বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতি কেমন হতে পারে, সেটা তাওহিদ হৃদয়ের ভালোই জানা। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন হৃদয়। এখন তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য—এই মুহূর্তে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের দু-একজন ইনফর্ম ব্যাটসম্যানের মধ্যে তাঁর নাম আসবে সবার ওপরে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে হৃদয়ের মুখেই শুনুন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা, ‘এবারের বিশ্বকাপে নিজের নামের পাশে কিছু দেখতে চাই না। আমি চাই দল যেন ভালো করে। আমার জায়গা থেকে অবশ্যই নিজের সেরাটা দিয়ে অবদান রাখার চেষ্টা করব। আমি চাই আমার দল কমপক্ষে সেমিফাইনাল খেলুক।’
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য লক্ষ্যটাকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত সীমিত রেখেছেন হৃদয়। কিন্তু দেশকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সেরা সাফল্য এনে দেওয়া হৃদয় সিনিয়র ক্রিকেটেও বিশ্বকাপ জিততে চান, ‘চোখ খুলেও এখনো অনুভব করি যে কী হয়েছিল সেই বিশ্বকাপে (অনূর্ধ্ব-১৯)। এখন আমাদের সময় এসেছে জাতীয় দলের হয়ে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের মতো জায়গায় গিয়ে ভালো করা, কাপ নেওয়া, ভালো করা না, কাপ নিতে চাই। শুধু আমি না, আমরা সবাই চাই। আমরা যদি আমাদের দিক থেকে ভালো করতে পারি, তাহলে বেশি দেরি নেই।’
বাংলাদেশ দলের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বমঞ্চে ভালো করা যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটিও বুঝতে পারছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, ‘আইসিসি ইভেন্ট জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যখন জিতব, তখন আমাদের সেভাবেই মূল্যায়ন করা হবে। এখন যেমন বড় বড় দলের খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করা হয়…আমরা যদি দু-একটি ট্রফি জিততে পারি, তাহলে আমাদের মানসিক সন্তুষ্টি, আত্মবিশ্বাস…আমাদের যে নতুন প্রজন্ম আসবে, তাদেরও ওইভাবে সবাই মূল্যায়ন করবে।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অনেকেই এখন জাতীয় দলে নিয়মিত। হৃদয়, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান, শরীফুল ইসলাম এবারের বিশ্বকাপ দলের সদস্য। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনও একই ব্যাচের ক্রিকেটার। নিজের বয়সভিত্তিক দলের সতীর্থদের সামর্থ্যে হৃদয়ের কতটা আস্থা, তা বোঝা যায় এই কথায়, ‘অনূর্ধ্ব-১৯–এ যারা ছিল, শুধু অনূর্ধ্ব-১৯ নয়, এই দলে যারা আছে, মনে হয় যে প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ। সবাই খুবই আক্রমণাত্মক। তামিম, সাকিব, রিশাদ…যারাই আছে, আমার মনে হয় ওরা এমন খেলোয়াড়, যেকোনো দিন একজন-দুজন খেলার চেহারাটা পরিবর্তন করে দিতে পারে। এদের মধ্যে ওই সামর্থ্য আছে। প্রত্যেকের মধ্যে একটা জেদ আছে। আমরা যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এখানেও তেমন কিছু করব।’
তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্যটা বিশাল। গত এক-দেড় বছরে এটি হৃদয়-তানজিদের বুঝে যাওয়ার কথা। হৃদয় অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জটা উপভোগই করেন বলে দাবি করলেন, ‘দুটিই তো দেশের জন্য খেলা, একটা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে। আরেকটা এলিট স্টেজে। দুটিই গর্বের। একটা ক্যারিয়ার শুরুতে আসা অর্জন, সব সময়ের জন্য স্মরণীয়। জাতীয় দলে চ্যালেঞ্জ বেশি, প্রতিযোগিতা বেশি—সবকিছুই বেশি। যেখানে চ্যালেঞ্জ বেশি, সেখানেই ভালো লাগে।’
বড় মঞ্চের চ্যালেঞ্জের একটা পরীক্ষা এর মধ্যেই দিয়েছেন হৃদয়। গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ খেলে ৬ ইনিংসে ব্যাট করে হৃদয় রান করেছেন ১৬৪। সেই বিশ্বকাপজুড়েই হৃদয়ের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। অভিষেকের পর থেকে ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে ব্যাট করা হৃদয়কে বিশ্বকাপে কখনো টপ অর্ডার, কখনো লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলানো হয়। তাতে ব্যাটিং ছন্দটা হারিয়ে বসেন এই তরুণ।
তিনি নিজেই বলছিলেন, ‘২০২৩–এ যেটা হয়েছে, হয়তো আমাকে নিয়ে দলের পরিকল্পনা ছিল এমন। কিন্তু ২০২৩–এর বিশ্বকাপের আগে আমি অন্য জায়গায় ব্যাটিং করেছি। সব সময় ওপরেই খেলেছি। কিন্তু বিশ্বকাপে যখন নিচে ব্যাটিং করেছি, ছয়ে-সাতে, তখন আমার জন্য মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়েছিল। এরপরও চেষ্টা করেছি। দল আমার কাছে যা চেয়েছে, তা দিয়ে কন্ট্রিবিউট করার জন্য। হ্যাঁ, কিছু ম্যাচ পারিনি।’
তবে ২০২৩ সালে নিজের পারফরম্যান্সকে খারাপ বলতে চান না হৃদয়। তাঁর একটা যুক্তিও আছে, ‘অনেকেই বলে বিশ্বকাপটা ভালো হয়নি। আপনি যদি দেখেন, ছয়-সাত এমন এক পজিশন, যেখানে প্রতিদিনই ভালো খেলবে না। এমন কোনো ব্যাটসম্যান নেই যে নিচে নেমে নিয়মিত ভালো করবে। এই জায়গাটা এমন, যেখানে আপনি দু-একদিন খেলবেন। আমার কাছে মনে হয় না আমি খুব খারাপ খেলেছিলাম। আমি ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ওপরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছি। ভারতের সঙ্গে রান করতে পারেনি আর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমি ৭৪ করেছিলাম। ভালো একটা অভিজ্ঞতা ছিল। অনেকে বলে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আমি এখনো তা দেখিনি। আল্লাহ আমাকে যেন সেটা না দেখায়। যেন দলের জন্য সব সময় অবদান রেখে যেতে পারি।’