মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ দল মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ দুটিই দেখে ফেলেছে। নেদারল্যান্ডসকে হোবার্টে হারিয়ে সিডনিতে বড় ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা আজ তাদের টি-টোয়েন্টির সামর্থ্যটা বাংলাদেশকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
যতটা শুনেছি, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের উইকেটে খানিকটা হলেও স্পিনারদের সুবিধা থাকবে। সে কথা বিবেচনা করেই হয়তো বাংলাদেশ আজ বাড়তি স্পিনার খেলিয়েছে। দলটাকে আমরা যেভাবে দেখতে চেয়েছিলাম, বোলিং–শক্তির দিক থেকে সেভাবেই সেজেছে। সে জন্য হয়তো একজন ব্যাটসম্যান কমাতে হয়েছে।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা যে ব্যাটিংটা করেছে, ঠিক একই ধরনের ব্যাটিং করেছে নিউজিল্যান্ডও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই মাঠে নিউজিল্যান্ডও ২০০ রান করেছিল। আজ দক্ষিণ আফ্রিকা করল ২০৫ রান। অথচ খেলা শুরুর আগে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের যে শরীরী ভাষা দেখলাম, তখন সবাইকে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল।
বোঝা যাচ্ছিল, সবাই খুব ইতিবাচক মানসিকতায় ছিল। প্রথম ওভারে তাসকিন আহমেদ দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে আউট করার মধ্যে সন্দেহাতীতভাবেই বাংলাদেশ ভালো শুরু পেয়ে যায়। যা আমাদের বোলারদের আরও আক্রমণাত্মক হতে উৎসাহিত করেছিল।
ম্যাচের চিত্রটা পাল্টে যায় এরপরই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিধ্বংসী রূপটা বেরিয়ে আসে তখন।
কুইন্টন ডি কক তো দারুণ ফর্মে ছিলই। রাইলি রুশোও দুর্দান্ত হিটার। এই দুজনের যখন জুটি জমে যায়, তখন প্রতিপক্ষের জন্য রান থামানো খুবই কঠিন হয়ে যায়।
আমাদের পেসাররা আগের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাউন্সের সুবিধাটা নিতে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বল করেছে। কিন্তু এখানে আমরা একটু হলেও শর্ট বল করেছি। লেংথটা টেনে করেছি। আরেকটু ওপরে করার সুযোগ ছিল। তবু বলতে হয়, যে দুজনের জুটির কথা হচ্ছে, তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে ম্যাচটা ছিনিয়ে নেয়। তাদের দুজনের সামর্থ্য নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই।
তবে স্পিনারদের কাছ থেকে প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল। এ ধরনের উইকেটে ওপরে বল করা, একটু গতি কমিয়ে বল করা জরুরি। এখানে ওভার স্পিনটা জরুরি, বলের রোটেশন জরুরি। আমাদের স্পিনাররা বল সেভাবে ঘোরায় না। যে কারণে তারা ওপরে বল করার সাহস পায় না। শর্ট বল করতে বাধ্য হয়, আর সেটা খেলা এই উইকেটে খুবই সহজ।
বিষয়টা হয়ে যায় অনেকটা স্লো মিডিয়াম পেসের মতো। এই গতিতে শট খেলা খুব সহজ। আর যদি থিতু ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকে, যাদের সামর্থ্য আছে বড় শট খেলার, তাদের বিপক্ষে বল করা আমাদের স্পিনারদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। ভাগ্য ভালো, আফিফ এসে জুটি ভেঙেছে। এরপর দ্রুত কিছু উইকেট পড়ায় ওদের রানটা যতটা হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি। তা না হলে রান হয়তো ২৩০-এ চলে যেত।
সে কৃতিত্বটা বোলারদের দিতেই হবে। হাসান মাহমুদ শেষে খুব ভালো বোলিং করেছে। মোস্তাফিজুর রহমানের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। ওভার প্রতি ১০ রানরেটের ম্যাচে সে ৬ করে রান দিয়েছে। যখন ডি কক ও রুশো ব্যাটিং করছিল, তখনো ইকোনমিক্যাল বোলিং করেছে সে। এটা দলের জন্য ভালো খবর। এই মুহূর্তে সে হয়তো ডেথ ওভারে বল করছে না, নতুন বলেও না। সে যদি আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পায়, তাহলে তাকে ম্যাচের যেকোনো সময় ব্যবহার করা যাবে।
আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সিডনিতে কিন্তু এর আগে বাংলাদেশের কেউই খেলেনি। সেদিক থেকে বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হয়।
রান তাড়ায় প্রতিপক্ষের বিশাল স্কোরটা বোধ হয় আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে দেয়নি। প্রতিমুহূর্তেই বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি মারার বিষয়টি মাথায় ছিল। যে কারণে আমরা বলের মেধা বুঝে খেলা থেকে সরে এসেছি। সে কারণেই আমরা দ্রুত উইকেটও হারিয়েছি। বড় রান তাড়ায় ঝুঁকি নিতে হবে, বড় শট খেলতে হবে। তার পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের শৃঙ্খলা মানা জরুরি। প্রতি বলেই চার-ছক্কা মারা সম্ভব নয়।
আজ যেমন সৌম্য ও নাজমুল স্কয়ারে খেলতে গিয়ে আউট হলো। সোজা বাউন্ডারি বড় ছিল কিছুটা। সে জন্য হয়তো স্কয়ারে খেলার চেষ্টা করেছে। অথচ যে বলে আউট হয়েছে, সে বলে সোজা খেললে আরও ভালো হতো। এ ক্ষেত্রে ফুটওয়ার্কটা জরুরি। বল বাছাই করে খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। দল আগ্রাসী থাকার চেষ্টা করেছে। এতে কোনো ভুল দেখছি না। তবে আরও শৃঙ্খল হতে পারত ব্যাটিংটা। তাহলে হয়তো এই ম্যাচ থেকে ব্যাটসম্যানদেরও কিছু ভালো পারফরম্যান্স পরের ম্যাচে নিয়ে যেতে পারতাম। সেটা হলে ভালো হতো।