কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ম্যাচ মানেই প্রচুর দর্শক। বিপিএলে আজ সিলেট স্ট্রাইকার্স ও রংপুর রাইডার্সের মধ্যে দিনের প্রথম ম্যাচ শেষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তাই ভিড় বাড়ছিল। তাদের অবশ্য হতাশ হতে হয়নি। চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ফরচুন বরিশালকে রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৪ উইকেটে হারিয়েছে শেষ ওভারে।
তামিম ইকবালের বরিশালকে ৯ উইকেটে ১৬১ রানে থামিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে সে রান টপকে গেছে লিটনের দল। আগের ম্যাচের মতো আজও বৃথা গেল মুশফিকুর রহিমের আরও একটি দুর্দান্ত ইনিংস। তিন ম্যাচ খেলা বরিশাল এখন টানা দুই হারে পয়েন্ট তালিকার ছয়ে নেমে এসেছে।
কাগজে–কলমে বিপিএলে সেরা টপ অর্ডারের তালিকায় কুমিল্লার নামটা ওপরেই থাকবে। লিটন তো আছেনই, সঙ্গে মোহাম্মদ রিজওয়ানের নামটা যোগ করুন। তিনে তাওহিদ হৃদয়, প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের মনে ভয় ধরানোর জন্য এ তিনটি নামই যথেষ্ট। তাদের সামনে আজ লক্ষ্যটাও বড় ছিল না।
রাতের ম্যাচে ১৬১ রান কঠিন হওয়ার কথা নয়। গতকাল বরিশালের ১৮৭ রান ২ ওভার হাতে রেখে টপকে গেছে খুলনা টাইগার্স। একই প্রতিপক্ষের ১৬১ রান নিশ্চয়ই কুমিল্লার ব্যাটসম্যানদের মনে ভীতি ছড়াবে না। কিন্তু যে টপ অর্ডার নিয়ে এত আশা, তাঁরাই কুমিল্লাকে ৫৬ রানে রেখে একে একে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান। রিজওয়ান (১৭) ও হৃদয় (০) একই ওভারেই (চতুর্থ) আউট হন। লিটন টিকে ছিলেন নবম ওভার পর্যন্ত। কিন্তু রান করেছেন ১৯ বল খেলে ১৪।
তবে শুরুর ধাক্কার পর কুমিল্লার ইনিংস ভেঙে পড়তে দেননি ইমরুল কায়েস। ম্যাচটা টেনে নিয়ে গেছেন এই বাঁহাতি। আগের ম্যাচে ৬৬ রানের পর আজ তাঁর ব্যাট থেকে এল ৪১ বলে ৫২ রান। ইমরুল যখন আউট হন, তখনো জয়ের জন্য কুমিল্লার দরকার ২১ বলে ৪৬ রান, যা পাকিস্তানের খুশদিল শাহর জন্য আদর্শ মঞ্চ। কিন্তু প্রিতম কুমার দুবার ক্যাচ ছাড়ার পরও খুশদিল রানআউট ৭ বলে ১৪ রানে।
ইনিংসের শেষ ওভারে সেটি ছিল প্রথম বলের ঘটনা। জয়ের জন্য যখন শেষ ওভারে দরকার ১৩ রান, খালেদ আহমেদের ওয়াইড ইয়র্কারে ব্যাট ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন ২০ বলে ২৩ রান করা জাকের আলী। তবে খুশদিলকে স্ট্রাইকে ফেরাতে ১ রানের জন্য দৌড় শুরু করেন। কিন্তু মুশফিকের সরাসরি থ্রো থামিয়েছে খুশদিলের ইনিংস।
কুমিল্লার কী ভাগ্য, চাপের মুখে সদ্য ক্রিজে আসা ২১ বছর বয়সী ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলার ম্যাথু ফোর্ড খালেদের সে ওভারের পরের তিন বলে ১টি চার ও ছক্কায় ১৩ রান যোগ করলে এবারের বিপিএলের প্রথম জয়ের উদ্যাপনে মেতেছে কুমিল্লার ডাগআউট। ফোর্ড অপরাজিত ছিলেন ৪ বলে ১৩ রানে। মুশফিক ও কায়েসের অর্ধশতকের দিনে ফোর্ডের ওই ছোট্ট ‘ক্যামিও’ই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আগের ম্যাচে ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পাওয়া দুনিত ভেল্লালাগে আজ ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
