এক পায়ে ভর দিয়ে অপরাজিত ২০১! সর্বকালের অন্যতম সেরা ইনিংস উপহার দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে তুলেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
এক পায়ে ভর দিয়ে অপরাজিত ২০১! সর্বকালের অন্যতম সেরা ইনিংস উপহার দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে তুলেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাক্সওয়েলকে কি দেখা যাবে আজ

মাঝখানে তিন দিন কেটে গেছে। প্রভাব বিবেচনায় এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন দিন। এই তিন দিনের তিন ম্যাচে চূড়ান্ত সেমিফাইনাল লাইন আপ। নিচের দিকের দলগুলোর জন্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট কাটার যে একটা ব্যাপার আছে, সেটির মীমাংসাও মোটামুটি হয়ে গেছেই বলা যায়। এমন প্রভাববিস্তারী তিন দিনও একটা ঘোর থেকে এই বিশ্বকাপকে বের করে আনতে পারছে না। ঘোরের নাম গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

৭ নভেম্বর মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ওই অতিমানবীয় ব্যাটিং প্রদর্শনীতে ম্যাক্সওয়েল বেঁধে দিয়েছেন ব্যাটসম্যানশিপের নতুন এক মানদণ্ড। জয়-পরাজয় ছাপিয়ে খেলার সবচেয়ে বড় মহিমা তো এটাই, মানুষের সামর্থ্যের সীমাকে নতুন করে চেনানো। সেটাই চিনিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়া দলের কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড যেমন ম্যাক্সওয়েলের ওই ইনিংসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেখছেন। সেটি কী? ম্যাক্সওয়েলের এই ইনিংস ব্যাটিং-ব্যাকরণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুঃসাহসী সব শট খেলার সাহস জোগাবে আগামী প্রজন্মের ব্যাটসম্যানদের। উদাহরণ দিতে গিয়ে দুটি নাম বলেছেন। এবি ডি ভিলিয়ার্স ও রিকি পন্টিং।

ডি ভিলিয়ার্স কেন, তা মনে হয় ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। এত বছরের ব্যাটিং-ব্যাকরণের বইটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে সেটি নিজের মতো লিখে নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। থ্রি হান্ড্রেড সিক্সটি ডিগ্রি ব্যাটসম্যান, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তবে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম কি না, এ নিয়ে তর্ক হতেই পারে। স্যার গ্যারি সোবার্সকে তো অনেক আগেই এই স্বীকৃতি দিয়ে রেখেছেন ইয়ান চ্যাপেলের মতো আরও অনেকে।

বাংলাদেশের সমর্থকেরা আজ নিশ্চয় এমন বিধ্বংসী ম্যাক্সওয়েলকে দেখতে চাইবেন না

ডি ভিলিয়ার্সই প্রথম নাকি গ্যারি সোবার্স—এই তর্কের মীমাংসা করাটা এই মুহূর্তে জরুরি কিছু নয়। তবে অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড যে ম্যাক্সওয়েলের ওই ব্যাখ্যাতীত ব্যাটিংয়ের প্রসঙ্গে রিকি পন্টিংকে টেনেছেন, তা একটু অবাক করার মতোই। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় অবশ্যই থাকবেন। তবে রিকি পন্টিং নিয়ম ভাঙার গান কবে গাইলেন, তাঁর ব্যাটিং তো অনেকটাই এমসিসির কোচিং ম্যানুয়াল থেকে নেমে আসা।

থাক, এই আলোচনা টেনে নেওয়ার সময়ও এটা নয়। আমরা বরং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলে ফিরি। তা হঠাৎ ম্যাক্সওয়েল কেন? ম্যাক্সওয়েলের ওই ডাবল সেঞ্চুরি নাহয় বিশ্বকাপ ছাড়িয়ে ওয়ানডে ইতিহাসেরই সেরা ইনিংসের সর্বজনগ্রাহ্য স্বীকৃতি পেয়ে গেছে, তবে এটি তো চার দিন আগের গল্প। এরপরও ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে পড়ার কারণ মনে হয় আপনি অনুমান করে ফেলেছেন।

