‘একটু বদলে দেখি, যদি ভাগ্য বদলায়!’ টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কথাটা বলছিলেন অ্যান্ড্রু বলবার্নি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচেই টসে জিতেছেন আইরিশ অধিনায়ক। প্রথম দুই ম্যাচে তিনি বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান এবং দুটি ম্যাচেই আইরিশদের রানের বন্যায় ভাসায় বাংলাদেশ।
সে অভিজ্ঞতা থেকেই কিনা আজ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টসে জিতে আগে ব্যাটিং নিল আয়ারল্যান্ড। কিন্তু বলবার্নি যখন সিদ্ধান্তটা নিলেন, সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের আকাশ তখন মেঘলা। সকালে একদফা বৃষ্টিও হয়েছে। সিলেটের আকাশ কেঁদেছে ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেও। কন্ডিশন বলছিল, দিনটা ফাস্ট বোলারদেরই হতে পারে। আগে ব্যাটিংয়ের জন্য কিনা এমন দিনই বেছে নিলেন আইরিশ অধিনায়ক!
এই সুযোগে হাসান মাহমুদ, ইবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদ মিলে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার আগেই আইরিশদের শীর্ষ ছয় ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠান। শেষ পর্যন্ত ১০১ রানে থামে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস। ক্যারিয়ারে হাসান মাহমুদের প্রথম পাঁচ উইকেটসহ সব উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা, যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে এক নতুন ঘটনা।
আইরিশ ব্যাটিংয়ে ফাটল ধরানোর শুরু হাসানের নতুন বলের স্পেলে। সুইং করিয়েছেন, পেয়েছেন সিম মুভমেন্টও। তাঁর প্রথম শিকার ওপেনার স্টিফেন ডোহেনি। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বলে ব্যাট ছুঁইয়ে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। ২১ বলে ৮ রানের দৃষ্টিকটু ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে তাতে।
হাসানের আগুনে বোলিংয়ের সেটি ছিল শুরু মাত্র। ইনিংসের নবম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। এবার শিকার পল স্টার্লিং (৭) ও হ্যারি টেক্টর (০)। দুজনকেই গুড লেংথ থেকে ভেতরে আসা বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন হাসান। পাওয়ায় প্লের শেষ ওভারে তাসকিনও যোগ দেন উইকেট শিকারে। আইরিশ অধিনায়ক বলবার্নি (৬) লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাক ফুট ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড।
আইরিশ ব্যাটিংয়ে এর পরের ধাক্কাটা দিয়েছেন আরেক পেসার ইবাদত হোসেন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’তেই মাত্র ২৭ রানে ৪ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে যখন আইরিশরা ধুঁকছিল, তখন এক প্রান্ত থেকে ইবাদতকে এনে আরেক প্রান্ত থেকে নাসুম আহমেদের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
কিন্তু ৩ ওভারের বাঁহাতি স্পিন ও একই প্রান্ত থেকে দলে ফেরা মেহেদী হাসান মিরাজের আরও ১ ওভারের অফ স্পিনের পরই বুঝা যাচ্ছিল, দিনটা আসলেই গতিময় বোলিংয়ের।
এমন দিনে স্পিনারদের হাতে আর বল দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করেননি তামিম। সাকিব আল হাসানকে তাই বোলিংই করতে হলো না। বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে অলআউট করেছে, এমন ম্যাচগুলোর মধ্যে এ নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার বোলিং করেননি ২৩১টি ওয়ানডে খেলা সাকিব।
দিনটা যে পেসারদেরই ছিল, ইবাদত ও তাসকিন সেটি প্রমাণ করেছেন চোখের পলকে আইরিশদের আরও চার উইকেট নিয়ে। ইবাদত তো পরপর দুই বলে লরকান টাকার ও জর্জ ডকরেলের উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকেরও সম্ভাবনা জাগান। ইনিংসের ১৯তম ওভারে করা টাকারের আউটটা তো চোখে লেগে থাকার মতো। ওয়াইড অব দ্য ক্রিজ থেকে অ্যাংগেল সৃষ্টি করে ছোড়া বলটি অনেকটা সুইং করে সরাসরি আঘাত করে টাকারের স্পাইকে। এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত দিতে এতটুকু সময় নিতে হয়নি আম্পায়ারকেও। আর ডকরেলের তো অফ স্টাম্পই উড়িয়ে ফেলেন ‘সিলেট-রকেট’ ইবাদত।
ইবাদতের সেই ওভার শেষে আয়ারল্যান্ডের রান ১৯ ওভারে ৬৮/৬। এরপর অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন ও মার্ক এডেয়ারকে আউট করে আইরিশ ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডই ভেঙে দেন তাসকিন। আইরিশদের দ্রুত অলআউট করার পথটা তখন আরও পরিষ্কার।
কাজটা শেষ করতে অধিনায়ক তামিম ফিরিয়ে আনেন নতুন বলে আগুনে বোলিং করা হাসানকে। ৩৬ রানের ইনিংসে বলতে গেলে একাই লড়াই করে যাওয়া কার্টিস ক্যাম্ফারকে বাউন্সারে ক্যাচ বানিয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন হাসান।
ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট থেকে তখন এক উইকেট দূরে এই তরুণ। ইনিংসের ২৯তম ওভারে গ্রাহাম হিউমকে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা ফুল লেংথের বলে এলবিডব্লু করে সে অপূর্ণতাও দূর করেন ২৩ বছর বয়সী পেসার। আইরিশ ইনিংসও থামে সেখানেই।
আইরিশদের মাত্র ১০১ রানে অলআউটের কৃতিত্বটা মূলত তিন পেস বোলারেরই। হাসান ৮.১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৫ উইকেট। আয়ারল্যান্ডের ইনিংস শেষে মাঠ ছাড়লেন স্মারক হয়ে যাওয়া বলটা উঁচিয়ে ধরে। তাসকিন তাঁর ১০ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ইবাদতের শিকার ৬ ওভারে ২৯ রানে ২ উইকেট।