ভারত–পাকিস্তান দ্বৈরথ মানেই আগুনে উত্তাপ। এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও এই দুই প্রতিবেশী দেশের লড়াই ঘিরে জমে উঠেছিল রোমাঞ্চ। মাঠের খেলা শেষ পর্যন্ত একপেশে হলেও মাঠের বাইরে দুই দেশের লড়াইটা ছিল দেখার মতো।
তবে এমন উত্তাপের মধ্যেও যে খানিকটা ব্যতিক্রম ছিল ‘এ স্পোর্টস’ নামের পাকিস্তানি টেলিভিশন চ্যানেলের একটি টক শো। পাকিস্তান ক্রিকেটের চার পরিচিত মুখ ওয়াসিম আকরাম, মঈন খান, মিসবাহ–উল–হক ও শোয়েব মালিক ছিলেন ‘দ্য প্যাভিলিয়ন’ নামের এই টক শোর নিয়মিত আলোচক।
এই অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপের শুরু থেকে ম্যাচের আগে পরে খেলা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা। তবে তাঁদের সেই আলোচনা সব সময় মাঠের খেলাতেই আটকে থাকেনি।
ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা, মজার কিছু মন্তব্যসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্বের ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণও হাজির করেছেন তাঁরা। বিশেষ করে আয়োজক ভারতের ওপর ওঠা অনেক অভিযোগের জবাব নিজেরাই দিয়েছেন এই চারজন। এমনকি নিজ দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের সমালোচনা করতেও পিছপা হননি আকরাম–মঈনরা।
ভারত–পাকিস্তানের মধ্যকার বিভেদমূলক সম্পর্কের পরও আকরামদের নিরপেক্ষ অবস্থান মন জয় করেছে ভারতীয়দেরও। বেঙ্গালুরুর শুবানন নাইর নামে এক ক্রিকেটপ্রেমী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘তাঁরা অনেক ধারালো ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ হাজির করেন।’ তিনি এই অনু্ষ্ঠানটি নিয়মিত দেখেন উল্লেখ করে আরও জানান, ‘কোন দল কোথায় ভুল করছে, তা নিয়ে তারা আলোচনা করে। যেখানে তারা নিজেদের দল নিয়েও কথা বলে। পাশাপাশি যারা ভালো করে, তাদের প্রশংসা করতেও দেখা যায় তাদের।’
অনুষ্ঠানের আলোচক ও কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরামকেই অসংগতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব হতে দেখা গেছে এই অনুষ্ঠানে। নিজেদের আলোচনার কৌশল নিয়ে ওয়াসিম এএফপিকে বলেছেন, ‘কালোকে আমরা কালো বলি এবং সাদাকে সাদা। যা বিশ্বাস করি, তাই বলি কিন্তু এখানে ব্যক্তিগত কিছু নেই। সবকিছুই পেশাদারত্ব এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকেই বলা হয়।’
২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু হয় এই আয়োজন। এরপর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় অনুষ্ঠানটি। তবে এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপে জনপ্রিয়তা যেন সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কেন এত জনপ্রিয়, জানতে চাইলে আকরাম বলেছেন, ‘এখানে আমরা একসঙ্গে বসি, একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করি এবং অনেক মজা করি। আমার ধারণা, মানুষও সেটা উপভোগ করে।’
নিজ দেশ ছাড়িয়ে অন্য দেশেও জনপ্রিয় হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আকরামের উত্তর, ‘আমাদের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা আছে। আমরা অনেক কৌতুক করি। যদি আমরা মানুষকে দিন শেষে এটা বলতে পারি যে এটা শুধুই একটা খেলা, তবে সেটা দারুণ ব্যাপার। আপনি ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশি বা শ্রীলঙ্কা হন—সবারই দেশপ্রেম আছে। সেটা বাইরে রেখে ভালো ব্যাপারগুলো নিয়ে বলুন। একে অপরের প্রতি ভালো হোন এবং একে অপরকে শ্রদ্ধা করুন। যদি আমাদের অনুষ্ঠান সেই প্রভাব রাখতে পারে, তবে সেটি দারুণ কিছু হবে।’
আকরামদের এই শো এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে, অভিষেক মুখার্জি নামের এক ভারতীয় দর্শক লিখেছেন, ‘এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে সবচেয়ে বেশি মনে রাখা হবে এ স্পোর্টসের দ্য প্যাভিলিয়ন নামের অনুষ্ঠানটির জন্য।’
এ ছাড়া অনেক ভারতীয় দর্শক টুইটারে অনুষ্ঠানের ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুষ্ঠানটি নিয়ে নিজেদের ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন। জবাবে অনেক পাকিস্তানিকেও ফিরতি ভালোবাসার কথা জানাতে দেখা গেছে।
এর আগে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার হাসান রাজা ভারতের বিপক্ষে বলে কারসাজির অভিযোগ আনলে অনুষ্ঠানে এর জবাব দেন আকরাম, ‘আমি কয়েক দিন ধরে এটা নিয়ে পড়েছি। যা খেয়ে এসব বলা হচ্ছে, সেটা আমিও খেতে চাই। তাদের মাথা ঠিক নেই। নিজেদের তো তারা অপমান করছেই এবং গোটা দুনিয়ার সামনে আমাদেরও করাচ্ছে।’ এ সময় বল কীভাবে বাছাই করা হয়, সেই ব্যাখ্যাও দেন ওয়াসিম আকরাম।
টসে ভারতের কারসাজি নিয়ে ওঠা বিতর্ক সম্পর্কে আকরাম বলেছিলেন, ‘কয়েন নিক্ষেপের পর কোন জায়গায় পড়বে, এটা কে নির্ধারণ করে? এ ক্ষেত্রে যেটা হয় স্পনসরশিপের জন্য। (এটা নিয়ে) আমি বিব্রতবোধ করছি। এমনকি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করতে চাইছি না।’ আকরামের মতে, শোয়েব মালিকের মন্তব্যও একই, ‘এটা নিয়ে আলোচনাই করা উচিত নয়।’