উগান্ডাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কত ধরনের ‘ট্রল’ হয়। পূর্ব আফ্রিকার দেশটি যেন হাস্যরসের বিশেষ উপাদান। বাংলাদেশের মানুষ তো কথায় কথায় উগান্ডার তুলনা টানে। সেই উগান্ডাই টেস্ট খেলুড়ে জিম্বাবুয়ে ও এক সময়কার চমক-জাগানিয়া দল কেনিয়াকে হারিয়ে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। এতে বাংলাদেশের একটা উপকারও হয়েছে।
কীভাবে? এবারের টি-টেয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলা ২০ দলের অধিনায়কদের মধ্যে ব্যাট হাতে সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেটের তালিকায় ১৯ নম্বরে আছেন বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ৩ সংস্করণেই বাংলাদেশের স্থায়ী অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া নাজমুলের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রেট ১১১.০৬। তাঁর নিচে আছেন শুধু উগান্ডার অধিনায়ক ব্রায়ান মাসাবা। তাঁর স্ট্রাইক রেট ১০৭.৯৪। এ তালিকায় সবার ওপরে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৫০.৬৭।
আফ্রিকান অঞ্চলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে জিম্বাবুয়েকেই সবাই ফেবারিট ভেবেছিলেন। কিন্তু গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাছাইয়ের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয় উগান্ডা। এরপর তারা প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বেও জায়গা করে নেয়।
যদি উগান্ডার জায়গায় জিম্বাবুয়ে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করত, তাহলে অধিনায়কদের মধ্যে স্ট্রাইক রেটে তলানিতে পড়ে থাকতেন নাজমুল। কারণ, জিম্বাবুয়ের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সিকান্দার রাজার স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৭৮, যা নাজমুলের চেয়ে অনেক বেশি।
তবে উগান্ডার অধিনায়ক মাসাবা মূলত একজন বোলার। কখনো ফাস্ট মিডিয়াম, কখনো লেগ ব্রেক বল করে থাকেন তিনি। ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া একমাত্র বোলার। অন্যদের কেউ শুধু ব্যাটসম্যান, কেউ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান, আবার কেউ অলরাউন্ডার। তাই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুলেরই স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে কম।
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অধিনায়কদের মধ্যে স্ট্রাইক রেটে মাসাবা সবার নিচে থাকলে কী হবে, অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতায় পাকিস্তানের বাবর আজমের সঙ্গে তিনিই যৌথভাবে শীর্ষে। বাবর-মাসাবা দুজনেরই নেতৃত্বে পাকিস্তান ও উগান্ডা এখন পর্যন্ত সমান ৪৪টি করে ম্যাচ জিতেছে।
২০ দলের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩টি ক্রিকেট বোর্ড টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে। বাকি ৭টি বোর্ড এখনো স্কোয়াড ঘোষণা না করলেও ধারণা করা হচ্ছে, সর্বশেষ বা চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজ যাঁরা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, তাঁরা বিশ্বকাপেও অধিনায়কত্ব করবেন। সেটি বিবেচনায় নিয়েই স্ট্রাইক রেট অনুযায়ী অধিনায়কদের ক্রমান্বয়ে রাখা হয়েছে।
২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে ১৮০ রান করে নাজমুলই ছিলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। কিন্তু স্ট্রাইক রেট খুব একটা সুবিধার ছিল না—১১৪.৬৪। এবার আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে নাজমুলের স্ট্রাইক রেট আরও কম—১০৫.৭১। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজে আরও বাজে—৯৪.৮৭।
নাজমুলের নেতৃত্বে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটি জিতে বাংলাদেশ সিরিজ জয়ের পথে থাকলেও ব্যাটিংয়ে তিনি হতাশ করেছেন। শুক্রবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ২৪ বলে ২১, রোববার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৫ বলে ১৬। দুই ম্যাচ মিলিয়ে ৩৯ বল খেলে চার-ছক্কা মেরেছেন মাত্র ১টি করে। আধুনিক যুগে অনেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ওয়ানডে স্ট্রাইক যেখানে ১০০-এর বেশি, সেখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নাজমুলের ৯৪.৮৭ স্ট্রাইক রেট বড্ড বেমানান।
১২০.৩৪ স্ট্রাইক রেট নিয়ে এ তালিকায় নাজমুলের ঠিক ওপরে, অর্থাৎ ১৮ নম্বরে আছেন পাপুয়া নিউগিনির অধিনায়ক আসাদ ভালা। শীর্ষে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক মার্করামের ১৫০.৬৭ স্ট্রাইক রেটের কথা আগেই বলা হয়েছে।
নাজমুল যদি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরের ৩ ম্যাচে এবং এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে মার্করামের ক্যারিয়ারের স্ট্রাইক রেটের সমান স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিংও করেন (ধরা যাক, ৬ ম্যাচে ১৩৩ বলে ২০০ রান), তবু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অধিনায়কদের সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের তালিকায় তিনি ১৯ নম্বরেই থাকবেন।
তাই রসিকতা করে হলেও বলতেই হয়, ভাগ্যিস উগান্ডা ছিল! নয়তো বাংলাদেশের অধিনায়ককে তলানিতেই পড়ে থাকতে হতো।