সময় গড়ানোর সঙ্গে অন্য দলগুলোর মানসিকতা বদলালেও পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ধারা থেকে কয়েক ধাপ পেছনে পড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইমাদ ওয়াসিম। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর এই অলরাউন্ডার বলেন, দল হিসেবে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছেন তাঁরা।
আইসিসির সহযোগী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুপার ওভারে হারের পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছেও এবার হেরেছে পাকিস্তান। তবে দুটি ম্যাচেই একটা সময় বেশ নিয়ন্ত্রণে ছিল গত আসরের রানার্সআপ দলটি। প্রথম তিন ম্যাচে পাকিস্তানের একমাত্র জয়টি কানাডার বিপক্ষে। এরপর সুপার এইটের সম্ভাবনা থাকলেও ফ্লোরিডায় যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ড ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় বিদায় নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের। আজ রাতে নিজেদের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে তারা।
এ ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে ইমাদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনে সবচেয়ে তলানিতে এসে এবারই ঠেকল কি না পাকিস্তান? জবাবে বিশ্বকাপ সামনে রেখে অবসর ভেঙে ফেরা ইমাদ বলেন, ‘হ্যাঁ, এটিই তলানি। এর চেয়ে নিচে নামা যায় না। এটিই বাস্তবতা।’
কেন এমন ব্যর্থতা, এমন প্রশ্নের জবাবে এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘দেখুন আমার মতে, আমি ব্যক্তিগত মতটা বলছি। এটিকে শিরোনাম করবেন না। এটা মানসিকতার ব্যাপার। আপনি কোন মানসিকতা নিয়ে খেলতে চান? হয় আপনি আগুনের জবাব আগুন দিয়ে দেবেন অথবা নিজস্ব উপায়ে খেলবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, আগুনের জবাব আগুনই হওয়া উচিত। আর যদি হারেনও আপনি নিজেকে বলতে পারবেন—ওই দিনে আমরা যথেষ্ট ভালো করিনি।’
ইমাদ এরপর ভয়ডরহীন ক্রিকেটের আহ্বানও জানিয়েছেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দল ও খেলোয়াড়েরা এতটাই ভালো যে আমরা যেকোনো ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারি। (কিন্তু) আমরা এটি চেষ্টা করে দেখিনি। কিন্তু চেষ্টা করতে হবে। ব্যর্থতার ভয়কে দূরে সরাতে হবে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সবখানেই ব্যর্থতার ভয়কে সরাতে হবে। আগেও যেমন বলেছি, ব্যক্তি বদলালে কিছুই বদলাবে না। মানসিকতা বদলালে আপনি অনেক কিছুই বদলাতে পারবেন। একই বলে ছয় হতে পারে, চার বা সিঙ্গেল হতে পারে এবং ওই বল একটা উইকেটও নিতে পারে বা ডট হতে পারে।’
আমরা বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে খেলি। তাদের মানসিকতা সময়ের সঙ্গে বদলেছে। আমরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শাসন করতাম। আমার মনে হয় এখন একটু পিছিয়ে গেছি।ইমাদ ওয়াসিম, পাকিস্তান অলরাউন্ডার
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাকিস্তান সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি বলেও মত তাঁর, ‘আমরা বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে খেলি। তাদের মানসিকতা সময়ের সঙ্গে বদলেছে। আমরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শাসন করতাম। আমার মনে হয় এখন একটু পিছিয়ে গেছি। হয়তো তিন বিভাগেই আমাদের মানসিকতা (বদলাতে হবে)। কোন বিভাগে, সেটি বলব না। তিন বিভাগেই আমাদের এগোতে হবে। আপনি যদি খেলোয়াড়দের মানসিকতা বদলান, তাহলে নিজের সামর্থ্যের সীমার চেয়ে বেশি কিছু অর্জন করবেন। আমি সব সময়ই এটি বিশ্বাস করি।’
নিজেদের অবস্থানের বাস্তবতাও মেনে নিচ্ছেন ইমাদ, ‘অনেক কথাই বলা যায়। কিন্তু ব্যাপারটি হচ্ছে আজ আমরা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছি। পরের বিশ্বকাপে যা-ই ঘটুক না কেন, যে যেভাবেই খেলুক না কেন, সঠিক মানসিকতা নিয়ে এগোলে আমাদের ফল আরও ভালো হবে।’
পরিবর্তন কীভাবে আসবে, সে প্রসঙ্গে ইমাদের মত, ‘এটা আমার আওতায় পড়ে না। কিন্তু আমার মনে হয়, পরিবর্তন আসা উচিত। বড়সড় পরিবর্তন আসা উচিত, যাতে আমরা সামনে এগোতে পারি, এখনকার ক্রিকেট যেভাবে খেলা হচ্ছে, সেটি মোকাবিলা করতে পারি। এতটুকুই বলতে পারি আমি।’