ব্যর্থ হয়েছেন লিটন
ব্যর্থ হয়েছেন লিটন

সাকিব-লিটনদের অমন শট ‘মনস্তাত্ত্বিক ভুল’

চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন। চা-বিরতির বাকি ছয় মিনিটের মতো। কুলদীপ যাদবকে ওই সময়ে তুলে মারতে গেলেন লিটন দাস, ধরা পড়লেন লং অনে। জাকির হাসানের সঙ্গে জুটিটা জমছিল তাঁর, হুট করেই লিটনের ওপর এসে যেন কিছু ভর করল।

মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন। মধ্যাহ্নবিরতির পর প্রথম বল। উমেশ যাদবের লেংথ বলটা তুলে মারতে গেলেন সাকিব আল হাসান। মিড অফকে পার করাতে পারলেন না। মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটিটা বড় হচ্ছিল, বিরতির ঠিক আগের বলে স্টাম্পিংয়ের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া সাকিব আবার ঝুঁকি নেওয়াতে সেটি থেমে গেল সেখানেই।

পরপর দুই টেস্ট, অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানের এমন ভুল। টেস্ট ক্রিকেটের টেম্পারামেন্টটা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কতটুকু আছে, যে ভুল তুলে দেয় সেই পুরোনো প্রশ্নটা নতুন করে। ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সও যেন অসহায়। বললেন, এগুলো ব্যাটসম্যানদের মনস্তাত্ত্বিক ভুল। এসব শোধরানোর দায়িত্বের অনেকটাই ব্যাটসম্যানদেরই নিতে হবে, সেটিও বললেন।

সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি সাকিব

সাকিবের অমন শট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সংবাদ সম্মেলনে আজ সিডন্স বলেছেন, ‘সিনিয়র খেলোয়াড়েরা এমন মনস্তাত্ত্বিক ভুল করছে, এটি হতাশার। সে এমনিতেও স্পিনার ও পেসারদের বিপক্ষে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল তাদের লেংথ বদলাতে। লেংথ নিয়ে চিন্তিত ছিল। মধ্যাহ্নবিরতির পর তো বোলাররাও একটু এলোমেলো থাকে। ক্রিজে থাকলে বাজে কিছু বল পেত। এটা তার সিদ্ধান্ত। (তবে) এসব ভুল করতে দেখা আমার জন্য হতাশার।’

শুধু সাকিব নন, বেশ ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং শুরু করা লিটন দাসও আউট হয়েছেন আলগাভাবেই। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে জোরের ওপর ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েছেন শর্ট মিড উইকেটে।

লিটন সীমিত ওভারের সংস্করণের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না বলেই মনে করেন সিডন্স, ‘বিশ্বকাপে যা করেছে, যা কিছু প্রস্তুতি, আমার মনে হয় সংক্ষিপ্ত সংস্করণ থেকে তার পালাবদলটা কঠিন মনে হচ্ছে। ওয়ানডে খেলেছে, এখন টেস্ট খেলছে—যেখানে মাটি দিয়ে বল মারতে হবে। দুই ইনিংসেই তাকে দারুণ দেখা গেছে। সে দ্রুত রান তুলতে ভালোবাসে, সেটিই করেছে। তবে একটা তুলে মেরেছে। আমার মনে হয়, আরেকটি মনস্তাত্ত্বিক ভুল। সে আমাদের সেরা খেলোয়াড়। তার বড় স্কোর গড়া উচিত।’

এক মুমিনুল হকের ৮৪ রানের ইনিংস ছাড়া বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে নেই কোনো ৩০ পেরোনো স্কোরই। অথচ স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক নুরুল হাসান ছাড়া ১৫ ছুঁয়েছেন সবাই। মানে শুরুটা করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি।

এ উইকেটে পেসারদের বিপক্ষে আউট হওয়াটাও ঠিক হয়নি, মনে করেন সিডন্স, ‘আমরা কঠোর পরিশ্রম করি, ফলে এটি হতাশার। যখন আপনি ভালো শুরু পাবেন, আপনার ইনিংস বড় করতে হবে। চট্টগ্রামের মতো এখানেও তিন-চারজন ২০ করল, বাকিরা ১৫-১৬, রান করল শুধু একজন। এভাবে তো ম্যাচ জেতার মতো স্কোর পাব না। থিতু হওয়ার পরও মনস্তাত্ত্বিক ভুল করছে। স্পিনারদের বল বাঁক নিচ্ছিল, কিন্তু পেসাররা তেমন কিছু পাচ্ছিল না। উমেশকে ৫ (৪) উইকেট দেওয়াটা খুবই হতাশার।’

এসব সমস্যাকে টেকনিক্যাল বলতেও রাজি নন সিডন্স, ‘আমি টেকনিক্যাল ও মানসিক দিক নিয়ে কাজ করি। একটি-দুটি ছাড়া এগুলোকে টেকনিক্যাল মনে হয় না। তারা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া বা বল তুলে মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাতারাতি এগুলো ঠিক করে দেওয়া আমার জন্য কঠিন।’

অনুশীলনে সবাই পরিশ্রম করছেন, কোচদের সঙ্গে কাজ করছেন। তবে এ ভুলের বৃত্ত থেকে যেন বেরোতে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা।

ব্যর্থ হয়েছেন মিরাজও

সিডন্স বলছেন, পরে গিয়ে আক্ষেপ করে লাভ নেই, যা করার ক্রিজেই করতে হবে, ‘আমি ছয়-সাত মাস কাজ করছি। এগুলো নিয়ে অনেক কথা বলি। অনেক অনুশীলন করি। তবে ব্যাটসম্যান যখন ক্রিজে থাকে, শট খেলে একজনই। তারা যদি ২৮ রানের জন্য এ কাজটা করতে পারে, আরও ২৮ রানের জন্যও করতে হবে তাদের। তবে আমরা কেন জানি খেলা বদলে ফেলি, গতি বাড়াই। সাকিব উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে, লিটন জোরের ওপর মারে, মেহেদী তাড়াহুড়া করে। মাথা নাড়তে নাড়তে বের হয় এটা ভাবতে ভাবতে, “আমি কেন এটা করলাম?” তবে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ছয় ঘণ্টা একই গতিতে থাকতে হবে। আমরা দিনের শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংয়ের কথা বলি। দ্রুতগতির ২৮ বা ৩০ রানের কথা নয়। তবে এটা হতেই আছে।’

ব্যাটসম্যানদের এমন ভুলের কারণেই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ‘পার’ স্কোরের অনেক আগেই থেমেছে বলেও মনে করেন দলের ব্যাটিং কোচ, ‘আমরা ৩০০ রান সহজেই করতে পারতাম। ১৪ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছি। ওই ৫ উইকেটে হয়তো ৪০-৫০ রান আসতে পারত, বিশেষ করে তাদের তিনজন যখন ব্যাটার। আমরা পার স্কোরের চেয়ে প্রায় ৭০ রানে পিছিয়ে। কাল অনেক ভালো বোলিং ও ফিল্ডিং করতে হবে। আশা করি, দিনের শেষে আমরা খেলায় থাকতে পারব।’