মোহাম্মদ সিরাজের (মাঝে) কার্যকারিতা নিয়ে কথা বলেছেন মদন লাল
মোহাম্মদ সিরাজের (মাঝে) কার্যকারিতা নিয়ে কথা বলেছেন মদন লাল

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের পেস আক্রমণ পছন্দ হয়নি মদন লালের

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই গতকাল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ভারতের সাবেক পেস অলরাউন্ডার মদন লাল এই স্কোয়াডের পেস বিভাগের শক্তি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে দুই পেসার অর্শদীপ সিং ও মোহাম্মদ সিরাজের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৭৩ বছর বয়সী সাবেক এই ক্রিকেটার।

যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে ১ জুন (বাংলাদেশ সময় ২ জুন ভোর) শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই টুর্নামেন্টের জন্য ভারতের ঘোষণা করা স্কোয়াডে ব্যাটিং লাইনআপ বেশ শক্তিশালী। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব ও যশস্বী জয়সোয়াল আছেন। বোলিং বিভাগে চার স্পিনার ও তিন পেসার। যুজবেন্দ্র চাহাল, কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেল সামলাবেন ভারতের স্পিন বিভাগ। অর্শদীপ ও সিরাজের সঙ্গে পেস বিভাগে আছেন অভিজ্ঞ যশপ্রীত বুমরা। আর পেস অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন হার্দিক পান্ডিয়া। রিজার্ভ দলেও আছেন দুই পেসার—খলিল আহমেদ ও আবেশ খান।

ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র সঙ্গে বিশেষ আলাপচারিতায় মদন লাল বলেছেন, ‘যশপ্রীত বুমরা বাদে পেস আক্রমণ আমার পছন্দ হয়নি। তেমন ভালো হয়নি। সিরাজ (বিভিন্ন জায়গায়) ভালোই করেছে কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সে অধারাবাহিক। আমার মনে হয়, ভারতের পেস বিভাগে দুর্বলতা আছে।’

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মদন লাল

ভারতের হয়ে ৩৯ টেস্টে ৭১ উইকেট এবং ৬৭ ম্যাচে ৭৩ উইকেট নিয়েছেন মদন লাল। ’৮৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ক্লাইভ লয়েডের সেই মহাপরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১ রানে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আউট করেছিলেন ডেসমন্ড হেইন্স, ভিভ রিচার্ডস ও ল্যারি গোমেজকে।

মদন লাল মনে করেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত উইকেট নেওয়া ও ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সের জন্য বুমরার ওপর অনেক বেশি নির্ভর করবে। তাঁর মতে, আরও একজন পেসার নেওয়া উচিত ছিল ভারতের, ‘শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতানোর জন্য ভালো পেসারের প্রয়োজন হয়। বুমরা উইকেটশিকারি এবং ম্যাচ জেতানো বোলার। দেখা যাক, সিরাজ কেমন পারফর্ম করে। তা না হলে ভারতকে বুমরার ওপর অনেক বেশি নির্ভর করতে হবে। সমস্যা হলো, ভারতের আরেকজন পেসার নেওয়া উচিত ছিল।’

ভারতের হয়ে ১৯৮৫ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী মদন লাল ইতিহাসে তাকাতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘দেখবেন, ভারত তখনই ভালো করেছে, যখন ভালো পেস আক্রমণ ছিল।’

’৮৩ বিশ্বকাপের কথাই ধরুন—কপিল দেব অলরাউন্ডার হলেও বিশেষজ্ঞ পেসার থেকে কম কিছু ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে পেস অলরাউন্ডার ছিলেন মহিন্দর অমরনাথ ও মদন লাল। আর ছিলেন বলবিন্দর সিং সান্ধু—দুই দিকেই সুইং করানোর পাশাপাশি নিচের দিকে ব্যাটিংয়েও বেশ ভালো ছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ফাইনাল জয়ে ভারতের পেস বোলারদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। আগে ব্যাট করে ১৮৩ রানের পুঁজি গড়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪০ রানে অলআউট করেছিল ভারত। মদন লালের পাশাপাশি ৩ উইকেট নিয়েছিলেন অমরনাথ। ২টি উইকেট বলবিন্দর সিংয়ের এবং ১টি করে উইকেট কপিল দেব ও আরেক পেসার রজার বিনির।

মদন লাল বলেছেন, ‘(ভালো পেসার থাকলে) শুধু তারা (ভারত) প্রচুর ম্যাচ জিতেছে। অর্শদীপ কিংবা সিরাজের ব্যাপারে আমি ঠিক নিশ্চিত নই। পান্ডিয়াও তেমন কার্যকর নয়। ম্যানেজমেন্ট তাকে নিয়ে আসলে বাজি ধরেছে। পেস লাইনআপে দুর্বলতা আছে। বুমরা বাদে আমাদের সিরাজ ও অর্শদীপে নজর রাখতে হবে।’ এরপর পুরো বোলিং বিভাগ নিয়েই মদন লাল বলেছেন, ‘বোলিং বিভাগে তাকিয়ে আমি খুব একটা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি না।’

মদন লালের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বোলিং বিভাগে কাকে নিলে ভালো হতো বলে মনে করেন? সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ‘ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞ’ থানগারাসু নটরাজনের কথা বললেন তিনি, ‘আমার সেই সুযোগ থাকলে নটরাজনকে নিতাম। শেষ দিকে সে ভালো বোলার। মায়াঙ্ক যাদব তরুণ হলেও জোরে বল করতে পারে। প্রশ্ন হলো, সে এটা (জোরে বল করা) চালিয়ে যেতে পারবে কি না। কিন্তু নটরাজন প্রতি ম্যাচেই ভালো করছে।’