বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছেন নজিবুল্লাহ জাদরান
বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছেন নজিবুল্লাহ জাদরান

খাদের কিনারায় বাংলাদেশ

একেই বলে উড়ে যাওয়া

মোসাদ্দেককে মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলে নজিবুল্লাহ জাদরান যখন এশিয়া কাপে টানা দ্বিতীয় জয় ও আফগানিস্তানকে সুপার ফোরে তোলার কাজটা একই সঙ্গে সেরে ফেললেন, তখন আসলে কল্পনা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিছুক্ষণ আগেই ম্যাচটা কেমন দোদুল্যমান ছিল। বাংলাদেশের ১২৭ রানের মামুলি সংগ্রহও ’এতেও হয়ে যেতে পারে’ জাতীয় একটা অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

১২৭ রান করেও এর আগে জিতেছে বাংলাদেশ। আরেকবার এর চেয়ে ৫ রান কম করেও। দুটিই গত সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সেই ম্যাচ দুটি ছিল মিরপুরে। ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্নের মতো এক উইকেটে।

শারজার উইকেটও ব্যাটিং–স্বর্গ নয়, তবে মিরপুরের ওই উইকেটের মতো অমন খোঁয়াড়ও তো নয়। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সুবিধাকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাংলাদেশ যখন ৭ উইকেটে ১২৭ রানেই আটকে গেল, এই ম্যাচ তো আসলে সেখানেই শেষ! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে আফগানদের ব্যাটিং মনে রাখলে তো অবশ্যই।

তারপরও ম্যাচটা কিন্তু একটা সময় একটু দোলাচলে দুলছিল। শেষ পর্যন্ত যে বিপুল বিক্রমে জিতেছে আফগানিস্তান, তাতে এটা পড়ার পর আপনার ভুরু কুঁচকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ৯ বল বাকি রেখে ৭ উইকেটে জিতেছে একটা দল, সেটিও শেষ দিকে এমন ঝড় তুলে যে, আরও ২০/২৫ রান লাগলেও কোনো সমস্যা হতো বলে মনে হচ্ছিল না। সেখানে কিনা বলা হচ্ছে, প্রতিপক্ষ দলেরও জয়ের সুযোগ ছিল! হাস্যকর, রীতিমতো হাস্যকর।

নজিবুল্লাহ জাদরানের প্রলয় নাচনে আফগানিস্তানের জয়ের রেশ মাথায় নিয়ে এই লেখাটা পড়ছেন বলে একটু হয়তো হাস্যকরই শোনাচ্ছে, তবে ম্যাচটাতে রিওয়াইন্ড করে একটু পিছিয়ে যান তো দেখি। পিছিয়ে গিয়ে থামুন আফগানিস্তান ইনিংসের ১৬ ওভার পর।

স্কোরবোর্ডে তখন ৩ উইকেটে ৮৫। অর্থাৎ শেষ ৪ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ৪৩ রান। টি–টোয়েন্টির আধুনিক জমানায় ১১ ছুঁইছুঁই আস্কিং রেটকেও এখন অসম্ভব বলার উপায় নেই, তবে একটু কঠিন তো বটেই। সেই কঠিন কাজটাকেই কী জলবৎ তরলং–ই না করে ফেললেন নজিবুল্লাহ জাদরান। আফগানিস্তান ইনিংসের ১৫.৪ ওভার পর্যন্ত একটাও ছক্কা নেই। ষোলতম ওভারের পঞ্চম বলে প্রথম তা মারলেন নজিবুল্লাহ জাদরান। এরপর মেরেই চললেন!

আফগানিস্তানকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছেন দুই জাদরান

প্রথম আর জয়সূচক ছক্কার মাঝখানে আরও চারবার উড়ে গিয়ে সীমানা পেরোল বল। ছয়–ছয়টা ছয়, ১৭ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসে চার যেখানে মাত্র ১টি। জয়ের সময় উইকেটে নজিবুল্লাহর সঙ্গীও আরেক জারদান। ইব্রাহিম জাদরান ৪১ বলে অপরাজিত ৪২ রানে। এই ইনিংসটিকেও তখন ব্যতিক্রমী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হচ্ছে। অন্য প্রান্তে কেউ প্রায় ২৫৩ স্ট্রাইক রেটে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে ফেললে সঙ্গীর যে ১০০ স্ট্রাইক রেটের আশেপাশে থাকলেও চলে।

প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের জয় ছিল আরও দাপুটে। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী সেই ম্যাচে উড়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা আফগানিস্তানকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রেখেছিলেন। কারণটা কী বলেছিলেন, মনে আছে তো? বাংলাদেশ দলে বিশ্বমানের বোলার শুধু মোস্তাফিজ আর সাকিব। আফগানিস্তানে যেখানে সংখ্যাটা অনেক বেশি।

বাংলাদেশের সেই ‘বিশ্বমানের বোলার’ মোস্তাফিজই এদিন ম্যাচের রং বদলে দেওয়ায় বড় ভূমিকা রাখলেন। রিওয়াইন্ড করে ম্যাচটায় একটু পিছিয়ে যেতে বলেছিলাম। ৪ ওভারে ৪৩ দরকার—ওই সময়টায়। একটা সময় এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ প্রমাদ গুনত, কারণ এই ৪ ওভারের ২টিই করবেন মোস্তাফিজ। ডেথ ওভারে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের কঠিনতম বোলারদের একজন। এসবই আসলে অতীতকালের কথা। এখনকার মোস্তাফিজ অমন সময়ে এসে ওভারে ১৭ রান দিয়ে বসবেন, খেয়ে বসবেন দুটি ছক্কা। অধিনায়ক তাঁকে আর চার নম্বর ওভারটা করানোরই সাহস পাবেন না।

ছবিটা বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ দিকে। তখন পর্যন্ত রশিদের হাসি যেমন ছিল, ছিল ৩১ বলে অপরাজিত ৪৮ রান করা মোসাদ্দেকের এই হাসিও। ম্যাচ শেষে অবশ্য হাসতে পেরেছেন শুধু রশিদরাই।

এই ম্যাচের আগে টি–টোয়েন্টিতে দুই দলের লড়াইয়ে আফগানিস্তান এগিয়ে ছিল ৫–৩ ম্যাচে। এই পরাজয়ে তা ৬–৩ তো হয়ে গেলই, বাংলাদেশকে তা ঠেলে দিল খাদের কিনারায়ও। আগামী বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা এখন জীবন–মরণ লড়াই। যাতে হারলেই বাংলাদেশের এশিয়া কাপ শেষ!