একসময় ক্রিকেট–বিশ্বে একটা কথা প্রচলিত ছিল—ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ মানে পাকিস্তানের বোলিং আর ভারতের ব্যাটিংয়ের লড়াই। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পেস বোলিংয়ের উত্থান, অন্যদিকে পাকিস্তানের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের কারণে সেটি এখন ঠিক বলা যাচ্ছে না। তবুও আগামীকাল যখন পাল্লেকেলেতে এশিয়া কাপে মুখোমুখি ভারত ও পাকিস্তান, তাতে মিশে থাকছে আলাদা একটি লড়াই—বিরাট কোহলি বনাম পাকিস্তানের বোলিং। কোহলি জানেন পাকিস্তানের বোলিংয়ের চ্যালেঞ্জটা, আর পাকিস্তান বোলাররা জানেন কোহলি কী করতে পারেন।
১১১ টেস্টের ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচও খেলেননি কোহলি। এ সংস্করণে তাঁর অভিষেকের আগে থেকেই যে বন্ধ দুই দলের টেস্ট সিরিজ। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের মঞ্চ এখন এশিয়া কাপ বা আইসিসির টুর্নামেন্ট। গত বছর যেমন এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে ২০ ওভারের ম্যাচে তিনবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। ২০২১ সাল থেকে হিসাব করলে সংখ্যাটি চার। তাতে পাকিস্তানের জয় দুটি, ভারতের দুটি।
তবে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচটির স্মৃতি যেন এখনো তরতাজা। মেলবোর্নের সেই ক্ল্যাসিকে কোহলি খেলেছিলেন ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় ইনিংস। শেষ বলে গিয়ে ভারতের জেতা সে ম্যাচে কোহলি অপরাজিত ছিলেন ৫৩ বলে ৮২ রানের এক ‘মাস্টারক্লাস’ ইনিংস খেলে।
এবার সংস্করণটা আলাদা। ওয়ানডেতে ২০১৯ সালে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল দুই দলের, বিশ্বকাপের সে ম্যাচে পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল ভারত। ৬৫ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন কোহলি, যদিও পাকিস্তানের মূল ক্ষতিটা করেছিলেন ১১৩ বলে ১৪০ রানের ইনিংস খেলা রোহিত শর্মা।
শাদাব খানের স্মৃতিতে অবশ্য মেলবোর্নে গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ওই ম্যাচ আর তাতে কোহলির পারফরম্যান্সই। স্টার স্পোর্টসকে পাকিস্তানের লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘বিরাট কোহলি যে ধরনের ব্যাটসম্যান, যেভাবে আমাদের বিপক্ষে পারফর্ম করেছে, এমনকি সর্বশেষ বিশ্বকাপের ম্যাচেও, আমার মনে হয় না, আমাদের বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে বিশ্বের অন্য কোনো ব্যাটসম্যান ওই পরিস্থিতিতে ওইভাবে খেলতে পারত। আর এর সৌন্দর্যটা হচ্ছে, সে যেকোনো মঞ্চে, যেকোনো সময়ে এমন করতে পারে।’
কোহলির বিপক্ষে অনেক পরিকল্পনা করতে হয়, শাদাব মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটিও, ‘সে অবশ্যই বিশ্বমানের খেলোয়াড়। তাঁর মুখোমুখি হতে অনেক পরিকল্পনা করতে হয়। যা–ই হোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মনস্তাত্ত্বিক অনেক খেলা থাকে। কারণ, সে পর্যায়ে যাওয়ার স্কিল আপনার আছে। কিন্তু কীভাবে অন্যদের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটা বুঝছেন, বোলার বা ব্যাটারের—এটি পরিস্থিতির ওপরও নির্ভর করে।’
পাকিস্তানের তারকা ফাস্ট বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদির পরিকল্পনা অবশ্য সরল। ওপেনারদের দ্রুত আউট করে ব্যাটিং দলকে চাপে ফেলা। আফ্রিদি তাতে সফলও—৪০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এ বাঁহাতির নেওয়া ৭৮টি উইকেটের ২৭টিই প্রতিপক্ষের ওপেনারদের। স্টার স্পোর্টসের ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমার মতে, আমার গেমপ্ল্যান সরল। সব ওপেনারই সেটি জানে। আর সব সময়ের মতোই লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাটিং দলকে চাপে ফেলতে ওপেনারদের আউট করা। মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা ওপেনারদের মতো করে নতুন বলে খেলে অভ্যস্ত নয়, ফলে নতুন বলে মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানের ওপর অনেক চাপ থাকে।’
কোহলির কথা আলাদা করে আফ্রিদি বলেননি। তবে মিডল অর্ডারের কোহলিকে যে একটা প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রেখেছেন, সেটি ওপরের কথাতেই স্পষ্ট। কোহলির বিপক্ষে ২ ম্যাচ খেলে তাঁকে একবার আউট করেছেন আফ্রিদি—২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সে ম্যাচে নিজের প্রথম দুই ওভারে দুর্দান্ত দুই ডেলিভারিতে ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলকে ফিরিয়ে ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দিয়েছিলেন তিনিই।
কোহলিও জানেন, ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল পাকিস্তানের বোলিং সামলানো বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আফ্রিদি ছাড়াও নাসিম শাহ, হারিস রউফদের সমন্বয়ে গড়া বোলিং আক্রমণ নিয়ে স্টার স্পোর্টসকে তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় বোলিংটাই তাদের শক্তির জায়গা। আর স্কিলের ওপর ভিত্তি করে ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার মতো বোলার তাদের আছে। ফলে তাদের মুখোমুখি হতে আপনার সেরা অবস্থানেই থাকতে হবে।’
মাঝে সব মিলিয়ে একটু টালমাটাল অবস্থা পার করা কোহলি আবার ছন্দ ফিরে পেয়েছেন। গত মাসেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৫ বছর পূর্ণ করা সাবেক অধিনায়কের ক্ষুধাটা এখনো আগের মতোই, ‘আমি শুধু বুঝতে চাই, কীভাবে নিজের খেলার উন্নতি করতে পারি। প্রতিটি দিন, প্রতিটি অনুশীলন সেশনে, প্রতিবছর, প্রতি মৌসুমে এটিই আমাকে এত লম্বা সময় ধরে ভালো করতে সহায়তা করেছে। আমার দলের জন্য পারফর্ম করতে সহায়তা করেছে।’
পাকিস্তানের সঙ্গেও কোহলি নিশ্চয়ই চান আরেকবার পারফর্ম করতে, মেলবোর্নের ওই ম্যাচের মতো। আর পাকিস্তানের চাওয়া, কোহলিকে দ্রুত ফেরানো। পাল্লেকেলেতে দেখা যাবে আরেকটি ‘কোহলি বনাম পাকিস্তানের বোলারদের’ লড়াই!