ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩-২ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের পরও ইতিবাচকই থাকছেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। বিশ্বকাপ সামনে রেখে টি-টোয়েন্টিতে কী করা দরকার, সেটি ভাবার অনেক সময় আছে মনে করা পান্ডিয়া বলছেন, মাঝে মাঝে হারলেও এটি দলের মানসিকতা তৈরিতে কাজে দেবে তাঁদের।
২-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে থাকার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে ২-২ করেছিল ভারত, কিন্তু গতকাল লডারহিলে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে পান্ডিয়ার দল। ২০১৭ সালের পর যে কোনো সংস্করণেই প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজ হারল ভারত। টসে জিতে ব্যাটিং নিলেও তিনে নামা সূর্যকুমার যাদব ও চারে খেলা তিলক বর্মা ছাড়া কেউই দাঁড়াতে পারেননি সেভাবে। ১৬৬ রানের লক্ষ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেরিয়ে যায় ৮ উইকেট ও ১২ বল বাকি রেখেই।
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকেই এ সংস্করণে খেলছেন না নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, অভিজ্ঞ বিরাট কোহলিরা। আগামী বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে নতুন দল গড়ে তোলা লক্ষ্য তাদের। সর্বশেষ বিশ্বকাপের পর থেকে টানা তিনটি সিরিজ জিতলেও এবার হারতে হয়েছে ভারতকে।
তবে এমন হারকে ইতিবাচক হিসেবেই নিচ্ছেন পান্ডিয়া। গতকাল ম্যাচশেষে তিনি বলেছেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে কী করা উচিত, সেটি বুঝতে আমাদের যথেষ্ট সময় আছে। মাঝে মাঝে হারই ভালো, কারণ এটি আপনাকে অনেক কিছু শেখাবে। অবশ্যই যা ভুল করেছেন সেটি আড়াল হবে না, কিন্তু আমার মনে হয় এর ইতিবাচক দিক হচ্ছে-দল হিসেবে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, এ কারণে সব ছেলেদের নামই আলাদা করে নেব আমি।’
ফলের চেয়ে প্রক্রিয়া বড়, পান্ডিয়া বলেছেন এমন, ‘সত্যি বলতে কী, তাদের নিজেদের প্রক্রিয়ায় নিবদ্ধ ছিল। যখন ২ উইকেট পড়ে গিয়েছিল, তারা চ্যালেঞ্জ নিয়েছে, নিজেদের চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে-পুরো সিরিজেই। হ্যাঁ, আজ (গতকাল) দেখে মনে হবে ম্যাচটা একপেশে, তবে একইসঙ্গে তারা মুখে হাসি ধরে রেখেছে, এগিয়ে এসেছে, চেষ্টা করেছে। হারজিত প্রক্রিয়ারই অংশ। আমাদের শেখার দিকেও নজর দিতে হবে।’
সিরিজ হারের পর পান্ডিয়া ইতিবাচক থাকলেও বেশ কয়েকটি প্রশ্নই উঠেছে এ দলকে ঘিরে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে পান্ডিয়ার অধিনায়কত্বও। সর্বশেষ ম্যাচে পরে ব্যাটিং করে বড় ব্যবধানে জিতলেও গতকাল আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।
এ সবকেও প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই দেখছেন পান্ডিয়া, ‘আমরা দল হিসেবে নিজেদের চ্যালেঞ্জ জানাব বলেই বিশ্বাস করি। এসব দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আমরা শিখব। দলেও আমরা এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। যা কিছুই কঠিন হোক না কেন, আমরা চেষ্টা করব। এটা নিশ্চিত করব যাতে উন্নতি করি। পরে গিয়ে বলাই যায়, এখানে-সেখানে একটি-দুটি সিরিজে কিছু যায় আসে না। এটা দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া, যা নিয়ে খুব বেশি ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। তবে সব মিলিয়ে ছেলেরা এটি ধরে রাখছে, সেটিই রোমাঞ্চকর।’
এ সিরিজের পান্ডিয়ার নিজের ব্যাটিং নিয়েও আছে আলোচনা। গতকালও যেমন ছয়ে নেমে ১৮ বলে ১৪ রান করেই থেমেছেন তিনি। এর দায় অবশ্য নিজেই নিয়েছেন পান্ডিয়া, ‘যদি দেখেন, ১০ ওভারের পর থেকে আমি যখন এসেছি, ওই সময়টা হেরেছি আমরা। আমার মনে হয় পরিস্থিতি কাজে লাগাতে পারিনি আমি। সময় নিয়ে শেষ করে আসতে পারিনি। তবে ছেলেরা আসলেই ভালো খেলেছে। কিন্তু আমার মনে হয় নেমে ঠিক যেভাবে খেলা দরকার ছিল, আমি সেটি করিনি।’
দলের পারফরম্যান্স নিয়ে অধিনায়ক ইতিবাচক থাকলেও কোচ রাহুল দ্রাবিড় অবশ্য সমস্যা এড়িয়ে যাচ্ছেন না। তাঁর মতে, ব্যাটিং নিয়ে ভাবতে হবে তাঁদের। বিশেষ করে ভারতের ব্যাটিং অর্ডারের শেষ দিকটা ভাবাচ্ছে দ্রাবিড়কে। ৮-১১ নম্বরে যাঁরা খেলেছেন এ সিরিজে ভারতের হয়ে, তাঁদের সবাইকেই বলা হচ্ছে ‘একেকজন ১১ নম্বর’ ব্যাটসম্যান।
ম্যাচ শেষে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধান কোচ বলেছেন, ‘আমার মনে হয় যে দলটি এখানে আছে, কম্বিনেশন বদলানোর মতো ততটা বিকল্প আমাদের হাতে ছিল না। তবে সামনে এগোনোর পথে আমাদের কিছু ব্যাপারের দিকে নজর দিতে হবে যেখানে উন্নতি করা যায়। ব্যাটিংয়ের শক্তিমত্তা বাড়ানোর ব্যাপারটি নিয়ে আমরা কথা বলতে চাচ্ছি। নিজেদের সেরাটাই চেষ্টা করছি, তবে এদিকে নজর দিতেই পারি আমরা। কীভাবে বোলিং আক্রমণ দুর্বল না করেও ব্যাটিংয়ের শক্তিমত্তা বাড়ানো যায়।’