অভিষিক্ত ওপেনার জাকির হাসানের দারুণ সেঞ্চুরির পর চট্টগ্রাম টেস্টে ভারতকে ঝুলিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। শেষ দিন ভারতের প্রয়োজন ৪ উইকেট, বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন আরও ২৪১ রান।
আজ টেস্টের চতুর্থ দিনের সকালটা বাংলাদেশের জন্য ছিল দুর্দান্ত। তবে পরের দুই সেশনে ৬ উইকেট হারিয়ে শঙ্কা জাগে এক দিন বাকি থাকতেই ম্যাচ হারার। সেটি অবশ্য হতে দেননি সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেট জুটি নিশ্চিত করেছে, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট গড়াচ্ছে পঞ্চম দিনে। শেষ সেশনে ১৪ ওভার ব্যাটিং করেছেন দুজন, ৬৯ বলে ৪০ রানে অপরাজিত সাকিব। মিরাজ ব্যাটিং করছেন ৯ রানে।
বিনা উইকেটে ৪২ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করা বাংলাদেশ প্রথম সেশনে কাটিয়ে দেয় উইকেট না হারিয়েই, তোলে ৭৭ রান। এ টেস্টে সেটিই প্রথম উইকেটশূন্য সেশন। প্রথম সেশনে ফিফটি পান দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন ও জাকির হাসান, গড়েন শত রানের জুটি। বছরের শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পর নাজমুলের প্রথম ফিফটি এটি, মাঝে খেলেছেন আরও ১৫ ইনিংস।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর পঞ্চম ওভারে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে নাজমুলের। উমেশ যাদবের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে উদ্দেশ্যহীন শট খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। স্লিপে বিরাট কোহলির হাত থেকে অবশ্য বেরিয়ে গিয়েছিল ক্যাচটি, তবে তৎপর ছিলেন উইকেটকিপার ঋষভ পন্ত। পেছন ফিরে দুবারের চেষ্টায় যিনি সম্পন্ন করেন ক্যাচ। জাকিরের সঙ্গে নাজমুলের ওপেনিং জুটি থামে ১২৪ রানেই। এ বছর ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের মাত্র দ্বিতীয় ১০০ রানের জুটি এটি, চতুর্থ ইনিংসেও বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়।
ইয়াসির আলী বোল্ড হন ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো, এবার অক্ষরের লাইন ধরে রাখা বলটি ফাঁকি দেয় তাঁর রক্ষণ। লিটন দাস শুরুতে ছিলেন অতি সতর্ক, এরপর স্পিনে হয়ে পড়েছিলেন অতি-উৎসাহী। ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছিলেন, তবে কাজে লাগাতে পারেননি। কুলদীপকে নিয়ন্ত্রণ ছাড়া তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ সহ-অধিনায়ক, ৫৯ বলে ১৯ রান করে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি উইকেট চাপ বাড়ায় জাকিরের ওপর। তবে ২৪ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান পরিচয় দেন দারুণ টেম্পারমেন্টের। তাঁর রক্ষণ দারুণ ছিল, সুযোগ পেলে করেছেন আক্রমণও। ১৭ রানে অপরাজিত থেকে চতুর্থ দিন শুরু করেছিলেন, ফিফটি পান প্রথম সেশনেই। চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান অপরাজিত ছিলেন ৮২ রানে। কুলদীপ যাদবকে লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে নব্বই পেরিয়ে যান জাকির। এরপর তিন অঙ্কেও পৌঁছান বাউন্ডারি মেরেই।
আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আবুল হাসানের পর অভিষেকে সেঞ্চুরি করা মাত্র চতুর্থ বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান জাকির, চতুর্থ ইনিংসে প্রথম। টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে ওপেনার হিসেবে ইতিহাসেই মাত্র দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান হলেন তিনি, যেকোনো পজিশনে খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে নবম। সেঞ্চুরির পর অবশ্য কোনো রান যোগ করতে পারেননি। অশ্বিনের বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডের পর ধরা পড়েন স্লিপে, ২২৪ বলে ১০০ রানেই থামে তাঁর ইনিংস।
নামার পর অবশ্য প্রতি-আক্রমণের ইঙ্গিত দেন সাকিব, অক্ষরকে চার মারার পরের বলেই মারেন ছক্কা। তাঁর বিপক্ষে রিভিউও নেয় ভারত, তবে ইনসাইড-এজ হওয়াতে বেঁচে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৮৫তম ওভারে দ্বিতীয় নতুন বল নেয় ভারত, চিত্রটাও বদলে যায় এরপর।
৮৮তম ওভারে জোড়া আঘাত করেন অক্ষর। তীক্ষ্ণ টার্নে প্রথমে বোল্ড হন মুশফিক, এরপর স্টাম্পিং হন নুরুল। চট্টগ্রাম টেস্ট আজই শেষ হয়ে যাবে, এমন আশঙ্কা জোরালই হয় তখন। তবে সাকিব-মিরাজের জুটি আর ভাঙতে পারেনি ভারত।
একসময় অর্থোডক্স স্পিনার অক্ষরকে খেলবেন সাকিব, আর রিস্ট স্পিনার কুলদীপকে মিরাজ—এমন পরিকল্পনাও দেখা যায়। অক্ষরের বলে সিঙ্গেল নাকচ করেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নই থাকেন দুজন।