আগের রাতে ১৮৭ রান করেও জিততে পারেনি বরিশাল। আজ কত রান নিরাপদ? ব্যাটিংয়ে নামার আগে বরিশালের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এ আলোচনা নিশ্চয়ই হয়েছে। সে আলোচনার মূল বক্তব্য যা-ই হোক না কেন, আরও একবার আগে ব্যাটিং করে বরিশালের টপ অর্ডার ব্যর্থ হলো। আগের দিন রাতের মতো ৩৮ বলে ৬৮ রান করা মুশফিকুর রহিমই হয়ে উঠলেন বরিশালের ভরসা।
প্রথম দুই ম্যাচ খেলা ইব্রাহিম জাদরান দেশে ফিরে গেছেন। যোগ দিয়েছেন পাকিস্তানের পেসার আব্বাস আফ্রিদি। তামিমের সঙ্গে তাই আজ ওপেনিংয়ে দেখা গেল মেহেদী হাসান মিরাজকে (০), তিনে সুযোগ পেয়েছেন তরুণ প্রিতম কুমার (৪)। দুজনই আউট হয়েছেন পাওয়ারপ্লের দাবি মেটানোর চেষ্টায়।
আর তামিম খেলেছেন তাঁর গতিতে। পাওয়ারপ্লেতে তৃতীয় উইকেট হিসেবে আউট হওয়ার আগে তাঁর রান ১৬ বলে ১৯। ৩ উইকেট হারালেও বরিশাল প্রথম ৬ ওভারে পেয়ে যায় ৪৪ রান। যার কৃতিত্ব সৌম্য সরকারের। ছন্দে থাকা এই বাঁহাতি ক্রিজে এসে কিছু বাউন্ডারি মারলে বরিশালের ইনিংসে গতি ফিরে আসে। সৌম্যর সৌজন্যে খুঁজে পাওয়া ছন্দটা কাজে লাগিয়েছেন মুশফিক। দলের বিপদে মাঝের ওভারে আরও একটি দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফরম্যান্সের প্রদর্শনী নিয়ে হাজির হন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
বিশেষ করে স্পিনের বিপক্ষে এক্সট্রা কাভার ও মিডউইকেট দিয়ে জায়গা বের করে মারা বাউন্ডারিগুলো বলে দিচ্ছিল, তাঁর স্পিন-দক্ষতা কোন মানের। মুশফিকের ৪৪ বলে ৬২ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৬টি চার ও ২টি ছক্কা। ১৪০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটা আরও গতিময় হতে পারত।
৩১ বলে ৪২ রান করে সৌম্য আউট হওয়ায় তা হয়নি। তাঁকে সঙ্গ দেননি শোয়েব মালিক, মাহমুদউল্লাহও। কুমিল্লার শক্তিশালী বোলিংয়ের বিপক্ষে তাঁকে লড়তে হয়েছে একাই। ৩ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন কুমিল্লার সেরা বোলার। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন ম্যাথু ফোর্ড, রোস্টন চেজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৬১/৯ (তামিম ১৯, মিরাজ ০, প্রীতম ৮, সৌম্য ৪২, মুশফিক ৬২, শোয়েব ৭, মাহমুদউল্লাহ ৪, ভেল্লালাগে ৪, আফ্রিদি ৭, ইমরান ১*; তানভীর ১/২৬, চেজ ২/২৫, ফোর্ড ২/৩৩, ইসলাম ০/৩০, মোস্তাফিজ ৩/৩২, খুশদিল ১/১৩)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: ১৯.৫ ওভারে ১৬২/৬ (লিটন ১৪, রিজওয়ান ১৭, হৃদয় ০, ইমরুল ৫২, চেজ ১৩, জাকের ২৩*, খুশদিল ১৪, ফোর্ড ১৬*; ইমরান ০/৩৬, আফ্রিদি ১/৪০, ভেল্লালাগে ৩/২৬, মিরাজ ০/২৬, খালেদ ১/৩২)।
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: ম্যাথু ফোর্ড (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস)।