এই টেস্ট তো বটেই, পুরো অ্যাশেজ থেকে ছিটকে যেতে পারেন নাথান লায়ন। পায়ের পেশির চোট পাওয়ার পর আলোচনাটা এমনই ছিল। তবে গতকাল সবাইকে চমকে দিয়ে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন লায়ন। চোট যে একটু বেশিই, সেটা বোঝা গেছে তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠে নামাতেই। লায়নের এমন বীরত্বকে লর্ডসের দর্শকেরা সম্মান জানান করতালি দিয়ে। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকেও এসেছিল প্রশংসা।
তবে সিরিজটার নাম যখন অ্যাশেজ, তখন লায়নের এমন ঘটনায় শুধুই কি প্রশংসাই হবে? বোধ হয় না, হয়নিও। লায়ন কনকাশন সাব পেতেই ব্যাটিংয়ে নেমেছেন কি না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেন। জবাবে পিটারসেনের এমন মন্তব্যকে ‘বাজে আলোচনা’ বলেছেন লায়ন।
লর্ডস টেস্ট দিয়ে টানা ১০০ টেস্ট খেলার কীর্তি গড়া লায়ন চোটে পড়েছেন ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে। ফিল্ডিং করার সময়ে পায়ের পেশির চোটে পড়েন এই স্পিনার। এরপর লায়ন অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে মাঠে এসেছিলেন ক্রাচে ভর করে।
তাই স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া হয়েছিল এই টেস্টে নিশ্চিতভাবেই দেখা যাবে না লায়নকে। তাই অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে নবম উইকেট পতনের পরই ধারাভাষ্যকার বলে ফেলেছিলেন, ইংল্যান্ডের সামনে ৩৫৬ রানের লক্ষ্য। কিন্তু লায়নকে নামতে দেখে কথা ফিরিয়ে নিতে হয়েছে ধারাভাষ্যকারকে।
লর্ডস টেস্ট জিতে সিরিজে ২-০–তে এগিয়ে যেতে শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ৬ উইকেট। নিঃসন্দেহে টেস্টের পঞ্চম দিনের উইকেটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতেন একজন স্পিনার। লায়ন না থাকায় সেই কাজ করতে পারতেন অ্যাশেজের স্কোয়াডে লায়নের বিকল্প ৪ টেস্টে ১৪ উইকেট নেওয়া টড মার্ফি।
কিন্তু লায়নের পরিবর্তে চাইলেও তো আর তাঁকে মাঠে নামানো সম্ভব নয়। একমাত্র কনকাশন সাব কিংবা কোভিড–১৯–এর কারণেই একাদশে থাকা খেলোয়াড়ের বদলি হিসেবে কাউকে খেলানো যায়। সেই সুযোগ নিতেই লায়ন ব্যাটিংয়ে নেমেছেন কি না, প্রশ্ন তুলেছেন পিটারসেন। স্কাই স্পোর্টসে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময়ে তিনি বলেছেন, ‘ভাবুন, যদি লায়নের মাথায় বল লাগে আর কনকাশন সাব হয়, তাহলে কিন্তু লায়নের বিকল্প বিশ্বমানের স্পিনার মার্ফি প্রস্তুত।’
গতকাল লায়নের মাথায় বল লাগাটাও অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। কারণ, ইংল্যান্ডের বোলাররা পুরো ইনিংসেই প্রচুর বাউন্সার দিয়েছেন। ক্রিজে এসে লায়ন যে ১৩ বল খেলেছেন, তার সব কটিই ছিল শর্ট বল। যদিও লায়নের মাথায় শেষ পর্যন্ত বল লাগেনি।
পিটারসেনের এমন কথা মোটেই পছন্দ হয়নরি লায়নের।
বাউন্সারের প্রসঙ্গে লায়ন উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন মাথায় বল লেগে মারা যাওয়া ফিল হিউজকে, ‘চোট খেলারই অংশ। আমি নাকি মাঠে গিয়েছি শুধু মাথায় বল লাগাতে, এমন আলোচনাও শুনলাম। আমি এর বিপক্ষে, আমি আমার একজন সতীর্থকে (ফিল হিউজ) হারিয়েছি মাথায় বল লাগার জন্য। আমার মনে হয়, সত্যি বলতে খুবই বাজে একটা আলোচনা হয়েছে।’
কেন এমনটা করেছেন লায়ন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘আমি ঝুঁকিটা জানতাম। কিন্তু আমি এই দলের জন্য সবকিছু করব। কে জানে অ্যাশেজে ১৫ রানের জুটিও কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এমন অবস্থায় মাঠে গিয়ে আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত। যদি এমন পরিস্থিতি আবার আসে, আমি একই কাজ করব, বারবার করব।’