‘অননুমেয়’—ক্রিকেটবিশ্বে পাকিস্তান দল এই তকমাটা অনেক আগেই পেয়েছে। অতীতে অনেকবারই এমন দেখা গেছে—যে ম্যাচে তাদের হেরে যাওয়ার কোনো কারণই নেই, সেটা তারা হেরে গেছে হঠাৎ করে। আবার যে ম্যাচে তাদের জয়ের কোনো সুযোগই ছিল না, অবিশ্বাস্য কিছু ঘটিয়ে সেটা জিতে গেছে। এ কারণেই এমন তকমা পাকিস্তানের!
পাকিস্তানের ক্রিকেটের আরেকটা অননুমেয় দিক হচ্ছে, তাদের কর্তাব্যক্তিদের ভাবনাচিন্তা। পাকিস্তানের ক্রিকেটকর্তাদের ভাবনাচিন্তা কখনোই ধারাবাহিক ছিল না, তাঁরা কখন কী করবেন, একেবারেই অননুমেয়! ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন আসে দেশটির ক্রিকেট প্রশাসনে, নতুন প্রশাসন এসেই আগের প্রশাসনের সব পরিকল্পনা বাতিল করে শুরু করে নতুনভাবে। আগের কোচ, অধিনায়কদেরও কখনো কখনো বিদায় করে দেওয়া হয়।
যিনি, যখনই পাকিস্তান ক্রিকেটের কর্তা হয়ে আসুন না কেন—সবারই যেন ধৈর্যের খুব অভাব। এই যেমন ভারতে গত বছর শেষ হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। সেখানে দলের ব্যর্থতার পর কোচিং স্টাফ তো বটেই, নেতৃত্বেও পরিবর্তন এনেছে পাকিস্তান। এরপর ক্রিকেট প্রশাসনে পরিবর্তন আসায় আরেকবার বদল এসেছে কোচিং স্টাফে। এখন আবার কথা চলছে টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক পরিবর্তন নিয়ে। অথচ টি-টোয়েন্টি দলের নতুন অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদির নেতৃত্বে মাত্র একটি সিরিজই খেলেছে পাকিস্তান।
এ বছরের জানুয়ারিতে পাঁচ ম্যাচের সেই সিরিজে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৪-১ ব্যবধানে হেরেছে আফ্রিদির দল। আফ্রিদিকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনা শুধু এই সিরিজ হারের কারণেই নয়। আফ্রিদি পিএসএলের দল লাহোর কালান্দার্সেরও অধিনায়ক। তাঁর নেতৃত্বে ২০২২ ও ২০২৩ মৌসুমে শিরোপা জেতা লাহোর এবার টুর্নামেন্ট শেষ করেছে সবার নিচে থেকে। এটা দেখে পাকিস্তানের ক্রিকেটকর্তাদের মনে হয়েছে, টি-টোয়েন্টিতে আফ্রিদির নেতৃত্বে খামতি আছে।
পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব থেকে শাহিনকে সরিয়ে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানকে অধিনায়ক করার একটা আলোচনা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, বিশ্বকাপের পর সব সংস্করণের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো বাবর আজমকেই আবার দেওয়া হতে পারে টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব। পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি দলের এই নেতৃত্ব-বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন পিএসএলের ফাইনালে ওঠা ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের অধিনায়ক শাদাব খান।
পেশোয়ার জালমির বিপক্ষে পিএসএলে দ্বিতীয় এলিমিনেটর জয়ের পর শাদাব বলেছেন, ‘যখন আপনি কাউকে নিয়ে আসবেন, সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়গুলো বদলে যাবে না, সময় লাগবে। আমরা চাই, সবকিছু দ্রুত বদলে যাবে। কিন্তু এভাবে হয় না, এটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। শুরুতে বেশির ভাগ সময়ই ব্যর্থতা আসবে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই ব্যর্থতাগুলোকে আমরা কীভাবে নেব।’
শাদাব এরপর যোগ করেন, ‘এখন দেখুন, শাহিনকে আমরা একটি সিরিজ দিয়েছি এবং আমরা তার নেতৃত্বে পরিবর্তন চাইছি। এটা এ রকম হওয়া উচিত নয়। কারণ, একজনকে তার প্রক্রিয়া আর পদ্ধতিতে অধিনায়কত্ব করার জন্য লম্বা সময় দেওয়া প্রয়োজন। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সঙ্গে সিরিজও জিততে চাই। এটাই সমস্যার সৃষ্টি করে।’
শাদাব এখানেই থামেননি। তিনি বলে চলেন, ‘একজন অধিনায়কের নিজস্ব ভাবনা আছে। কিন্তু এখন এটা সম্ভব নয়। কারণ, আমরা একটা সিরিজের পরই অধিনায়ক বদলানোর আলোচনা শুরু করি। বিশ্বকাপ আসছে। আমাদের এখন লম্বা সময়ের জন্য খেলোয়াড় খুঁজে বের করতে হবে, যাতে করে আমরা বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সমস্যাগুলোর সমাধান করে ফেলতে পারি।’