সবচেয়ে ভালো খেলা চারটি দলই এসেছে সেমিফাইনালে, ফাঁকফোঁকর দিয়ে কেউ আসতে পারেনি। আশা করি দুটি ম্যাচই জমবে। অবশ্যই আজকের দুই দলের প্রথম পর্বের ফলাফলে বড় একটা তারতম্য আছে, ভারত তো প্রায় সব কটি ম্যাচই জিতেছে বিশাল ব্যবধানে। মনেই হয় না, বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে খেলছে। অবশ্য নিউজিল্যান্ডও যেগুলো জিতেছে, প্রায় বড় ব্যবধানেই। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৪০০-এর মতো রানও তাড়া করে ফেলেছিল প্রায়।
ব্যাটিং ও বোলিং—দুটি বিভাগেই দুর্দান্ত ফর্মে ভারত। তাদের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান অনেক রান করেছেন। নিচের দিকের ব্যাটসম্যানরা তাই সেভাবে সুযোগই পাননি। তাঁদের চাপের মুখে পড়তেও হয়নি। এটিই নিউজিল্যান্ডের পথ খুলে দিতে পারে। শুরুতে কয়েকটি উইকেট নিতে পারলে ভারত এমনভাবে চাপে পড়তে পারে, যে চাপে এবার তারা পড়েনি। নিউজিল্যান্ড যেকোনো দিনই ভারতকে হারানোর সামর্থ্য রাখে। ভারতও সেটি জানে।
ভারতের সুবিধা হচ্ছে, আগে ব্যাটিং করে বড় স্কোর দাঁড় করাতে পারলে তাদের বোলাররা আরও কঠিন হয়ে উঠবেন। সন্ধ্যার দিকে পাওয়া বাড়তি সুইং তাঁরা দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। তবে ভারতের পেসাররাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছেন প্রায়, ফলে রবীন্দ্র জাদেজা বা কুলদীপ যাদবকে সেভাবে ভূমিকা রাখতে হয়নি। তাদের স্পিনাররা সেখানেই বেশি উইকেট পেয়েছেন, যেখানে উইকেট সহায়ক ছিল।
রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল—দুজনই শুরুতে আক্রমণাত্মক খেলছেন। এ ম্যাচে কি সেটি বদলাবেন তাঁরা? ভারত যদি তাদের স্বাভাবিক খেলা থেকে একটু সরে আসে, সেটাই তাদের ঝামেলা তৈরি করতে পারে। আবার শুরুতে মুভমেন্ট থাকার পরও রোহিত-গিলরা যদি চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে দুয়ার খুলে যেতে পারে নিউজিল্যান্ডের। ম্যাচে টিকে থাকতে গেলে প্রথম ১০ ওভারে ২-৩টি উইকেট নিতে হবে তাদের। এমনিতে এই ভেন্যুর উইকেট পরের দিকে ব্যাটিংয়ের জন্য অনেক ভালো থাকতে দেখেছি। শুরুতে দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়াই গড়ে দেবে ম্যাচের ফলাফল।
তিন পেসারই সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে ভারতের। কোনোভাবে যদি নতুন বলে মুভমেন্ট না মেলে, তাহলে তাঁরা কেমন করেন, সেটিই দেখার বিষয়। তাঁরা পাঁচ বোলার নিয়ে খেলছেন। নিউজিল্যান্ড একটু দেখেশুনে খেলে যদি মোহাম্মদ সিরাজের মতো কাউকে চাপে ফেলতে পারে, সে ক্ষেত্রে একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে আগে ব্যাটিং করলে। অবশ্য বোলিংটা নিউজিল্যান্ডের একটু ভাবনার বিষয়। ট্রেন্ট বোল্ট প্রত্যাশা পুরোপুরি মেটাতে পারেননি নতুন বলে উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে, মিচেল স্যান্টনারও সেভাবে উইকেটের দেখা পাচ্ছেন না। গ্লেন ফিলিপসের মতো পার্টটাইমার ভারতের বিপক্ষে কতটা কার্যকরী হবেন, সেটিও প্রশ্ন। পেসাররা যদি শুরুতে উইকেট এনে দিতে না পারেন, তাহলে ভারতকে আটকানো মুশকিল হবে নিউজিল্যান্ডের।
দুই দলই শুরুতে আক্রমণাত্মক খেলে, ফলে সুযোগও আসতে পারে। ম্যাচের গতিপথ ঠিক হতে পারে এখানেও। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং আবর্তিত হবে কেইন উইলিয়ামসনকে ঘিরে, উইকেট ধরে রাখার দায়িত্বটা নিতে হবে তাঁকে। অন্যদিকে বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল যেকোনো পরিস্থিতি থেকে দলকে বের করে নিয়ে আসতে পারেন।
এ ম্যাচে ভারতই ফেবারিট, কিন্তু খুব বড় ব্যবধানে নয়। সব মিলিয়ে তারা চাপেও থাকবে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের হারানোর কিছু নেই।
গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক