বাদ পড়েছেন। এই সিরিজ তাঁর জন্য বিশ্বকাপের আগে ফর্মে ফেরার সর্বশেষ সুযোগ। চোট থেকে ফেরা সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসানও সেরা ছন্দে নেই। তাঁদের প্রত্যেকেই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তাও তাই টপ অর্ডার নিয়েই। মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলীরা ফর্মে থাকার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিজে এই টপ অর্ডার দুশ্চিন্তা দূর হবে তো?

হলে বিশ্বকাপটা একটু স্বস্তিতে শুরু করতে পারবে বাংলাদেশ।