‘ইমপ্যাক্ট’ ও ‘ইনটেন্ট’ বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত শব্দ–জুটি। যদি প্রশ্ন করা হয়, শুরু থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের গায়ে লেপটে আছে কোন শব্দ? অবশ্যই—উন্নতি।
একটি করে সিরিজ বা টুর্নামেন্ট আসে, খেলোয়াড়দের মুখেও শব্দটার খই ফোটে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুরুর দিনগুলোতে অবশ্য এই শব্দটা শুনতে মন্দ লাগত না। যেহেতু উন্নতির স্বপ্ন দেখা হতো। কিন্তু দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও খেলোয়াড়দের মুখ থেকে যখন এই শব্দ বের হয়, তখন কার ভালো লাগে?
না, এমনিতে উন্নতির তো শেষ নেই, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও প্রতি সিরিজে উন্নতি করতে চায়। কিন্তু সেসব দলের উন্নতির তাড়না আর বাংলাদেশের উন্নতির মধ্যে পার্থক্য আছে। অন্যান্য দলগুলো জয়ের ধারাবাহিকতায় থেকে উন্নতি করতে চায়। নিজেদের খেলার মান পরের ধাপে নিতে চায়।
কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট এখনো খেলাটির মৌলিক জায়গাগুলোয় উন্নতি নিয়ে পড়ে আছে। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ১০৪ রানে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কথাগুলো খেয়াল করুন—বড় রান তাড়া করে জয়ের বিশ্বাসে ঘাটতি, সিডনির ভালো উইকেটে ভালো ব্যাটিং করতে না পারার ব্যর্থতা, ভালো শুরুর পর ব্যাটিংয়ে ভেঙে পড়া—সবই ক্রিকেটের মৌলিক বিষয়াদি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বহু বছর পার করেও যদি এসব মৌলিক বিষয়ে উন্নতির কথা প্রতি সিরিজেই বলতে হয়, তাহলে সেটি নিশ্চয়ই খেলোয়াড়দেরও ভালো লাগার কথা নয়। সাকিবই যেমন স্পষ্ট করে বলে দিলেন, ‘বারবার উন্নতি করার কথা বলতেও ভালো লাগে না।’
বাংলাদেশ অধিনায়ক আজকের ম্যাচে হারের কারণগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কথাটি বলেছেন, ‘সিডনিতে আজ উইকেট খুব ভালো ছিল। আমরা আরও অনেক ভালো ব্যাটিং করতে পারতাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ। কারণ, এখানে ভালো ব্যাটিংয়ের সুযোগ ছিল। এমন না যে আমরা ২০০ চেজই করে ফেলতাম। কিন্তু আমাদের অনেক ভালো শুরু ছিল। আমি নিশ্চিত সবাই প্রথম দুই ওভার দেখার পর ভেবেছে, না কিছু একটা হতে পারে। আমাদের এই জায়গাগুলোতে আসলে উন্নতির জায়গাগুলো অনেক বেশি। যদিও বারবার উন্নতি করার কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। টি–টোয়েন্টি ম্যাচই আসলে এমন।’
কেমন? দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ উইকেটে ২০৫ তাড়া করতে নেমে প্রথম দুই ওভারে বিনা উইকেটে ২৬ রান তুলেও ১৬.৩ ওভারে ১০১ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া? তৃতীয় ওভারে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেনকে হারানোর পর হুট করে সবকিছু ভেঙে পড়ার সেই পুরোনো গল্পই ফিরে এসেছে।
সাকিব এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বোঝালেন, বড় রান তাড়া করতে নেমে দ্রুত কিছু উইকেট হারালেও জয়ের জন্য খেলার যে চেষ্টা—সেই বিদ্যাটা এখনো পুরোপুরি রপ্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। আর দুই শ রান তাড়া করে জেতার জন্য ব্যাটিংয়ের মানসিক প্রস্তুতিও ছিল কি না, দলের ব্যাটসম্যানদের, সাকিব তা নিয়েও সন্দিহান, ‘এমন পরিস্থিতিতে যা হয়, ধস নামা শুরু হলে ঘুরে দাঁড়ানোর খুব একটা সময় থাকে না। সময়টা নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য ব্যাটিং করতে হয়, যদি জেতার জন্য খেলেন। এখানে পতন আসতেই পারে, এটা মেনে নিতে হবে। আমার মনে হয় ব্যাটিংয়ে সেটিই হয়েছে। আমরা ২০০ তাড়া করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম কি না? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না।’
বড় রান তাড়া করে জয়টা আসলে অভ্যাসের বিষয়। এখানে ব্যাটিংয়ের চর্চা থাকতে হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেই চর্চাটা যে নেই এবং তার পেছনে ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেটের যে একটা ভূমিকা আছে, সেটাও বলেছেন সাকিব, ‘আমরা আসলেই বিশ্বাস করেছি কি, আমরা বড় রান তাড়া করে জিততে পারব। আমরা কখনো ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় রান তাড়া করে খুব বেশি জিতি না। ওই একটা জায়গাতে আমাদের সম্ভবত ঘাটতি আছে। কারণ, অন্য দলগুলো যখন খেলে, বেশির ভাগ দল টি–টোয়েন্টিতে ১৭০, ১৮০ কিংবা ২০০ তাড়া করতে পছন্দ করে। এই জায়গাগুলোয় আমরা খুব বেশি অভ্যস্ত বলে মনে হয় না।’
অভ্যস্ত হতে হলে কী করতে হবে? হ্যাঁ, অবশ্যই উন্নতি করতে হবে।