যশপ্রীত বুমরা ইয়র্কারই মারতে চেয়েছিলেন। সেটা অনুমান করে আশুতোষ শর্মা এক হাঁটু ভেঙে নিচু হয়ে সুইপ করে বল পাঠালেন স্কয়ার লেগ দিয়ে গ্যালারিতে। চণ্ডীগড়ের মুলানপুর স্টেডিয়ামের ভরা গ্যালারি তখন হাঁ হয়ে তাকিয়ে। ম্যাচ শেষে জহির খান যাঁর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘এযাবৎ বুমরার বলে এমন সুইপ শট খেলতে আমি কাউকেই দেখিনি।’
এবারের আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি, ওভারপ্রতি রান খরচ যাঁর ছয়েরও নিচে, সেই বুমরার বলে আশুতোষ সুইপে ছক্কাটি মেরেছেন বৃহস্পতিবার মুম্বাই–পাঞ্জাব ম্যাচে। শুধু ওই একটিই নয়, মুম্বাইয়ের বিপক্ষে পাঞ্জাবের এই ব্যাটসম্যান ছক্কা মেরেছেন মোট ৭টি। মুম্বাইয়ের ১৯২ রান তাড়ায় পাঞ্জাব মাত্র ১৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও যে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৯ রানে হেরেছে, তাতে মূল কারণ আশুতোষের ২৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস।
আশুতোষের ঝোড়ো ইনিংসটি মুম্বাইকে একসময় হারের পথই দেখাচ্ছিল। সেটা কাটিয়ে উঠতে পারার পর ম্যাচ শেষে আশুতোষের প্রশংসাই ঝরেছে মুম্বাই অধিনায়ক পান্ডিয়ার কণ্ঠে, ‘এ ধরনের একটা ইনিংস, অবিশ্বাস্য। প্রায় সব বলই ব্যাটের মাঝ ব্যবহার করে খেলেছে। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।’
এই আশুতোষ কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদের ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন ছয় মাস ধরেই। গত অক্টোবরে ভারতের ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে যুবরাজ সিংয়ের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ভেঙেছিলেন। রেলওয়ের হয়ে অরুণাচল প্রদেশের বিপক্ষে আশুতোষ ফিফটির মাইলফলক স্পর্শ করেন মাত্র ১১ বলে, পেছনে পড়ে যায় ২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যুবরাজ সিংয়ের ১২ বলে ফিফটির রেকর্ড। গত সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৯ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে দ্রুততম টি–টোয়েন্টি ফিফটির বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন নেপালের দীপেন্দ্র সিং। এই তালিকায় আশুতোষের নামটা দ্বিতীয়।
২৫ বছর বয়সী আশুতোষ আইপিএল খেলছেন এবারই প্রথম। যদিও বয়স অনুসারে আরও আগেই তাঁর আইপিএল দলগুলোর নজরে পড়ার কথা। মধ্যপ্রদেশের বয়সভিত্তিক দল হয়ে ২০১৮ সালে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে অভিষেক হয়েছিল আশুতোষের। সে মৌসুমে তিনটি ফিফটিসহ রান করেছিলেন ২৩৩, যা দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
কিন্তু পরের মৌসুমে কোচ পরিবর্তন হওয়ার পর দল থেকে বাদ পড়েন আশুতোষ। সে ঘটনার বিষয়ে ক্রিকইনফোকে আশুতোষ বলেন, ‘নতুন কোচ আমাকে পছন্দ করতেন না। আমি তখন বিষণ্নতায় পড়ে গিয়েছিলাম। করোনা মহামারি আসার পর একসঙ্গে ২০ জনের বেশি দলের সঙ্গে নেওয়া হতো না। দলের সঙ্গে থাকার সুযোগও হতে না।’ কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই দল থেকে বাদ পড়ার ওই ঘটনায় পরবর্তী দু–তিন বছর খুব বাজে সময় কেটেছে বলে জানান আশুতোষ।
শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে টানা চার বছর না খেলার পর আশুতোষের ক্যারিয়ার পুনরুত্থানে ভূমিকা রাখে রেলওয়ে। ভারতের রেলওয়ে দল তাঁকে ২০২৩ সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে খেলায়, আর এর পরই আইপিএলের মিনি নিলামে তাঁকে ২০ লাখ রুপির ভিত্তিমূল্যে কিনে নেয় পাঞ্জাব।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নতুন জীবন পাওয়া আশুতোষ এখন পর্যন্ত টি–টোয়েন্টি খেলেছেন ১৮টি। এর মধ্যেই তাঁর ছয়ের সংখ্যা ৪৩, প্রতি ম্যাচে ২.৩৮ করে। এবারের আইপিএলে চার ম্যাচে আশুতোষ ছয় মেরেছেন ১৩টি। ৭৬ বল খেলে রান ২০৫ স্ট্রাইক রেটে ১৫৬ রান।
বুমরার বলে সুইপে ছয় বা যুবরাজের রেকর্ড ভাঙার ঘটনা কেউ যদি মনে নাও রাখে, ছক্কার সামর্থ্যে হলেও এই আশুতোষ নিজেকে চিনিয়েই যাবেন। লক্ষণ কিন্তু এমনটাই বলছে।