ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম
ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম

বলছেন শহীদ আফ্রিদি

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ক্রিকেটের ‘সুপার বোল’

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সম্ভাবনা কতটুকু? এই বিশ্বকাপ কতটা জাগাতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটকে? ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়েই–বা তিনি কী ভাবছেন? আইসিসির ওয়েবসাইটে লেখা এক কলামে সেসব নিয়েই বলেছেন সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক ও বিশ্বকাপের ‘টুর্নামেন্ট অ্যাম্বাসেডর’ শহীদ আফ্রিদি—

পাকিস্তান যেকোনো দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে, গত কয়েক বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপগুলোই এর প্রমাণ। এ বছর পারফরম্যান্স অধারাবাহিক হলেও আমার বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভালো করার মতো যথেষ্ট রসদ আছে তাদের। সর্বশেষ দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান ফাইনাল খেলেছে। এবারের দলটার প্রতিভা নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই।

ক্যারিবীয় কন্ডিশনেই পাকিস্তানের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি, বিশেষ করে বোলিংয়ে। পাকিস্তানের ফাস্ট বোলাররা অন্য যেকোনো দলের চেয়ে এগিয়ে। বিশ্বকাপে অবশ্য সেরা সমন্বয় ঠিক করাটা জরুরি। সে জন্য পাওয়ারপ্লেতে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে। ১৪তম ওভার পর্যন্ত বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলতে হবে। ফিনিশিংটাও জরুরি। এ বছর দল অতটা ভালো না করলেও ইতিবাচক থাকতে হবে, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তার দায়িত্বের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। পাকিস্তান যদি দলগতভাবে খেলতে পারে, তাহলেই স্বপ্ন সত্যি হবে।

যখন শুনলাম টুর্নামেন্টটা ক্যারিবিয়ানে হচ্ছে, তখন আমি বেশ রোমাঞ্চিত অনুভব করলাম। ২০১০ সালে সর্বশেষ যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়েছিল, তখন আমি ছিলাম পাকিস্তান দলের অধিনায়ক। দারুণ সব স্মৃতি আছে ওই টুর্নামেন্টের। অলরাউন্ডার হিসেবে আমি সেখানকার কন্ডিশন বেশ উপভোগ করেছি। কারণ, ব্যাটসম্যান ও বোলারদের জন্য উইকেটে সমান সাহায্য ছিল। এখন দায়িত্বটা খেলোয়াড়দের। তাদের দ্রুত কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। এখানে ব্যাটসম্যানদের শট নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, বোলারদের খুঁজে নিতে হবে সঠিক লাইন-লেংথ।

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি, এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুভেচ্ছাদূত তিনি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটের জন্যও টুর্নামেন্টটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজে সেখানে ক্রিকেট খেলাটা বেশ উপভোগ করেছি। যারা সেখানে খেলেনি, তাদের জন্য বলছি, যুক্তরাষ্ট্রের কন্ডিশন অনেকটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতোই। আমি নিশ্চিত, সেখানকার দর্শকেরা খেলা উপভোগ করবে। প্রবাসীদের বিশাল অংশ ক্রিকেট ভালোবাসে। আর যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বরাবরই খেলাপ্রিয়, সেটা আমেরিকান ফুটবল হোক কিংবা বাস্কেটবল, বেসবল। আমার বিশ্বাস, আগামী কয়েক বছরে ক্রিকেটও যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার খেলায় জায়গা করে নেবে। তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এটি নিশ্চিতভাবেই দারুণ খবর।

এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের যাঁরা খেলাটার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন, তাঁদের একটি বিষয় জানা উচিত। ক্রিকেটে পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ অনেকটা সুপার বোলের মতো। আমি নিজেও খেলোয়াড়ি জীবনে ভারতের বিপক্ষে খেলতে মুখিয়ে থাকতাম। যেকোনো খেলার সবচেয়ে বড় দ্বৈরথ এটি। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ খেলার সময় ভারতীয় সমর্থকদের কাছ থেকেও অনেক ভালোবাসা আর সম্মান পেয়েছি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই।

নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে ভারত সমর্থকরা। এ মাঠেই হবে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই চাপ সামলানোর খেলা। দুই দলেই যথেষ্ট প্রতিভা আছে, সামর্থ্য আছে। তবে ওই নির্দিষ্ট দিনে সব সামর্থ্যের প্রদর্শনটা জরুরি। ওই বিশেষ ম্যাচে তো বটেই, পুরো টুর্নামেন্টেই এটা গুরুত্বপূর্ণ হবে। যে দল স্নায়ুর চাপ ভালো সামলাতে পারবে, তারাই শিরোপা জিতবে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এমনিতেই অনিশ্চয়তায় ভরা, তার ওপর এখন দলগুলোর ব্যাটিং লাইনআপ অনেক লম্বা। দেখা যাবে, একজন ব্যাটসম্যান আটে নেমে ১৫০ স্ট্রাইক রেটে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে দলকে জিতিয়ে দিচ্ছে। আমি আশা করি, পাকিস্তানই হবে সে দল। তবে এটাই ঠিক, এই বিশ্বকাপের ফেবারিট দল বাছাই করা খুবই কঠিন।