অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে প্রথম ২৬ ওয়ানডেতে ৩০০ ছাড়ানো ইনিংস ছিল মাত্র দুটি। যার সর্বশেষটি ২০১১ বিশ্বকাপে। সেই একই মাঠে আজ চার-ছক্কার বৃষ্টি ঝরিয়ে ৪১ ওভারেই ৩০০ ছুঁয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন দৃঢ় ভিত্তির পর দাঁড়িয়ে শেষ দিকে যেমনটি করার, এইডেন মার্করাম করেছেন সেটিই। বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি করে দলকে নিয়ে যান ৪০০–র ওপরে। বিশ্বকাপে দলীয় সর্বোচ্চর রেকর্ড ভেঙে দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ পর্যন্ত তোলে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৪২৮ রান।
কুইন্টন ডি কক আর রেসি ফন ডার ডুসেনের পর মার্করাম—তিন সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড গড়েছে প্রোটিয়ারা। বিশ্বকাপে এর আগে সর্বোচ্চ ৪১৭ রান ছিল অস্ট্রেলিয়ার, ২০১৫ সালে পার্থে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হয়েছিল সেই রেকর্ড। এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির ঘটনাও এটিই প্রথম।
অথচ টস হেরে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ছিল অধিনায়ককে হারানোর ধাক্কা দিয়ে। দুই চারে দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দেওয়া টেম্বা বাভুমা দ্বিতীয় ওভারেই ফেরেন দিলশান মাদুশঙ্কার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। ডুসেনকে নিয়ে ডি ককের দ্বিতীয় উইকেট জুটির শুরুটা ছিল সতর্কতার সঙ্গে। তবে একবার থিতু হতেই হাত খুলতে শুরু করেন দুজনে। প্রথম দশ ওভারে ৪৮ রান তোলা দক্ষিণ আফ্রিকা ২০ ওভার শেষে পৌঁছে যায় ১১৮ রানে, ত্রিশ ওভার শেষে ২০৬-এ।
৩১তম ওভারে পাতিরানাকে দুই চার মেরে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ডি কক। ১২ চার ও ৩ ছয়ে ১০০ ছোঁয়ার পরের বলেই অবশ্য বল আকাশে তুলে ক্যাচ আউট হন ডি কক। ডুসেনের সঙ্গে ডি ককের জুটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ।
আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরে থাকা ডুসেন ব্যক্তিগত তিন অঙ্কে পৌঁছান ১০৩ বলে। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যানও অবশ্য সেঞ্চুরির পর বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। তাঁর ১৩ চার ২ ছয়ে গড়া ইনিংসটি থামে দুনিত ভেল্লালাগের বলে সামারাবিক্রমার ক্যাচ হয়ে, ১১০ বলে ১০৮ রানে।
ডি ককের পর ডুসেনও যখন ফেরেন, দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩৭.১ ওভারে ৩ উইকেটে ২৬৪। এখান থেকেই প্রোটিয়াদের ইনিংস চার শর দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার। ৩৪ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর লঙ্কান বোলারদের জন্য ত্রাসে পরিণত হন মার্করাম। পাতিরানা, মাদুশঙ্কার বলে একের পর এক বাউন্ডারি মেরে পরের ১৪ বলেই তুলে নেন পরের পঞ্চাশ। ইনিংসের ৪৬তম ওভারের পঞ্চম বলে মাদুশঙ্কাকে ছয় মেরে ৪৯ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটিই দ্রুততম সেঞ্চুরি। এত দিন দ্রুততম ছিল ২০১১ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েনের ৫০ বলে সেঞ্চুরি।
ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এইডেনের সেঞ্চুরিটি তৃতীয় দ্রুততম। ৩১ বলে সেঞ্চুরি নিয়ে সবার ওপরে এবি ডি ভিলিয়ার্স, ৪৪ বলে সেঞ্চুরি মার্ক বাউচারের।
মার্করামের রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরিটি থামে মাদুশঙ্কার লো ফুল টসে কাসুন রাজিতার হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১৪ চার ৩ ছয়ের ইনিংসটি থামে ৫৪ বলে ১০৬ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ শেষ পর্যন্ত চার শর ওপরে নিয়ে যান ডেভিড মিলার ও মার্কো ইয়ানসেন। মিলার ২১ বলে ৩৯ আর ইয়ানসেন ৭ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে মাদুশঙ্কার দুই উইকেটই সেরা বোলিং, যদিও ১০ ওভারে দিয়েছেন ৮৬ রান। অবশ্য প্রোটিয়াদের এমন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের দিনে এমন রান খরচ করতে হয়েছে সব বোলারকেই।