ব্যাটিং দেখতে যাঁরা ভালোবাসেন, কালকের রাতটা তাঁদের জন্য। ওহ, শুধু ব্যাটিং ভালোবাসলেই যে হবে না! ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকেও খানিকটা গুরুত্ব দিতে হবে। অন্তত চোখ রাখতে হবে।
টিভি পর্দায় চোখ রেখে থাকলে জিমি নিশাম থেকে লিটন দাস-তাওহিদ হৃদয় এবং বাবর আজম থেকে আজম খান—এক রাতে সবার ব্যাটিংয়ের সেরাটা দেখার কথা। কাল মিরপুরে নিশাম নান্দনিক ব্যাটিং প্রদর্শনীর যে শুরুটা করেছিলেন, তার শেষটা হয়েছে লাহোরে আজম খানকে দিয়ে। নিশাম-আজম দুজনই অবশ্য একদিক থেকে দুর্ভাগা। দুজনের ইনিংসই বৃথা গেছে। মানে, তাঁদের দল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি।
কাল বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের কিউই অলরাউন্ডার নিশাম যখন ক্রিজে আসেন, ততক্ষণে তাঁর দল রংপুর বিপদে, ৪.৪ ওভারে ২৭ রানে হারিয়েছে ৩ উইকেট। শুরুতে তাই তিনি ইনিংস ধরে খেলেছেন, শেষে গিয়ে হাত খুলেছেন। ইনিংস ধরেছেন ‘আধুনিক অ্যাংকর’দের মতোই। অর্থাৎ রানের চাকা সচলও রেখেছেন। এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার ফিফটি করেন ৩১ বলে।
রংপুরের ১৮ ওভার শেষে নিশামের রান ছিল ৩৯ বলে ৬০। সেখান থেকে শেষ ১০ বলে তিনি করেন ৩৭ রান। টুর্নামেন্টের ‘ভাবমূর্তির’ দিক থেকেও এই ইনিংস গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, যেভাবে ইনিংসের শেষ দিকে একের পর এক বাউন্ডারি মেরেছেন নিশাম, বিপিএলে এমনটা দেখা কমই যায়। নিশামের অপরাজিত ৯৭ রানের সুবাদেই রংপুর ১৮৫ রানের বড় সংগ্রহ পেয়ে যায়।
যেকোনো দিনই মিরপুরে ১৮৬ রান তাড়া করা কঠিন। প্রথম বলেই উইকেট পড়লে তো আরও বিপদ। তবে গত রাতে রংপুরের বিপক্ষে সেই কঠিন কাজটা সহজেই করে কুমিল্লা। ১৮৬ রান তাড়া করে ৯ বল হাতে রেখে। হৃদয় আর লিটনের অবিশ্বাস্য এক জুটির কারণেই কুমিল্লা পঞ্চমবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠে গেছে। এই জুটি থেকে এসেছে ৮৯ বলে ১৪৩ রান, যেখানে ছিল লিটনের ক্ল্যাস, আর হৃদয়ের সাহস।
হৃদয় করেন ৪৩ বলে ৬৪ আর লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৭ বলে ৮৩ রান। স্থানীয় ক্রিকেটাররা বিপিএলে সব সময়ই পার্শ্বনায়ক। তাঁদের কাজ মূলত বিদেশি ক্রিকেটারদের জন্য মঞ্চ তৈরি করে দেওয়া। গত রাতে রংপুর ১৮৬ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পরও এমন আলোচনা চলছিল। লিটন-হৃদয়রা আন্দ্রে রাসেল আর মঈন আলীর জন্য ভিত গড়ে দিতে পারবেন তো! শেষ পর্যন্ত লিটন-হৃদয় রাসেল-মঈনদের জন্য মঞ্চ তৈরি করেছেন। তবে সেটা পারফর্ম করার জন্য নয়, বিজয় উদ্যাপনের জন্য।
হৃদয়-লিটন যখন ঢাকায় ঝড় তুলেছেন, ১৮০০ কিলোমিটার দূরে লাহোরে কাজটা করেছেন বাবর। পেশোয়ার জালমির অধিনায়ক বাবর গত রাতে পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি। ৩৯ বলে ফিফটি করা বাবর কাল সেঞ্চুরি করেন ৫৯ বলে। অর্থাৎ পরের ফিফটি করতে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের লেগেছে মাত্র ২০ বলে।
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে বাবরের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি এখন শুধু ক্রিস গেইলের—২২টি।
১৪ চার আর ২ ছয়ে করা এই সেঞ্চুরিকেই ক্যারিয়ারের সেরা বলছেন বাবর। এর পেছনে অন্য একটা কারণ আছে। গতকালই প্রথমবার মাঠে খেলা দেখতে এসেছেন বাবরের মা। এমন দিনে সেঞ্চুরি বিশেষ কিছু তো হবেই, ‘আমার মা প্রথমবার খেলা দেখতে এসেছেন, তাঁকে খুব খুশি মনে হয়েছে। তিনি সব সময় বাড়িতেই আমার খেলা দেখেন। আমি ভাগ্যবান, যেদিন মা (মাঠে) এসেছেন, সেদিন সেঞ্চুরি পেয়েছি। এটাই আমার সেরা সেঞ্চুরি।’
বাবরের রাতটা কাল হতে হতেও আজম খানের হয়নি। আজম যখন ক্রিজে আসেন, ২০২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের রান তখন ৯.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৭৩। এরপর ৩০ বলে ৬ চার ও ৬ ছক্কায় তিনি করেন ৭৫ রান। আজমের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে একসময় ম্যাচটা হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল ইসলামাবাদের।
শেষ তিন ওভারে দলটির প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। আজমের সঙ্গে ক্রিজে তখন আরেক হার্ড হিটার কলিন মানরো। কিন্তু সেই সমীকরণ ইসলামাবাদ মেলাতে পারেনি, হেরেছে ৮ রানে। পারেনি এক বোলারের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ের কারণে। ১৯তম ওভারে পাকিস্তানি লেগ স্পিনার আরিফ ইয়াকুব নেন ৪ উইকেট। ইয়াকুবের সেই ওভারই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
এই যে দেখুন, ব্যাটসম্যানদের রাতে আলো ছড়ালেন এক বোলারও। এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? ক্রিকেট তো ব্যাট-বলেরই খেলা। একটা ছাড়া আরেকটা হয় নাকি!