শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে ঘুরছে নানা প্রশ্ন আর কৌতূহল। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তাঁদের অবস্থান এখন কী হবে? কৌতূহল আছে বিসিবি সভাপতির পদে থাকা যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানসহ ক্রিকেটে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের অন্যদের নিয়েও।
গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলতে সাকিব এখন কানাডায়। সেখান থেকেই পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। সব ঠিক থাকলে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে যাবে। মাশরাফি গতকাল ঢাকায়ই ছিলেন। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নড়াইলে তাঁর বাড়িতে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। একটি সূত্রে জানা গেছে, গতকালের পরিস্থিতি নিয়ে ফোনে কানাডা থেকে মাশরাফির সঙ্গে কথা বলেছেন সাকিব।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তত দুই দিনের জন্য পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পাকিস্তান সফর। আজ সকাল ১০টায় ‘এ’ দলের পাকিস্তানের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার কথা। কিন্তু গতকাল ছয় ঘণ্টার জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পর সন্ধ্যায় বিসিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ‘অনিবার্য কারণবশত’ সফরটি অন্তত ৪৮ ঘণ্টার জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে পিসিবির সঙ্গে বিসিবির যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
শুধু ‘এ’ দলের সফরই নয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবকিছু নিয়েই অনিশ্চিত সময় পার করতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সভাপতি নাজমুল হাসান ছাড়াও বিসিবির পরিচালক পদে আছেন আওয়ামী লীগের আরও সাবেক-বর্তমান সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিসিবির নীতি নির্ধারণী বিষয়ে তাঁরা কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন, সেটাও একটা প্রশ্ন।
পাকিস্তান সফরে দুটি চার দিনের ম্যাচের পাশাপাশি তিনটি ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলার কথা ‘এ’ দলের। সিরিজটি মূলত আসন্ন বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতির লক্ষ্যেই আয়োজন করা। সব ঠিক থাকলে ২১ আগস্ট রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে, ৩০ আগস্ট করাচিতে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। দুটি টেস্টই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অনিশ্চিত এই সিরিজের ভবিষ্যৎও। তা ছাড়া গত কিছুদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি ক্রিকেটারদের পাকিস্তান সফরের প্রস্তুতিতেও প্রভাব ফেলেছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর লম্বা ছুটি কাটিয়ে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ঢাকায় ফিরেছেন ২ আগস্ট। স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ, সহকারী কোচ নিক পোথাসও ঢাকায় চলে এসেছেন। পেস বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামস আর ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প তো আগে থেকেই আছেন। কিন্তু অনুশীলন হচ্ছে না বলে কোচদের হোটেলবন্দী সময় কাটাতে হচ্ছে।
দলের কোচিং স্টাফের এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘সফর হবে কি না কে জানে। এদিকে ছেলেদের নিয়ে কাজও করা যাচ্ছে না। হাতে সময় কম। আশা করছি আগামী কয়েকটা দিন আমরা কাজে লাগাতে পারব। দেখি পরিস্থিতি কোন দিকে যায়।’ অনিশ্চয়তায় আছেন ক্রিকেটাররাও। তাঁদেরই একজন গতকাল এই প্রতিবেদকের কাছেই জানতে চান, ‘সিরিজ হবে তো? অনুশীলন তো হচ্ছে না! সামনে কী হবে তা তো কেউ বলতে পারছে না।’