মোস্তাফিজুর রহমান মানেই স্লোয়ার আর কাটারের মিশ্রণ। ক্যারিয়ারে তাঁর বেশির ভাগ সাফল্যই এসেছে এই দুটি বলের ওপর নির্ভর করে। তবে ক্রিকেটে উইকেটের চাহিদা বলতেও একটা কথা আছে। মন্থর, টার্নিং, অসম বাউন্সের উইকেটে কাটার আর সিম মুভমেন্ট আছে এমন উইকেটে কাটারের কার্যকারিতা নিঃসন্দেহে এক হবে না।
মোস্তাফিজ বোধ হয় এই সরল সত্যটাই ভুলে গেছেন। সরল এই সত্য ভুলে গিয়ে আজ মোস্তাফিজ ৪ ওভারে খরচ করেছেন ৪৭ রান। শুধু এই ম্যাচে নয়, পুরো সিরিজেই খরুচে ছিলেন এই পেসার। প্রশ্নটা তাই স্বাভাবিকভাবেই ওঠে, সিলেটের এমন উইকেটে প্রতি ম্যাচেই মোস্তাফিজ একাদশে কেন?
সিলেটের উইকেট ঘাস এখনো তাজা। পেসাররা পাচ্ছেন সিম মুভমেন্ট, এমনকি সৌম্য সরকারও। এমন উইকেটেও মোস্তাফিজ একের পর এক স্লোয়ার ও কাটার করেছেন। আজকের ম্যাচে প্রথম ৯ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ছিল মাত্র ৬৩। ব্যাটিং–সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশ তখন ম্যাচে এগিয়েই বলতে হবে। এমন সময়ে বোলিংয়ে এসে মোস্তাফিজ রান দেন ১৮।
তখন ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটসম্যান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার সামনে করেন ওভারপিচড কাটার, সেটাও মিডঅনে ফিল্ডার ৩০ গজের মধ্যে রেখে। ফলাফল যা হওয়ার তা–ই হয়েছে। নিজের ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি পেয়েছেন হাসারাঙ্গা। সেই ওভারেই এরপর কুশল মেন্ডিসের সামনেও তিনি করেছেন স্লোয়ার। সেই বল তিনি হজম করেছেন ছক্কা। বড় সংগ্রহের ভিত সেখানেই পায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর মোস্তাফিজকে আবার ইনিংসের ১২তম ওভারে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। ওই ওভারে প্রথম বলই করেন অফ কাটার। বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন কুশল। এরপর ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলেই আবারও অফ কাটার করেন তিনি। সেই বল থেকেও বাউন্ডারি পেয়ে যান শ্রীলঙ্কার সাদিরা সামারাবিক্রমা। সব মিলিয়ে শেষ ওভারে খরচ করেন ১৪।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে মোস্তাফিজ ৪টি করে মোট ৮ ওভার বোলিং করেছেন, দুই ম্যাচেই রান দিয়েছেন ৪২ করে। খরুচে আবার উইকেটও এনে দিয়েছেন এমনও নয়। সব মিলিয়ে ৩ ম্যাচে ১২ ওভার বল করে দিয়েছেন ১৩১ রান, উইকেট মাত্র ২টি। মোস্তাফিজের জন্য সিরিজটা ভুলে যাওয়ার মতোই তো।
মোস্তাফিজও এখনো দেশের অন্যতম সেরা পেসার। তবে সব উইকেটেই মোস্তাফিজ কি ‘অটোমেটিক চয়েস’? এই প্রশ্নটাও তোলারও সময় এসেছে। এই স্কোয়াডেই দলে আছেন তানজিম হাসানের মতো পেসার। তরুণ এই আগ্রাসী পেসার এমন উইকেটে মোস্তাফিজের বিকল্প হতে পারতেন। তাহলে বাড়ত দলের ব্যাটিং শক্তিও।
টি–টোয়েন্টিতে বোলাররা বৈচিত্র্য বাড়াতে স্লোয়ার–কাটারের ব্যবহার করে থাকেন। তবে মোস্তাফিজের ক্ষেত্রে বিষয়টি অনুমেয় হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে টি–টোয়েন্টিতে খুব একটা ভালো সময়ও কাটছে না তাঁর। সর্বশেষ ১০ টি–টোয়েন্টিতে তিনি উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৭টি। চলতি বছরে শ্রীলঙ্কা সিরিজের বাইরে আর কোনো টি–টোয়েন্টি খেলেননি তিনি। বিপিএলেও নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন। ১০ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১৩টি, তবে ওভারপ্রতি খরচ করেছেন ৯.৩৩ রান করে।