ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে হাস্যোজ্জ্বল দুই অধিনায়ক বাংলাদেশের নিগার সুলতানা (ডানে) ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসা হিলি। গতকাল মিরপুরে
ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে হাস্যোজ্জ্বল দুই অধিনায়ক বাংলাদেশের নিগার সুলতানা (ডানে) ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসা হিলি। গতকাল মিরপুরে

বাংলাদেশ–অস্ট্রেলিয়া মেয়েদের সিরিজ

ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিগারদের

সংবাদ সম্মেলনকক্ষে এসে একবার সাংবাদিকদের ভিড়টা দেখে নিলেন অ্যালিসা হিলি। টিভি ক্যামেরাগুলো তখনো সাজানো হয়নি। হিলি এসে বসার পর তো তাঁর সামনে টেলিভিশন চ্যানেলের মাইক্রোফোনের ছোট্ট পাহাড়ই তৈরি হয়ে গেল।

প্রশ্ন-উত্তর পর্ব শুরুর আগে মুখে স্মিত হাসি ছড়িয়ে হিলি এক এক করে গুনে নিলেন মাইক্রোফোনগুলো। মেয়েদের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সাংবাদিকদের এমন ভিড় হয়তো তাঁর কাছেও নতুন। সাংবাদিকদের হইচই দেখে অবাক হয়েছেন এর আধঘণ্টা আগে সংবাদ সম্মেলন করে যাওয়া বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানাও।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া নারী দলের সিরিজ নিয়ে আসলেই সবার মধ্যে তুমুল আগ্রহ। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলেই এই সিরিজ নিয়ে এত আলোচনা। দলটা সাতবারের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে ছয়বার। দুই সংস্করণেই তারা বর্তমানে আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে।

মেয়েদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকেও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় করে ফিরেছে

বিসিবির নারী বিভাগের হেড অব অপারেশনস হাবিবুল বাশার তো অস্ট্রেলিয়ার এই দলটাকে ওয়াহ-পন্টিংদের অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গেই তুলনা করে ফেললেন। এমন একটা দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েদের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সিরিজের আগে একটু হইচই, উন্মাদনা তো থাকবেই।

শুধু ক্রিকেট নয়, অনেকের চোখে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের এই দলটা যেকোনো খেলার ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা দল। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সেই অস্ট্রেলীয়দের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবেন বাংলাদেশের মেয়েরা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে ম্যাচ। বিসিবির ইউটিউব চ্যানেল ও টি স্পোর্টসে ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

সিরিজটি ঘিরে বাংলাদেশের মেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই রোমাঞ্চিত। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা কাল সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত অবশ্যই (সবচেয়ে বড় সিরিজ)। তারা বিশ্বের অন্যতম ভালো দল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। তাদের বিপক্ষে খেলা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় অভিজ্ঞতা হবে।’

সংবাদ সম্মেলেনে বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা। গতকাল মিরপুরে

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে বাংলাদেশের দেখা হয়েছে মাত্র তিনবার। ওয়ানডেতে দুই দল একবারই মুখোমুখি হয়েছে, ২০২২ সালের নারী বিশ্বকাপে। বাকি ২ বার ২০২০ ও ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় সিরিজই তাই বলা যায় এটিকে। অবশ্য বাংলাদেশের মেয়েদের সৌভাগ্য, দল হিসেবে তারা যখন সেরা ছন্দে, তখনই বিশ্বসেরাদের পাচ্ছে নিজেদের আঙিনায়। গত বছর ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে হারিয়েছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে। বছর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো জিতেছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া হলেও নিকট অতীতের এসব সাফল্যে নিগার আত্মবিশ্বাসী, ‘সম্প্রতি যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলেছি, তখন মনে হয়েছে, আমাদের ব্যাটিংটা শক্তিশালী। ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে যখন খেলেছি, তখন আবার মনে হয়েছে, আমাদের বোলিংটাই শক্তিশালী। এটা দলের জন্য ভালো লক্ষণ। দুটি বিভাগেই দল অনেক ভালো জায়গায় আছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কাল (আজ) কোন বিভাগ দলের হয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে।’

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের আগে অনুশীলনে চনমনে মারুফা–ফাহিমারা

অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে হারাতে নিগারের প্রথম অস্ত্র ঘরের মাঠের সুবিধা, ‘প্রথমত, হোম কন্ডিশন। আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া কখনোই যেহেতু খেলেনি এখানে, এখানকার কন্ডিশন তাদের জন্য অনেক বেশি অচেনা হবে।’

অন্যদিকে ঘরের মাঠ বরাবরই বাংলাদেশের বড় শক্তি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও সেটি ধরে রাখতে চান নিগার, ‘এই মাঠ বা যেকোনো জায়গায়ই হোক, আমাদের বোলাররা অনেক বড় বড় ম্যাচে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভালো পারফর্ম করেছে। সেদিক থেকে অনেক আত্মবিশ্বাসী আমি।’

বাংলাদেশে যে স্পিনই প্রধান হুমকি হবে, সেটা অস্ট্রেলিয়াও জানে। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিলি অবশ্য সে পরীক্ষার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। তা ছাড়া তাদের ভাবনায় আছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় নারী বিশ্বকাপও। সিরিজটিকে অস্ট্রেলিয়া দেখছে তারই প্রস্তুতি হিসেবে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজটাকে।

অস্ট্রেলিয়া নারী দলের মাত্র দুজনেরই এর আগে বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা আছে, অধিনায়ক হিলি ও এলিস পেরি। দুজনই খেলেছেন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। বাকিদের জন্য বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে প্রথম অভিজ্ঞতা। হিলি বলছিলেন, ‘আবার এখানে ফিরতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। আশা করি, এখানকার কন্ডিশন ভালোভাবে বুঝতে পারব। এখান থেকে আমাদের যতটা সম্ভব তথ্য জোগাড় করতে হবে। কারণ, বছর শেষে বিশ্বকাপ হবে এখানেই।’

অ্যালিসা হিলি (বাঁয়ে) ও এলিস পেরি ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান দলটার আর কারও বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা নেই

বিশ্বকাপের কথা মাথায় রাখলে সিরিজটা বাংলাদেশ নারী দলের জন্যও বড় প্রস্তুতির সুযোগ। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়ে ইতিহাস গড়তে পারলে সেটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে নিগারের দলকে।