দুবাইয়ে অবস্থিত আইসিসি সদর দপ্তর
দুবাইয়ে অবস্থিত আইসিসি সদর দপ্তর

টেস্ট ক্রিকেট বাঁচাতে আইসিসিতে পারিশ্রমিক বাড়ানোর তদবির করবে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড

টেস্ট ক্রিকেট বাঁচাতে নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। আইসিসিকে প্রতিষ্ঠানটির চলমান সভায় টেস্ট ম্যাচে পুরুষ ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর আহ্বান জানানোর কথা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এবং ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি)। আইসিসি সদস্যদেশগুলো নিয়ে দুবাইয়ে গতকাল সভা শুরু হয়েছে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুরু হওয়া সেই সভা এখনো চলছে। সেখানেই এই প্রস্তাব দেওয়ার কথা বোর্ডগুলোর।

টি-টোয়েন্টির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় কয়েক বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি দলগুলোর গুরুত্ব কমে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। ক্রিকেটের ‘তিন মোড়ল’ হিসেবে পরিচিত ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াই টেস্ট বেশি খেলে, সেগুলোর বেশির ভাগই আবার নিজেদের মধ্যে। সাধারণত এ তিন দলের মধ্যকার সিরিজ ৫ ম্যাচের হয়, কিন্তু এর বাইরের সিরিজগুলো ২-৩ ম্যাচে সীমাবদ্ধ।

টেস্টের ভবিষ্যৎ শঙ্কামুক্ত করতে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়ানো একটা সমাধান বলে মনে করছে সিএ ও ইসিবি। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে, বোর্ড দুটির আশা—প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ন্যূনতম ২০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা) ম্যাচ ফি বা পারিশ্রমিক দিলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচ ফি এখন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা পেয়ে থাকেন।

আইসিসির সভায় টেস্ট ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর আহ্বান জানাবে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড

ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর আকর্ষণ শীর্ষ ও প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে প্রলুব্ধ করে চলেছে। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের এই উদ্যোগ বর্তমান ও পরবর্তী—উভয় প্রজন্মের খেলোয়াড়দের কাছে টেস্ট ক্রিকেটের আবেদন বাড়াবে বলে আশা বোর্ড দুটির। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, ভবিষ্যতে ন্যূনতম ম্যাচ ফি বাড়িয়ে ২৭ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা) করা হতে পারে, যা বর্তমানে ভারতীয় খেলোয়াড়েরা পেয়ে থাকেন।

ম্যাচ ফি–সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয় সম্প্রতি শামার জোসেফের পারফরম্যান্সের কারণে। গত জানুয়ারিতে জোসেফের বীরত্বে ব্রিসবেন টেস্ট জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যা ছিল ২৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ক্যারিবীয়দের প্রথম টেস্ট জয়। এর কিছুদিন পরই জোসেফকে ৩ কোটি রুপিতে (প্রায় ৪ কোটি টাকায়) দলে ভেড়ায় আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। জোসেফ ও তাঁর মতো আরও অনেকেই যেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতেই টেস্টের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে না ফেলেন, সেটা নিশ্চিত করতেই ম্যাচ ফি বাড়ানোর তদবির করবে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড।

জোসেফকে অবশ্য গত ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এনেছে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লুআই)। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা খেলোয়াড়দের বেতন ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের তুলনায় অনেক কম। চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের ১ লাখ থেকে দেড় লাখ ইউএস ডলার (১ কোটি ৯ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা) দিয়ে থাকে ক্যারিবীয় বোর্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলোয়াড়েরা ম্যাচ ফি হিসেবে পান ৫ হাজার ডলার (প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার) টাকা। অথচ এক মৌসুম আইপিএল খেলে ১০ লাখ ডলারও (প্রায় ১১ কোটি টাকা) আয় করতে পারেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটাররা।

অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো বড় দলগুলো সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পায়

অন্যদিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কেন্দ্রীয় চুক্তির সর্বনিম্ন শ্রেণির খেলোয়াড়েরাও ১ কোটি রুপি (১ কোটি ৩২ লাখ টাকা) বেতন পেয়ে থাকেন। আর সর্বোচ্চ শ্রেণির খেলোয়াড়দের বেতন এর সাত গুণ—৭ কোটি রুপি (৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা)।

অস্ট্রেলিয়ার চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররাও বোর্ডের কাছ থেকে বছরে গড়ে ১০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা) পেয়ে থাকেন। অধিনায়ক প্যাট কামিন্স পান দ্বিগুণ—২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা)। এ ছাড়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) মার্কেটিং পুল থেকে অতিরিক্ত আরও ১০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা) আয়ের সুযোগ থাকে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের।

সম্প্রতি ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর ‘টেস্ট ক্রিকেট প্রণোদনা প্রকল্প’ চালুর ঘোষণা দিয়েছে বিসিসিআই, যাতে ক্রিকেটাররা আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কোনো ক্রিকেটার যদি এক বছরে ভারতের মোট টেস্ট ম্যাচের ৭৫ শতাংশ খেলেন, তাহলে ম্যাচপ্রতি অতিরিক্ত ৫৪ হাজার ইউএস ডলার (প্রায় ৬০ লাখ টাকা) পাবেন। কেউ ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ টেস্ট খেললে পাবেন অতিরিক্ত ৩৬ হাজার ২০০ ডলার (প্রায় ৪০ লাখ টাকা)।

খেলোয়াড়েরা টেস্ট খেললে অতিরিক্ত অর্থ দেবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড

ফিট থাকা সবাইকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে সম্প্রতি রোহিত-কোহলিদের ‘চরমপত্র’ও দিয়েছেন বিসিসিআই সচিব জয় শাহ। বোর্ডের নির্দেশ সত্ত্বেও সম্প্রতি রঞ্জি ট্রফিতে না খেলা ঈশান কিষান ও শ্রেয়াস আইয়ারকে চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

তবে আইসিসির সভায় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড পারিশ্রমিক বাড়ানোর তদবির করলেও বিতর্কের বিষয় হতে পারে—এ টাকা আসবে কীভাবে? বর্তমানে ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ আইসিসির কাছ থেকে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। বেশির ভাগ বোর্ডের সম্প্রচারস্বত্ব থেকে আয় তেমন বেশি নয় বলে আইসিসির এ লভ্যাংশ তাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

টেস্ট ক্রিকেটের প্রচার ও সুরক্ষায় আরও সক্রিয় হওয়া আইসিসির বিস্তৃত আলোচ্যসূচিরই অংশ। টেস্ট ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে একটি উন্নয়ন কমিটি গঠন করার আলোচনাও চলছে। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড সফরে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সারির টেস্ট দল পাঠানো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।