আজ বাবর আজম কী করছেন?
১৫ অক্টোবর, বাবরের জন্মদিন। দিনটি স্বাভাবিকভাবেই বাবরের জন্য বিশেষ কিছু। তবে এই ১৫ অক্টোবর সম্ভবত বাবর আজমের সবচেয়ে দুঃখের জন্মদিন! এই দিনেই যে বাদ পড়েছেন পাকিস্তান দল থেকে। এই জন্মদিন তাই বাবরের জন্য উদ্যাপন করার উপলক্ষ হওয়ার কথা নয়।
সতীর্থরা অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তার বন্যা বইয়ে দিয়েছেন, যেন কিছুই হয়নি! মুলতানের গ্যালারিতে ভক্তরাও এসেছেন বাবরের জন্মদিনের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে। এসব কি বাবর আদৌ দেখেছেন?
এক বছর আগেও কথা হচ্ছিল এ রকম যে বাবরের পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার সামর্থ্য আছে। সেই বাবরই বাদ পড়বেন, এটা কি সহজে হজম করা যায়! হজম সহজ না হলেও বাবরকে এটা এখন মানতেই হচ্ছে। কারণটা টেস্টে তাঁর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। ২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৯ টেস্টের ১৭ ইনিংস মিলিয়ে বাবর রান করেছেন ৩৫২, গড় মাত্র ২০.৭০।
সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে বাবরের দুর্দশার চিত্র ফুটিয়ে তোলে। তবে এটাও সত্য, এই টেস্টগুলো বাবর ধারাবাহিকভাবে খেলেননি। এই যেমন চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার পর বাবর পরের টেস্ট খেলেছেন আগস্টে। মানে ঠিকভাবে টেস্ট আবহের মধ্যে ছিলেন কম সময়েই। এর মধ্যে বেশির ভাগ সময়েই টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। যেখানে অধিনায়কত্ব নিয়ে বেশ চাপে রাখা হয়েছিল তাঁকে।
কারণ যা–ই হোক না কেন, বড় ক্রিকেটাররা দল থেকে বাদ পড়লে অহমে তো লাগেই! ২০১৯ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টেস্টে বাবরের গড় প্রায় ৬০। এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাবরের গড় ৫০-এর বেশি, ৫২.৫০।
ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাবর ব্যাটিং করেছেন ৪৮ গড়ে, শ্রীলঙ্কার মাটিতে তো প্রায় ৭০ আর দেশের মাটিতে বাবর ব্যাটিং করেন ৭৫ গড়ে। মানুষ যে বলতে শুরু করেছিল, বাবরের পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার সামর্থ্য আছে, সে তো এই পরিসংখ্যানের কারণেই।
টানা তিন বছর টেস্টে কী অসাধারণ সময়ই না কেটেছে বাবরের। সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমী থেকে ক্রিকেট পণ্ডিত—এই তিন বছর পাকিস্তানে বাবর ছিলেন চোখের মণি হয়ে! সেই বাবরকেই কি না টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার মতো কঠিন সময় দেখত হলো। মধ্যে মাত্র ৯টি টেস্টই বাজে কেটেছে তাঁর। এই বাজে সময়ের পরও টেস্টে বাবরের গড় ৪৩.৯২।
এই গড়ের যেকোনো ব্যাটসম্যানকেই তো ভালো ব্যাটসম্যান বলে চালিয়ে দেওয়া যায়।
ব্যাটসম্যান হিসেবে বাবর কেমন, সেই প্রসঙ্গে যখন এসেছে, তখন বাবরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারও টানতে হয়। ওয়ানডেতে ৫০০০ রান করা দ্রুততম ব্যাটসম্যান তিনি।
বাবরই প্রথম ব্যাটসম্যান, যিনি ১০০ (৯৭) ইনিংস খেলার আগেই স্পর্শ করেছেন ৫০০০ রান। বাবর ভেঙেছিলেন প্রোটিয়া কিংবদন্তি হাশিম আমলার রেকর্ড। ৫০০০ রান করতে আমলার লেগেছিল ১০১ ইনিংস। এই তালিকায় বিরাট কোহলি ও ভিভ রিচার্ডসের মতো নামগুলোও বাবরের নিচে।
৫০০০ রানের মাইলফলক ছুঁতে ভিভ রিচার্ডস ও বিরাট কোহলির দুজনেরই লেগেছে ১১৪টি করে ইনিংস। টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৩৯টি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন বাবর। আছে ৩টি সেঞ্চুরি, ৩৬টি ফিফটি। তাঁর সমান ৩৯টি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস আছে শুধু কোহলির।
কী বুঝলেন? বাবরের সমস্যাটা আসলে সামর্থ্যে নয়, সময়ের। সময়টা ভালো যাচ্ছে না তাঁর। এবারের জন্মদিনটা এই খারাপ সময়ের মধ্যেই পড়েছে বাবরের। আজ থেকে মুলতানে শুরু হয়েছে পাকিস্তান–ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট।
ঘরে বসে কি বাবর এই টেস্টে তাঁর জায়গায় ৪ নম্বরে ব্যাটিং করতে নামা কামরান গুলামের ব্যাটিং দেখেছেন? টেস্ট অভিষেকেই যিনি পেয়ে গেছেন সেঞ্চুরি।
বাবর খেলা দেখছেন তো! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর আগে জন্মদিনে কখনো ব্যাটিং করেননি বাবর, মুলতান টেস্টে থাকলে আজই তা প্রথম হতো। এমন সুযোগ হাত ছাড়া হলে কার না মন খারাপ হয়!
এমনও তো হতে পারে, সেই মন খারাপের কারণে টেলিভিশনের সামনেই বসেননি, তাই পাকিস্তানের খেলাও দেখা হয়নি তাঁর। হয়তো ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন দিনটা!