আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসটি ঢুকে গেছে ক্রিকেট লোকগাথায়। এত পরে নেমে দ্বিশতক করা যায়, সেটি ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো দেখিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলার অবশ্য ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস থেকে আরেকটি অনুপ্রেরণাও পেয়েছেন। পা না নড়িয়েও যে চার, ছক্কা মারা যায়, ওই ইনিংসে সেটিও তো দেখিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল!
১২৬ রান করার পর থেকেই ম্যাক্সওয়েলের ‘ক্র্যাম্প’ (মাংশপেশিতে টান) স্পষ্ট হয়ে ওঠে মুম্বাইয়ের ওই ম্যাচে, ১৪৭ রানে তো উঠেই যেতে গিয়েছিলেন! এরপরও খেলা চালিয়ে গেছেন, দৃশ্যত পা না নড়িয়েই মেরেছেন চার, ছক্কা। ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ছয় বা এর নিচে নেমে দ্বিশতক করেছেন অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস খেলা ম্যাক্সওয়েল।
ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ৬ নম্বরেই খেলেছেন মিলার, স্বাভাবিকভাবেই সেখানে খুব বেশি ওভার খেলার মতো পান না তাঁরা। এ পজিশনে নেমে মিলারের সর্বোচ্চ ইনিংসটি অপরাজিত ১১৮ রানের। ২০১৬ সালে ডারবানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সে ইনিংস মিলার খেলেছিলেন মাত্র ৭৯ বলে। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৭২ রানের লক্ষ্য সেদিন ছুঁয়ে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
আগামীকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে মিলারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ৬ নম্বরে নেমে ২০০ রানের ইনিংস খেলা ম্যাক্সওয়েল তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন কি না। মিলারের উত্তর, ‘অবশ্যই। এমন একটা ইনিংস দেখা বিশেষ কিছু। সে একজন এক্স ফ্যাক্টর, ম্যাচজয়ী। পা না নড়িয়ে চার ও ছক্কা মারা দেখাটাও অনুপ্রেরণার ছিল। এমন একটা ম্যাচে, যেখানে তাদের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গিয়েছিল।’
মিলার এরপর যোগ করেন, ‘অবশ্য আমাদের দলেও আমরা এমন দেখেছি। ছিটকে পড়ার পরও আমরা লক্ষ্য ছুঁয়েছি, বিশেষ কিছু করেছি। তবে হ্যাঁ, ক্রিকেট যেখানে যাচ্ছে, আপনি সামনে সবকিছুই বিশ্বাস করবেন। আপনি শুধু বল খেলবেন, ওভার কাটাবেন, এরপর দেখবেন কী ঘটে। আপনি কখনোই জানবেন না কী সম্ভব। ফলে বিশ্বাসটা রাখতে হবে পুরোটা সময়।’
দারুণ ফর্মে থাকা মিলার কথা বলেছেন আফগানিস্তানকে নিয়েও। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে এবার আফগানরা; অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও জয়টা চলে এসেছিল প্রায় হাতের মুঠোয়। আহমেদাবাদে আগামীকালের ম্যাচটি অবশ্য আফগানিস্তানকে জিততেই হবে সেমিফাইনালে যেতে, আবার শুধু জেতা যথেষ্ট না-ও হতে পারে।
মিলার অবশ্য আফগানদের নিয়ে মুগ্ধ, ‘হ্যাঁ, তাদের খেলা দেখে সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে। তাদের আত্মবিশ্বাস যে বাড়ছে, সেটি নিশ্চিত। তারা দেখিয়েছে, তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারে। এ বিশ্বকাপে তারা অনেক ভালো করেছে, বড় দলকে হারিয়েছে।’
সেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কিছুটা প্রস্তুতি ম্যাচের মতোই। আগে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে প্রোটিয়াদের, সেমিফাইনালে যে তারা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলবে, নিশ্চিত সেটিও। এরপরও এ ম্যাচের গুরুত্ব কমছে না মিলারের কাছে, ‘আমরা বিশ্বকাপে ব্যাপারটি নিয়ে সচেতন, সহজ ম্যাচ বলে কিছু নেই। ফলে যে ম্যাচ ও যাদের বিপক্ষেই খেলি না কেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালো হতে হবে। আফগানিস্তান তাদের স্পিনার, টপ অর্ডারের ব্যাটারদের নিয়ে যেভাবে এগোচ্ছে, অনেক ভালো করেছে। তাদের উদ্বোধনী জুটি অনেক ভালো। এরপর ইনিংসজুড়েই অন্য ব্যাটাররা অবদান রাখে।’
আফগানিস্তানের পারফরম্যান্স বিশ্বকাপের জন্য ভালো, সেটিও মনে করেন মিলার, ‘তারা অনেক কঠিন দল, এ কারণেই তাদের সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ আছে। এটি দেখেও ভালো লাগে, মানে বিশ্বকাপের আনন্দ এখানেই। আপনি বিভিন্ন দলকে ভালো করতে দেখবেন। এমন দল, যাদের লোকে সহজে এমন ধাপ পেরোতে দেখবে বলে মনে করে না। এটা আসলে ক্রিকেটের জন্য ভালো।’