একেবারে তলানিতে থাকা আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওই পরিস্থিতি থেকে গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচের তিনটি জেতার কৃতিত্ব অনেক এবং এটিই এখন বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসের জায়গা। এমন চড়াই–উতরাই পার হওয়ার মধ্য দিয়েই ধীরে ধীরে একটা দল গড়ে ওঠে, দলের ভেতরের চরিত্রগুলো সুদৃঢ় হয়। আশা করি, বাংলাদেশ দলে সুপার এইটে দলীয় ও ব্যক্তিগত দৃঢ় চরিত্রের একটা প্রকাশ দেখতে পাব।
এবারের বিশ্বকাপে কোনো দলকে খুব বড় বা কাউকে খুব ছোট বলার সুযোগ নেই। অবশ্যই কেউ ফেবারিট থাকবে, কেউ একটু পিছিয়েও থাকবে। কিন্তু একপেশে লড়াইয়ের সুযোগ কম। যাদের এ পর্যায়ে আসতে বেশ যুদ্ধ করতে হয়েছে, সেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রও যোগ্যতা প্রমাণ করেই শেষ আটে উঠেছে। সেটি এ দুই দলকে আরও সাহসী করে তুলবে।
অস্ট্রেলিয়া বেশ সহজে উঠে গেলেও ঠিক অস্ট্রেলিয়াসুলভ ক্রিকেট খেলেনি। আইপিএল থেকে এসে এমন কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়াটাও কঠিন। আশার কথা, বাংলাদেশের বোলিংয়ের যে উত্তরণ ঘটেছে, সেখানে যথেষ্ট ধারাবাহিকতা দৃশ্যমান। মূলত লড়াইটা হবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বোলিংয়ের। এই লড়াইয়ে যারা জিতবে, ম্যাচেও তারাই এগিয়ে থাকবে। অস্ট্রেলিয়া কিছুটা ফেবারিট অবশ্যই; কিন্তু বাংলাদেশকে সমীহ না করলে তাদের জন্য হিতে বিপরীতও হতে পারে।
কার্টলি অ্যামব্রোসের কথা শুনছিলাম, অ্যান্টিগার উইকেটে সুষম বাউন্স আছে। উইকেটটিকে বিশ্বাস করে ব্যাটসম্যানরা স্ট্রোক খেলতে পারে। আবার বোলারদের জন্যও আছে বাউন্স আর গতি। কন্ডিশনটা হয়তো ব্যাটসম্যানরা বেশি উপভোগ করবে। সে হিসেবে অস্ট্রেলিয়া কিছুটা এগিয়ে থাকবে। টপ অর্ডারের দুর্বলতা থাকার পরও বাংলাদেশ দল গ্রুপ পর্ব পেরিয়েছে। এখানে সেই ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারলে ভালো লড়াই দেখতে পাব।
আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সেটিতেই অটল থাকা উচিত। পরিকল্পনা আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের হতে পারে, আবার ধরে খেলে ইনিংস বড় করারও হতে পারে। কিন্তু উইকেটে নেমে যাতে সেটি হঠাৎ বদলে না যায়। পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়, বিশেষ করে যারা রান–খরায় ভুগছে ওদের। নিজের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখাটা খুব দরকার। সেটি করতে পারলে সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
এ উইকেটে রান হওয়ার কথা, যেটি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে যাবে। কারণ, হাই স্কোরিং ম্যাচ খেলার অভ্যস্ততা আমাদের নেই, বড় স্কোর গড়ার একটা ঘাটতিও আছে। তবে মোটামুটি একটা স্কোর গড়তে পারলে সেটাকে রক্ষা করার শক্তি আমাদের বোলারদের আছে।
এ ম্যাচেও রিশাদকে নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী। যেকোনো উইকেটেই বল ঘোরাতে পারে সে। তবে এখানকার বাউন্স তাকে একটু বাড়তি সুবিধা দেবে। অস্ট্রেলিয়াও কিন্তু তাকেই লক্ষ্য করবে, উঠতি তরুণ স্পিনারকে চাপে ফেলতে চাইবে। তবে আমার মনে হয় না রিশাদ তাতে বিন্দুমাত্র পিছপা হবে; বরং এটি তাকে আরও বেশি উজ্জীবিত করবে। অস্ট্রেলিয়ানদের আক্রমণের জবাব সে আক্রমণেই দেবে এবং এই লড়াইও বেশ উপভোগ্য হবে।
লেখক: কোচ ও ক্রিকেট বিশ্লেষক।