সুপার এইটের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ
সুপার এইটের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ

উৎপল শুভ্রর লেখা

সুপার এইট ভুলে ভাবনায় এখন শুধুই নেপাল

কি, উদ্‌যাপন শুরু করে দিয়েছেন তো? তা দিন। তবে একটা কথা মনে রাখতে বলি। বাংলাদেশ কিন্তু এখনো সুপার এইটে উঠে যায়নি।

না-ও উঠতে পারে। সেটি কীভাবে? প্রথম হিসাবটা খুব সহজ। নেপাল যদি শেষ দুটি ম্যাচে জিতে যায়, তাহলে বাংলাদেশকে বিদায় করে দিয়ে নেপালই উঠে যাবে সুপার এইটে।

কী ব্যাপার, হাসছেন কেন? ও আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি। শেষ দুই ম্যাচে নেপালের প্রতিপক্ষ কারা, তা আপনার জানা আছে।

আরেকভাবেও বাদ পড়তে পারে বাংলাদেশ। এই হিসাবটা একটু জটিল। ধরুন, নেপাল বাকি দুই ম্যাচের প্রথমটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিল। ওদিকে নেদারল্যান্ডস হারিয়ে দিল শ্রীলঙ্কাকে। নেদারল্যান্ডস আর বাংলাদেশের পয়েন্ট তখন সমান হয়ে যাবে। সুপার এইটে ওঠার নির্ধারক হয়ে দাঁড়াবে নেট রান রেট।

সেটিরও একটা হিসাব করে ফেলা যায়। নেট রান রেট এত সব ভেরিয়েবলসের ওপর নির্ভর করে যে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা কঠিন। বোঝানোর জন্য ধরে নেওয়া যাক, প্রথমে ব্যাটিং করা দল ১৬০ রান করেছে। এরপর নেদারল্যান্ডস যদি শ্রীলঙ্কাকে ১৫ রানে হারায়, নেপালের কাছে বাংলাদেশকে ৩৭ রানের বেশি ব্যবধানে না হারলেই চলবে।

বাংলাদেশ সমর্থকেরা দলকে এরই মধ্যে সুপার এইটে দেখতে শুরু করেছেন

কী বুঝলেন, উদ্‌যাপন স্থগিত রাখার কোনো কারণ দেখছেন না, তাই তো? বরং এসব কথায় বিরক্ত হয়ে হয়তো বলছেন, এই প্যাঁচাল বাদ দিয়ে সুপার এইটে বাংলাদেশ কবে কোন দলের সঙ্গে খেলবে, সেটি বরং জানিয়ে দিন না ভাই।

সেটাই উচিত। সুপার এইট নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেওয়াই যায়। নেপাল নামের ছোট্ট একটা বাধা সামনে আছে বটে, তবে অলৌকিক কিছুই শুধু বাংলাদেশকে এখন সুপার এইটের বাইরে রাখতে পারে।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে আর্নস ভেলের প্রেসবক্স যেন এক টুকরো মিরপুর। সাংবাদিকদের সবাই যে বাংলাদেশের। ও হ্যাঁ, বাইরের একজন ছিলেন। নেদারল্যান্ডসের মিডিয়া ম্যানেজার। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনেকেই ব্যস্তসমস্ত হয়ে সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে অ্যান্টিগার বিমানের টিকিট খুঁজতে শুরু করলেন। অনেকেই সেন্ট ভিনসেন্ট পর্যন্ত টিকিট কেটে এসেছেন। অ্যান্টিগা যাবেন কি যাবেন না, তা জানতে অপেক্ষায় ছিলেন এই ম্যাচের। এখন তো যেতেই হচ্ছে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে এক দ্বীপরাষ্ট্র থেকে আরেক দ্বীপরাষ্ট্রে যাওয়াটা খুব ঝক্কির। বিমানে ৪৫–৫০ মিনিটের দূরত্বের কোথাও যেতে আরও দুই দ্বীপ ঘুরে ২৫–২৬ ঘণ্টা লেগে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। নেপাল ম্যাচের চেয়ে অ্যান্টিগা যাওয়ার বিমানের টিকিট কাটার দিকেই সাংবাদিকদের এখন বেশি মনোযোগ।

বিশ্বকাপে এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যেতে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা আছে

বাংলাদেশ দল এই ভুল করছে না। অ্যান্টিগা যাওয়া নিয়ে তো আর তাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আইসিসি চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেই রেখেছে। সুপার এইটে কবে কাদের সঙ্গে খেলা পড়বে, সেই আলোচনা তো একটু হচ্ছেই। তবে অস্ট্রেলিয়া-ভারত-আফগানিস্তানের চিন্তা দ্রুতই দূরে সরিয়ে রেখে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে ফিরে আসছেন সবাই। নেপাল আর এমন কী—এই বিপজ্জনক ভাবনায় আক্রান্ত না হওয়ার ব্যাপারেও সবাই খুব সচেতন।

সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা তো দিয়েছে নেদারল্যান্ডসই। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলের অনেকেই আছেন এখানেও। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে বসার সেই অপমান স্বাভাবিকভাবেই ভোলেননি। সঙ্গে একটা আত্মোপলব্ধির ব্যাপারও ছিল। নেদারল্যান্ডসকে একটু হালকাভাবে নেওয়ার সেই ভুল। এবার আর যে ভুল হয়নি।

নেপালের বিপক্ষেও হবে না। বরং সেদিন আরও ভালো করার বাড়তি একটা প্রেরণাও খুঁজে নিচ্ছে দল। বাংলাদেশে ঈদের দিন সকালে এই ম্যাচ পড়েছে, সেন্ট ভিনসেন্টে এক দিন আগে ঈদ হচ্ছে বলে এখানে ঈদের দিন সন্ধ্যায়। ম্যাচটা তাই দেশের মানুষের ঈদের আনন্দ আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ। নিজেকে ফিরে পাওয়া সাকিব আল হাসান যেমন বলেছেন, ‘ঈদের দিনটা বাংলাদেশের সবাই উদ্‌যাপন করে, অন্য ধর্মের লোকেরাও করে। আশা করি, সেদিন জিতে সবার মুখে হাসি ফোটাতে পারব।’

ঈদের দিনে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর অপেক্ষায় সাকিব

মাঠ আর উইকেটের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যাওয়াটাও একটু স্বস্তি দিচ্ছে এই ম্যাচের আগে। বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়ে আর্নস ভেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেছে ১০ বছর পর। ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য তা এমনই উদ্‌যাপনের উপলক্ষ যে সেন্ট ভিনসেন্টের প্রধানমন্ত্রী রাউল গনজালেসও এদিন খেলা দেখতে এসেছেন। ২০১৪ সালে যাঁর বাড়িতে দাওয়াত খেয়েছে বাংলাদেশ দল। সেবার ছিল টেস্ট ম্যাচ, গত পরশুর আগে এই মাঠে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচও। যে টেস্টের বাংলাদেশ দলের একমাত্র মাহমুদউল্লাহই আছেন এবারও। সেই অভিজ্ঞতা কোনো কাজে আসার কথা নয়। ১০ বছরে কত কিছুই তো বদলে যায়, আর এ তো উইকেট!

টসে হেরে ব্যাটিং করতে নামার সময় উইকেট-উইনিং স্কোর—এসব নিয়ে তাই অন্ধকারেই ছিল বাংলাদেশ। শুরুতেই ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যে অন্ধকার আরও গাঢ়। প্রথমে ব্যাটিং করা দল উইকেট বুঝে যেমন লক্ষ্য স্থির করে, তেমনি মাঠের অতীত ইতিহাসও ভূমিকা রাখে তা ঠিক করায়। আর এখানে তো টি-টোয়েন্টিই হয়েছে দুটি, তা-ও আবার সেই ২০১৩ সালে। সাকিব আল হাসানের অভিজ্ঞতাটা এখানে তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নিজের ফর্মে ফেরার লড়াই ছিল, সঙ্গে অন্য ব্যাটসম্যানদের গাইড করার দায়িত্বও। দুটিই দারুণভাবে করে শুধু ম্যাচসেরাই হননি, গায়ে তুলেছেন মেরুন জ্যাকেটও।

সাকিবের স্বরূপে ফেরা বাংলাদেশ দলে স্বস্তিও ফিরিয়েছে

ম্যাচে বড় অবদান রাখার সঙ্গে দলকে চাঙা করে তোলার পুরস্কার এই মেরুন জ্যাকেট দেওয়া হয় ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে একজনকে বেছে নিয়ে। এদিন যেটির দাবিদার অনেকেই। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে সাকিবকে বিজয়ী ঘোষণা করার আগে সেই নামগুলোও বলা হয়েছে। তানজিদ, রিশাদ, মোস্তাফিজ…।

সাকিবকে বেছে নেওয়ার কারণ, দলের যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেই সময়ে জ্বলে ওঠা। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপও এসেছে উদাহরণ হিসেবে। পুরো বিশ্বকাপে নিষ্প্রভ সাকিব শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আনঅফিশিয়াল কোয়ালিফাইং ম্যাচে ঠিকই দারুণ এক ইনিংস খেলে জিতিয়ে দিয়েছিলেন দলকে।

ভাবনায় এখন নেপালই। তবে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, আফগানিস্তানও যে একটু উঁকি দিচ্ছে না; তা নয়। বড় কিছুর স্বপ্নও দেখছে বাংলাদেশ। যে স্বপ্নে রং লাগিয়েছে সাকিবের স্বরূপে ফেরা।