বিশ্বকাপের ঠিক আগে প্রায় আড়াই বছর পর নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে ওয়ানডেতে ফিরেছিলেন সৌম্য সরকার। প্রত্যাবর্তনের সিরিজে এক ম্যাচ খেলে আউট হয়েছিলেন কোনো রান না করেই। সবশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কবে খেলেছেন, তা খুঁজতে যেতে হবে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেই সৌম্যকে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে ফেরানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সৌম্যকে ফেরানোর ব্যাপারে নিউজিল্যান্ডে তাঁর রেকর্ড বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। জাতীয় লিগে সৌম্যর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সও নির্বাচকদের চোখে পড়েছে। তবে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের না থাকাও সৌম্যকে ফেরানোর বড় কারণ।
আজ শুক্রবার আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশারও সে কথাই বললেন। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এবার আসলে আমাদের কিছু জোরপূর্বক পরিবর্তন করতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ নেই, সাকিব আল হাসানকে পাওয়া যাচ্ছে না, আমাদের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সংখ্যা কমে গেছে। নিউজিল্যান্ড সফর আমাদের জন্য সব সময়ই একটু কঠিন হয়। সেখানে আমরা সাধারণত অনেক স্ট্রাগল করি। এখন নতুন কাউকে দেখার থেকে আমাদের মনে হয়েছে, এমন কাউকে নিই, যে এই কন্ডিশনে আগে খেলেছে।’
হাবিবুল বাশার আরও যোগ করেন, পাশাপাশি ওর একটু অলরাউন্ড সামর্থ্যও আছে। এই ভাবনা থেকে তাঁকে নেওয়া হয়েছে। আর এবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুব ভালো পারফর্ম যে করেছে, তা নয়। তবে ৪৮ গড় খুব খারাপ নয়, যদিও ওর কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা থাকে। চিন্তা করা হয়েছে যে যেহেতু এই কন্ডিশনে আগে খেলেছে ও পারফর্ম করেছে, অলরাউন্ড সামর্থ্যও আছে, সব মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডে ২১ ইনিংসে ৩টি অর্ধশতকের সঙ্গে ১টি শতক আছে সৌম্যর। জাতীয় লিগে ৬ ম্যাচের ১১ ইনিংসে ব্যাট করে ৪ অর্ধশতকে সৌম্যর রান ৪৩৬, উইকেট নিয়েছেন ১৭টি। সৌম্য প্রসঙ্গে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে হাবিবুল বলেন, ‘যদি কেউ পারফর্ম করে, তাহলে তাকে কিন্তু দলে নেওয়া হয়। তবে আমরা যখন দল করি, কিছু ব্যাপার বিবেচনায় আনি অবশ্যই। শুধু পারফরম্যান্স নয়, পারিপার্শ্বিকতা দেখতে হয় আমাদের। অতীত ও ভবিষ্যৎ ভাবতে হয়। সে ক্ষেত্রে যারা একটু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, তারা মোটামুটি পারফর্ম করলে অন্যদের সুযোগ বেশি থাকে। কারণ, আমাদের কাছে মনে হয়, একদম নতুন কাউকে নেওয়ার চেয়ে… সৌম্য একদমই খারাপ ফর্মে নেই। এবার প্রথম শ্রেণিতে ভালোই ব্যাটিং করেছে।’
সৌম্যকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ভূমিকা ছিল কি না, সে প্রশ্নও হয়েছে। হাবিবুল উত্তরে বলেন, ‘আমার মনে হয়, কোচের ইনপুট নিয়ে খুব বেশি আলাপ হওয়া উচিত নয়। দল যখন হয়, সবার ইনপুট নিয়েই করা হয়। সবাই যখন একমত হন, তখনই দলটা গড়া হয়। আমাদেরও কিছু পছন্দ থাকে, কোচেরও থাকে। এমন নয় যে একজন ক্রিকেটার শুধু একজনের পছন্দেই দলে আসে।’
নিউজিল্যান্ড সফরের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে নাসুম আহমেদকে। ওয়ানডেতে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে রাখা হয়েছে রাকিবুল হাসানকে, টি-টোয়েন্টিতে তানভীর ইসলাম। নতুন দুই বাঁহাতি স্পিনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরীক্ষায় কেমন করেন, সেটি দেখতে চাইছেন নির্বাচকেরা। হাবিবুলও বলেন, ‘নাসুম তো সাদা বলে নিয়মিত খেলছিল। তাকে আমরা দেখেছি অনেক। নাসুম যে খুব খারাপ করেছে, তা বলব না। তবে ওর কাছ থেকে আমরা যেটা চাচ্ছিলাম, উইকেট শিকার করা, সেটা সাম্প্রতিক সময়ে পাচ্ছিলাম না। হ্যাঁ, ওকে একটা ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছিল, আক্রমণ করার চেয়ে একটু রান বাঁচানো।’
নির্বাচকেরা এখন আক্রমণাত্মক স্পিনার চান, যাঁরা উইকেট নিতে পারেন। ‘এ রকম একজনকেও আমাদের দরকার, যে উইকেট নিতে পারে। এখন যে ফরম্যাট, মাঝখানে উইকেট নিতে না পারলে রান বাঁচানো কঠিন হয়। ৩০০–এর বেশি রান হয়েই যায়। এ জন্যই মনে হয়েছে, এমন একজনকে দেখে চেষ্টা করি, যে মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট নিতে পারে’, বলেন হাবিবুল।
লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকেও খেলিয়ে দেখতে চাওয়ার কথা জানিয়েছেন হাবিবুল, ‘আমরা এখন চাচ্ছি একজন আক্রমণাত্মক বোলার, সত্যি বলতে। যে কি না আমাদের উইকেট এনে দেবে। দেখুন আমরা রিশাদকেও নিয়েছি। কারণ, সবাই অনুভব করছে যে একজন রিস্ট স্পিনার আমাদের গড়ে তোলা দরকার।’