এশিয়া কাপের সুপার ফোরে যে চারটি দল আছে, এর মধ্যে আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের জায়গায় হয়তো বাংলাদেশই এখন তলানিতে। সেটা মূলত বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের কারণেই। বাংলাদেশের সামান্য ওপরে হয়তো আছে শ্রীলঙ্কা। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার যেমন পারফরম্যান্স, সেটা দেখার পর বাংলাদেশের চেয়ে তাদের খুব এগিয়ে রাখব না। আজ এই দুই দলের খেলায় তাই বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সম্ভাবনা দেখছি।
শ্রীলঙ্কা দলটা এবার কেমন যেন অগোছালো। তাদের সেরা ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিই এর কারণ। বাংলাদেশও চোটের কারণে অনেককে পাচ্ছে না। কিন্তু আজ খেলাটা যেহেতু শ্রীলঙ্কার মাটিতে, স্বাভাবিকভাবেই তারা এগিয়ে থাকবে। দুই দলই হয়তো একাদশ নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। সেটা ভালো লক্ষণ নয়। কারণ, কলম্বোতে যে উইকেটে খেলতে হবে, সেটা ব্যাটিং–সহায়ক হওয়ার কথা নয়। গত কয়েক দিন শুনেছি প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে, কিউরেটর নিশ্চয়ই এ কারণে মাঠের পরিচর্যা ঠিকমতো করতে পারেননি। আর ম্যাচের দিনও বৃষ্টি হতে পারে। কার্টেল ওভারের খেলা গড়াতে পারে।
কন্ডিশনের কারণেই খেলাটা বোলিংনির্ভর হয়ে উঠতে পারে। যে দলের বোলাররা ভালো বোলিং করবেন, তাদের জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটা সুবিধা আছে; কারণ, তাসকিনরা এবারের এশিয়া কাপে ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করছেন। আর ব্যাটসম্যানদের দুর্ভাগ্য, নিজেদের ধারাবাহিক করে তোলার জন্য লাহোরের মতো ব্যাটিং–সহায়ক উইকেট তাঁরা পাচ্ছেন না। এখন তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে কলম্বোর মন্থর উইকেট। যেখানে ভালো করতে হলে শট নির্বাচনে হতে হবে আরও নির্ভুল।
আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ম্যাচটায় আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখতে চাই না। বিশেষ করে ওপেনিংয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে না খেলিয়ে তাঁর নিয়মিত পজিশনেই খেলানো উচিত। শেষ মুহূর্তে কন্ডিশন দেখে হয়তো পরিবর্তন আসতে পারে। সেটা ভিন্ন কথা। এ ছাড়া ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ নাঈমের জায়গায় হয়তো অন্য কেউ আসতে পারে। তবে যে-ই আসুক, দুঃখজনক যে তাঁরাও খুব একটা রানে নেই। এই পরিস্থিতি অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত নয়। যে দলটা এশিয়া কাপের সুপার ফোরে এল, তাঁরা এখনো সেরা সমন্বয়ের খোঁজ করছে।
সমন্বয়ের কথা যেহেতু এল, একজন ব্যাটসম্যান কমিয়ে খেলার কথাটা আমি আগের ম্যাচেই বলেছিলাম। এ ম্যাচেও বাংলাদেশ বোলিং অপশন বাড়িয়ে খেলুক, তা দেখতে চাইব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের প্রথম ম্যাচে শেখ মেহেদী হাসান খেলেছিলেন। আমি আজ সেই জায়গায় নাসুম আহমেদকে দেখতে চাইব। তিনি খুব বেশি ওয়ানডে খেলেননি। তবে টি-টোয়েন্টিতে বেশ নিয়মিত। আমার ধারণা, শ্রীলঙ্কার উইকেটে সাকিবের সঙ্গে নাসুমের জুটিটা বোলিংকে আরও শক্তিশালী করবে।
বাংলাদেশকে অতীতটাও দ্রুত ভুলতে হবে। আগের ম্যাচে ভরাডুবির বোঝা এ ম্যাচে টেনে আনলে সফলতার মুখ দেখা কঠিন হবে। নতুন দিনের শুরুটা সাকিবরা নতুনভাবে করবেন, এ আশা থাকবে। আমার আশাবাদী হওয়ার আরও একটা কারণ আছে। এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার যে পারফরম্যান্স, সেটাও আহামরি কিছু নয়। শ্রীলঙ্কাও মানসিকভাবে নড়বড়ে থাকবে…বাংলাদেশ সে সুযোগটা নিতে পারে। শ্রীলঙ্কা এ ম্যাচটা জেতার সব চেষ্টাই করবে। কারণ, পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে জিততে হলে ওদের বেশ কষ্ট করতে হবে। আর ঘরের মাঠের এশিয়া কাপে ভালো করার চাপ তো ওদের ওপর আছেই।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যা দেখলাম, বৃষ্টিতে ম্যাচটা ভেসেও যেতে পারে। তেমন কিছু হলে দর্শক হিসেবে হতাশ হব। বাংলাদেশের জন্য সেটা বড় ক্ষতি হবে। বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ তাদের খেলোয়াড়দের পরখ করার একটা সুযোগ হারাবে। তাই ছোট হয়ে এলেও ম্যাচটা যেন হয়, সে আশাই থাকবে।