ডাচদের হারিয়ে উল্লাস শ্রীলঙ্কা দলের খেলোয়াড়দের
ডাচদের হারিয়ে উল্লাস শ্রীলঙ্কা দলের খেলোয়াড়দের

নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে শ্রীলঙ্কা

নেদারল্যান্ডস বেঞ্চেও তখন হতাশার ছাপ। ১৮ বলে দরকার ৪৪ রান, হাতে মাত্র ২ উইকেট। জেতার আর সুযোগ কই!

কিন্তু ম্যাক্স ও’ডাউডের মনে ছিল ভিন্ন কিছু। ৩৮ রান তুলতে এরই মধ্যে ৩৫ বল খেলে ফেলেছেন। তবু শেষ তিন ওভারের কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে ফেলার আশা ছিল তাঁর। বোলিং করতে আসা বিনুরা ফার্নান্দোর প্রথম তিন বলেই হাঁকালেন বাউন্ডারি—ছয়, চার, চার।

পরের ওভারে মহীশ তিকশানার বলে আরও দুই ছয়। প্রায় নাগালের বাইরে চলে যাওয়া ম্যাচ মুহূর্তেই মুঠোর কাছাকাছি। তবে একা ব্যাট চালিয়ে আর কতটা সামাল দেওয়া যায়। অপর প্রান্ত থেকে বড় শট না আসায় থমকে যেতে হলো আগেই।

শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেটে তোলা ১৬২ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে নেদারল্যান্ডসের স্কোর আটকাল ৯ উইকেটে ১৪৬ রানে। ৫৩ বলে ৭১ রানে অপরাজিত থেকেও ও’ডাউড ১৬ রানের পরাজিত দলে।

প্রথম ম্যাচে নামিবিয়ার কাছে হারলেও টানা দুই জয়ে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা

এই জয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে উঠল শ্রীলঙ্কা। হেরে যাওয়া নেদারল্যান্ডসের সম্ভাবনাও অবশ্য শেষ হয়ে যায়নি। দিনের অপর ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাত নামিবিয়াকে হারালে নেদারল্যান্ডস উঠে যাবে পরের পর্বে।

জিতলে রানরেটে এগিয়ে সুপার টুয়েলভে উঠবে নামিবিয়া।

জিলংয়ের কারদিনিয়া ওভালে নেদারল্যান্ডস খেলতে নেমেছিল দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে। তবে নামিবিয়া ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে পাওয়া জয় দুটিতে ব্যবধান ছিল স্বল্প, রানরেটও ছিল কম। বিপরীতে নামিবিয়ার কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা শ্রীলঙ্কার ভান্ডারে ছিল আমিরাতকে হারানোর ২ পয়েন্ট।

তবে একমাত্র জয়টির ব্যবধান বেশি (৭৯ রান) হওয়ায় রানরেট ছিল বেশ ভালো। যে কারণে জিতলেই প্রথম রাউন্ড উতরে যাওয়ার সুযোগ ছিল লঙ্কানদের। আর সেই সুযোগই কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কাকে সুপার টুয়েলভে উঠিয়েছেন কুশল মেন্ডিস।

২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নেদারল্যান্ডসকে আটকে দেওয়ায় বড় ভূমিকা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার। তার আগে দেড় শর বেশি রানের পুঁজি গড়ে দেওয়ার মূল কাজটি করেছেন কুশলই।

দারুণ এক ইনিংস খেলেন কুশল মেন্ডিস

টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর প্রথম থেকেই রান তুলতে হিমশিম খেয়েছেন পাতুম নিশাঙ্কা। ২১ বলে ১৪ রান করে নিশাঙ্কা আউট হওয়ার পর একই সংগ্রাম করতে হয় অন্যদেরও। তবে একপ্রান্ত ধরে রাখা কুশল যেন ভিন্ন উইকেট আর ভিন্ন বোলিংয়ের বিপক্ষে ব্যাট করছিলেন!

২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এটি ছিল তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি, যেখানে ৫টি চারের সঙ্গে ছয়ও ৫টি। শেষ দিকে হাত খুলে খেলা কুশলের নৈপুণ্যে শেষ ১০ ওভারে ১০২ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। কুশল ছাড়া দলের অন্য ৭ ব্যাটসম্যান মিলে তোলেন ৭৯ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ বলে ৩১ রান করেন চারিত আসালাঙ্কা।

স্কোরবোর্ডে ১৬২ রান তুলেও অবশ্য শ্রীলঙ্কা কিছুটা ভাবনায় ছিল। বিশেষ করে প্রথম পছন্দের পেসারদের অনুপস্থিতি কতটা ভোগায়।।

৫৩ বলে ৭১ রানের অপরাজিত ইনিংসেও নেদারল্যান্ডসকে জেতাতে পারেননি ম্যাক্স ও’ডাউড (বাঁয়ে)

প্রথম ম্যাচের আগের দিন ছিটকে গিয়েছিলেন দিলশান মাদুশঙ্কা। আরেক পেসার দুষ্মন্ত চামিরার টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেছে তৃতীয় ম্যাচের আগের দিন। দুজনের পর যিনি ভরসা হতে পারতেন, অসুস্থতার কারণে সেই প্রমদ মাদুশানও এই ম্যাচে একাদশের বাইরে।

প্রধান তিন বোলার না থাকায় শ্রীলঙ্কা বোলিং বিভাগ সাজায় স্পিনার দিয়ে। হাসারাঙ্গা আর তিকশানার সঙ্গে ধনঞ্জয়া।

পেসে লাহিরু কুমারার সঙ্গী চামিরার বদলে আসা বিনুরা। ১৮তম ওভারে ও’ডাউডের কাছে ১৫ রান হজম করে দলকে শঙ্কায়ও ফেলে দিয়েছিলেন বিনুরা। তবে স্পিনাররা আগেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিলেন বলে রক্ষা। হাসারাঙ্গা ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট, সমান ওভারে ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট তিকশানার।

এ দুজনের সঙ্গে কুমারা ও বিনুরার একটি করে উইকেট মিলিয়ে ১০৯ রানে নেদারল্যান্ডসের ৮ উইকেট তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। ম্যাচ প্রায় শেষ ওখানেই। তবে ও’ডাউডের ঝোড়ো ইনিংস যা আরেকটু দীর্ঘায়িত করে।

তবে শেষ পর্যন্ত হাসিমুখ শ্রীলঙ্কারই; জয়ের, এবং সুপার টুয়েলভে জায়গা করারও।