মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম
মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম

টি–টোয়েন্টিতে হযবরল পাকিস্তানের টপ অর্ডার

উসমান খান—টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, নাকি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান? উসমানের দুই ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দেখলে মনে হবে, তিনি একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, মিডল অর্ডারে পারফর্ম করেই হয়তো তিনি দলে এসেছেন। কারণ, নিউজিল্যান্ড সিরিজে অভিষেক হওয়া এই ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত খেলা দুই ম্যাচে ব্যাটিং করেছেন ৪ নম্বরে।

মিডল অর্ডারে খেলা এই ব্যাটসম্যান আসলে একজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর করা মোট রানের প্রায় ৮০ শতাংশই এসেছে টপ অর্ডারে ব্যাট করে। তাহলে পাকিস্তানের পরীক্ষা নিরীক্ষার নিউজিল্যান্ড সিরিজে উসমানকে কেন টপ অর্ডারে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না? উসমানের ব্যাটিং অর্ডারের মতো এমন কয়েকটি প্রশ্নই বিশ্বকাপের আগে এখন পাকিস্তানের সামনে।

অনেকেই ভাবতে পারেন, ৩ নম্বরে ব্যাটিং করা আর ৪ নম্বরে ব্যাটিং করার মধ্যে পার্থক্যটা কি খুব বেশি? সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর নেই, তবে অন্য দুই সংস্করণের চেয়ে ২০ ওভারের খেলায় পার্থক্য কিছুটা তো আছেই, আর উসমানের বেলায় এই পার্থক্যটা আরও বেশি। এটা প্রমাণে পরিসংখ্যানের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।  

পিএসএলের সর্বশেষ মৌসুমে উসমান খান ৭ ইনিংসে ৪৩০ রান করেছিলেন

৩৯ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে উসমান সব মিলিয়ে রান করেছেন ১২১৯। সেখানে ওপেনিংয়ে নেমে করেছেন ৬০১ রান, তিন নম্বরে ৩৭৪। ওপেনিংয়ে উসমানের স্ট্রাইকরেট ১৫২ আর তিন নম্বরে ১৬৪। এই উসমানই ৪ ও ৫ নম্বরে খেলে কত স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন জানেন, ১১৫! চলতি বছরে উসমান ১০ ইনিংসে ওপেন করে আউট হয়েছেন মাত্র দুবার, পাওয়ারপ্লেতে তুলেছেন ওভারপ্রতি ৯ রানের বেশি করে।

অর্থাৎ, এটা স্পষ্ট উসমান নতুন বলটাতেই বেশি ভালো খেলেন। সর্বশেষ পিএসএলে পারফর্ম করেই উসমান পাকিস্তানি ক্রিকেট কর্তাদের নজরে এসেছেন। সেই টুর্নামেন্টে ৭ ইনিংসে ৪৩০ রান করেছিলেন উসমান, স্ট্রাইকরেট ছিল ১৬৪, গড় ১০৭.৫০। এর সবটাই টপ অর্ডারে ব্যাটিং করে। তবু পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক সিরিজে উসমান ব্যাট করছেন ৪ নম্বরে!

সিরিজটি পরীক্ষা–নিরীক্ষার আগেই বলেছেন অধিনায়ক বাবর আজম। তাহলে উসমানের নম্বর চারে ব্যাটিং কি সেই পরিকল্পনারই অংশ? আসলে তা নয়, পাকিস্তানের সমস্যা আরও গভীরে। আর এই ‘সমস্যা’র কারণ অধিনায়ক বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ানই।

টি–টোয়েন্টিতে কোথায় খেলবেন ফখর

মূলত পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত ওপেন করেন বাবর-রিজওয়ানই। রানের হিসেবে এরা দুজনই সফল। ৫১ ইনিংসে দুজনের জুটি থেকে এসেছে ২৪০০ রান, যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ। গড়েছেন ৮টি শতরানের জুটি। টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শতরানের জুটি (৪টি) এসেছে রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের ওপেনিং জুটি থেকে। তবে তাঁরা দুজনই একটু ধীরগতির ব্যাটিং করেন, সেই অর্থে পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোর কথা ভাবেন না।

তাই গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সিরিজে এদের জুটি ভাঙা হয়। ওপেনিংয়ে রিজওয়ানের সঙ্গে আনা হয় সাইম আয়ুবকে, যার কাজই হচ্ছে পাওয়ারপ্লে কাজে লাগানো। বাবর ব্যাট করেন তিনে। বাবর অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়ার পর নিউজিল্যান্ড সিরিজে সাইমের সঙ্গে তিনি ওপেন করেন, তিন নম্বরে ব্যাট করেন রিজওয়ান। সে ক্ষেত্রে টপ অর্ডারে উসমানের সুযোগ নেই! সুযোগ পেতে হলে রিজওয়ান বা বাবরকে আরও নিচের ব্যাটিং করতে হবে অথবা সাইমকে ওপেনিং থেকে সরাতে হবে। সেটা কি আদৌ সম্ভব?

উসমানের প্রসঙ্গ ভুলে যান। পাকিস্তান ক্রিকেটে এই সময়ের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ফখর জামানই কোথায় ব্যাট করবেন? ওপেনার ফখর কি ৪ নম্বরে ব্যাট করবেন? সে ক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে রিজওয়ান কিংবা বাবরকে কাউকে আরও নিচের দিকে ব্যাটিং করতে হবে। তবে সেটাও ফলপ্রসূ হবে? কারণ, এদের কেউই ওই অর্থে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেন না।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ক্রিকেট পাকিস্তান ও জিও সুপার জানিয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্ট রিজওয়ানকে ৪ নম্বরে খেলাতে চান, তবে বাবর সেটা চান না। এমনকি রিজওয়ানও নিয়মিত রান করায় ওপেনিংয়েই খেলতে চান। তাই সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানের টপ অর্ডারের অবস্থান হযবরল!