ওই ইনিংসের পর আজই যে ম্যাক্সওয়েলকে দেখার প্রথম সুযোগ। এই বিশ্বকাপে স্বাগতিক ভারতের ম্যাচে নীল সমুদ্রের রূপ নিচ্ছে গ্যালারি। কিন্তু অন্য সব দলের ম্যাচে তা অর্ধেক ভরলেও সেটিকে মনে হচ্ছে চমক। কাল সকালে পুনের স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া ট্যাক্সি ড্রাইভারের কথা থেকেই কারণটা বুঝে ফেলা যায়। ভারতের দর্শক এখন আইপিএলের অপেক্ষায় থাকে। সারা দিন ধরে অন্য দলের ওয়ানডে দেখার সময় তাদের নেই।

মাংসপেশির টান নিয়েই আগের ম্যাচে খেলা চালিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়মরক্ষার হওয়ায় আজ ম্যাক্সওয়েল নাও খেলতে পারেন

আজও ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। অস্ট্রেলিয়ার জন্য এটি জয়রথকে টানা সাত ম্যাচে নিয়ে যাওয়ার উপলক্ষ হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য হতাশাময় এক বিশ্বকাপের শেষটা ভালো করার। কিন্তু বিশ্বকাপের বৃহত্তর ছবিতে তো এই ম্যাচের কোনো তাৎপর্যই নেই। শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে পুনে-মুম্বাই হাইওয়ের পাশে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আজ তাই শূন্যতার হাহাকারই থাকার কথা। সেই গ্যালারিও তো অনেক বড়। ধারণক্ষমতা ৪২ হাজারের বেশি। ঐতিহ্যের বিচারে অনেক এগিয়ে থেকেও মুম্বাই-চেন্নাই-বেঙ্গালুরুর স্টেডিয়ামও যেখানে হেরে যায় পুনের এমসিএ স্টেডিয়ামের কাছে।

তা আজ সকালে যে কয়েক হাজার দর্শকই গ্যালারিমুখী হোন না কেন, তাঁরা কাকে দেখতে যাবেন, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু লাখ টাকার একটা প্রশ্ন যে থাকছেই। ম্যাক্সওয়েলকে কি দেখতে পাবেন তাঁরা? অস্ট্রেলিয়া দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারলেন না। ফিটনেস টেস্টের ব্যাপার নেই। ম্যাক্সওয়েল চাইলে খেলবেন, না চাইলে না। মুম্বাইয়ের ওই ইনিংসের ধকল কতটা সামলাতে পেরেছেন, এর ওপরই নির্ভর করছে সব। পুনেতে আসার পর গতকালই প্রথম অনুশীলনে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাক্সওয়েল আসেননি।

মাঠে বোলারদের আতঙ্ক ম্যাক্সওয়েল পরিবারের কাছে ফিরলেই হয়ে ওঠেন সংসারী লোক

হোটেলে শুধুই শুয়ে-বসে সময় কাটানোর সুযোগ অবশ্য পাচ্ছেন বলে মনে হয় না। মুম্বাইয়ের ওই ব্যাটিং দেখে তাঁকে অতিমানব বলে ভুল হতেই পারে। তবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও যে আর দশজনের মতোই সাধারণ মানুষ, সেটির প্রমাণ পাওয়া গেল টানা দ্বিতীয় সন্ধ্যায় তাঁকে কনরাড পুনে হোটেলের লবিতে দেখে। শিশুপুত্র লোগানকে প্যারাম্বুলেটরে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। গত পরশু হোটেলে চেক ইন করার সময় অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকেরাও সেখানে উপস্থিত। তাঁদের একজনের ‘এখন কেমন বোধ করছেন’ প্রশ্নে ম্যাক্সওয়েলের এক শব্দে উত্তর। ভদ্র বাংলা করলে অবশ্য তা দুই শব্দ হয়ে যাচ্ছে—‘বর্জ্য পদার্থ’!

মাঝখানে আরেকটা দিন গেছে। ম্যাক্সওয়েলের বিধ্বস্ত শরীর মাঠে নামার উপযুক্ত হয়ে উঠেছে কি না, কে জানে! তবে আজ সকালে অস্ট্রেলিয়ার একাদশে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের নামটা না দেখলে গ্যালারি যে সম্মিলিত দীর্ঘশ্বাস ফেলবে, তা তো জানা কথাই। স্বস্তির নিশ্বাসও পড়বে। বুঝতেই পারছেন, কাদের।

বাংলাদেশের বোলারদের!