ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা বিনিময়
ম্যাচ শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা বিনিময়

ব্যাটিংয়ের পর বোলিং দাপটে বাংলাদেশের রেকর্ড জয়

‘ইবাদত!’ ‘বাংলাদেশ!’, ‘ইবাদত!’ ‘বাংলাদেশ!’

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন দর্শকেরা। এই মাত্রই সিলেটের ঘরের ছেলে ইবাদত হোসেন উপড়ে ফেললেন আয়ারল্যান্ডের জর্জ ডকরেলের স্টাম্প। পশ্চিম গ্যালারির ওপরের ডিজিটাল স্কোরবোর্ডে তখন বড় করে লেখা, বাংলাদেশ ১৮৩ রানে জয়ী, যা রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। এতে বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

বড় জয়ের মঞ্চটা গড়ে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরাই। আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ, যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান। ২০১৯ বিশ্বকাপে নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮১ রান তাড়া করতে নেমে সেটি করেছিল বাংলাদেশ দল।

এ রকম বড় রান তাড়া করার কিছু নির্দিষ্ট রেসিপি আছে। পাওয়ার প্লে’তে ভালো শুরু তার মধ্যে একটি। আজ আয়ারল্যান্ডের ওপেনাররা সেটি ঠিকঠাক মতোই করতে পেরেছিলেন। স্টিফেন ডোহেনি ও পল স্টার্লিং বড় কোনো ঝুঁকি ছাড়াই প্রথম ১০ ওভারে ৫১ রান করেন। নতুন বলে নাসুম আহমেদের চ্যালেঞ্জটা দারুণ সামলে নেন দুজন। তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম স্পেলও ভীতি ছড়াতে পারেনি।

বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন ইবাদত হোসেন

বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালের তখন একটাই দুশ্চিন্তা- এই জুটি ভাঙার উপায় কী? সাধারণত সাকিব আল হাসানই এসব সংকটে সমাধানের পথ দেখান। আজও নিজের তৃতীয় ওভারেই তিনি ডোহেনির উইকেট নিয়ে সাকিব বাংলাদেশকে এনে দিলেন কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু। ৩৮ বল খেলে ৩৪ রান করে আউট হন তিনি। আইরিশ টপ অর্ডারে ধস নামানোর জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। গতির ঝড় তুলে ইবাদত হোসেন ফেরান অভিজ্ঞ স্টার্লিংকে। দ্রুত স্টার্লিংয়ের পথ ধরেন হ্যারি টেক্টরও।

গতিতে আইরিশদের এলোমেলো হতে দেখে সাকিবকে থামিয়ে আরেক প্রান্ত থেকে তাসকিনকে ফিরিয়ে আনেন তামিম। আঘাত হানতে সময় বেশি নেননি তাসকিনও এবং সেটা জোড়া আঘাত। নতুন স্পেলের প্রথম দুই ওভারেই আউট আইরিশ অধিনায়ক বলবার্নি ও লরকান টাকার। আয়ারল্যান্ডের রান তখন ৭৬, মাত্র ১৬ রানে ওপরের দিকের ৫ ব্যাটসম্যান আউট!

চতুর্থ উইকেটে ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়

আইরিশরা যে তবু ১৫৫ রান পর্যন্ত ইনিংসটা টানতে পেরেছে, সেটা মূলত জর্জ ডকরেলের সৌজন্যেই। এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার পরিচিত তাঁর বাঁহাতি স্পিন বোলিংয়ের জন্য। আজ কোনো কারণে তাঁকে বোলিংই করতে দেখা গেল না। তবে ব্যাটিংয়ের সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করে। ইবাদতের বলে ইনিংসের ৩০.৫ ওভারে ডকরেল বোল্ড হলে থামে সফরকারীদের ইনিংস। ৪২ রানে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়ে ইবাদত করেছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর সেরা বোলিং। ৪৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন নাসুম।

সিলেটে আজ কী হতে পারে, সেটার আভাসটা ম্যাচের আগের দিনই দিয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। উইকেটে থাকবে সুষম বাউন্স। ব্যাট আর বলে থাকবে ভারসাম্য। ভালো খেললে ব্যাটসম্যানরা বড় রান পাবে। হাথুরুসিংহের ‘পিচ-রিপোর্ট’ই শেষ পর্যন্ত ঠিক প্রমাণিত হলো। আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নির আমন্ত্রণে ব্যাটিং করতে নেমে সিলেটের ব্যাটিং স্বর্গের সুবিধাটা দুই হাত ভরেই নিয়েছে বাংলাদেশ।

ম্যাচ শেষে মাঠ ছাড়ছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা

মূল অবদান সাকিব ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা তাওহিদ হৃদয়ের। দুজনই ৯০ পেরিয়েছেন, কিন্তু একজনও সেঞ্চুরির দেখা পাননি। প্রথম ৩ উইকেটে বাংলাদেশের জুটি বড় না হলেও সাকিব-হৃদয়ের চতুর্থ উইকেট জুটিতে ওঠে ১২৫ বলে ১৩৫ রান। সাকিব ফিরে গেলেও সে ভিতে দাঁড়িয়েই ঝোড়ো ব্যাটিং করেন মুশফিক ও হৃদয়। মুশফিক ফিফটির আগেই থামেন, তবে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ২৬ বলে ৪৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। অভিষেকে সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি হৃদয়েরও।

প্রথম ৩০ ওভারে ১৫৫ রান তুলেছিল বাংলাদেশ, পরের ২০ ওভারে উঠেছে ১৮৩ রান। শেষ ১০ ওভারে স্বাগতিকেরা যোগ করেছে ৯৬ রান। সাকিব, মুশফিকের পর হৃদয়ের উইকেটও নেন পেসার গ্রাহাম হিউম, পরে তিনি ফিরিয়েছেন তাসকিনকেও। ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি ৬০ রান দিয়ে। ইকোনমি রেটের দিক দিয়ে আয়ারল্যান্ডের সেরা অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন, ১০ ওভারে এ অফ স্পিনার দেন ৪৭ রান।