ব্যাটসম্যান নাজমুল কেমন করছেন?
ব্যাটসম্যান নাজমুল কেমন করছেন?

নেতৃত্বের চাপে নুয়ে পড়ছেন না তো নাজমুল

একজন অধিনায়ককে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে দলের বাকিদের জন্য তৈরি করতে হয় উদাহরণ। যার মানে, অধিনায়ক হওয়ার পূর্বশর্ত পারফরম্যান্স। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের ক্ষেত্রে বিষয়টি কি একটু অন্য রকম!

নেতৃত্ব পাওয়ার আগে তিনি যে ধারাবাহিকভাবে রান করেননি, তা নয়। তবে সেটা তিনি করেছেন খুব অল্প সময়ের জন্য। তিন সংস্করণে জায়গা পাকা হতে না হতেই পেয়েছেন নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব। অধিনায়ক নাজমুল কি তাঁর দায়িত্বের পূর্বশর্ত পালন করতে পারছেন?

প্রশ্নটি নতুন নয়। নাজমুল আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই এই প্রশ্ন উঠেছে। এটা তাঁর পারফরম্যান্সের কারণেই। পরিসংখ্যান বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়ক হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে ‘অধারাবাহিক পারফরম্যান্স’ করছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।

শুরুতে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি দিয়ে তাঁর অধিনায়ক হওয়ার আগে ও পরের পরিসংখ্যান বিচার করা যাক। পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়ক হওয়ার পর টি-টোয়েন্টিতে ১৭ ইনিংস ব্যাটিং করে নাজমুলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস মাত্র ৫৩। সেটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ বছরের মার্চে। এই ১৭ ইনিংসের মধ্যে আটবার তিনি আউট হয়েছেন এক অঙ্কের ঘরে।

চলতি বছরে পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়কত্ব পান নাজমুল

১৭ ইনিংসে তাঁর গড় ১৯.১২। টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ওয়ানডের মতো—১০০.০০ স্ট্রাইক রেটে। পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়ক হওয়ার আগেও নানা কারণে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তখন ব্যাটিং করেছেন আরও দুই ইনিংস। সব মিলিয়ে অধিনায়ক হিসেবে ১৯ ইনিংসে ১৯ গড়ে রান করেছেন মোট ৩৪২, স্ট্রাইক রেট ১০২.০৮।

অধিনায়ক হওয়ার আগে টি-টোয়েন্টিতে নাজমুল ২৫ ম্যাচে ২৬.৯৫ গড়ে করেছেন ৫০৮ রান। ৩ ফিফটিতে এই রান তিনি করেছেন ১১১.৪১ স্ট্রাইক রেটে। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ৭১ রানের। ক্যারিয়ার গড়ও অধিনায়ক হিসেবে গড়ের চেয়ে বেশি, ২৩.২৮।

টেস্টেও পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার আগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই নেতৃত্বের শুরুটা তো হয়েছিল দুর্দান্তই। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেকেই তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেকেই তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন নাজমুল

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রানের ইনিংস খেলা নাজমুল প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৩৭ রান। দুই ইনিংস মিলিয়ে করা ১৪১ রানও বাংলাদেশের অধিনায়কদের মধ্যে অভিষেকে রেকর্ড। এর আগপর্যন্ত নেতৃত্বের অভিষেক টেস্টে মোট ১১২ রান তুলে শীর্ষে ছিলেন সাকিব।

৯০
টেস্টে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর ৭ ইনিংসে নাজমুলের রান

এমন শুরু করা নাজমুলের টেস্টে সব মিলিয়ে অধিনায়ক হিসেবে গড় মাত্র ২৩.২৭। ৬ টেস্টে ১১ ইনিংসে মোট রান করেছেন ২৫৬। পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর তো পরিসংখ্যানটা আরও বিবর্ণ। ৪ টেস্টে ৭ ইনিংসে মোট রান ৯০। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা খেলেছেন রাওয়ালপিন্ডিতে, পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৮। পাকিস্তান সিরিজের আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ৩২ রান।

অধিনায়ক হওয়ার আগে টেস্টে ২৩ ম্যাচ খেলেছেন নাজমুল। ২৯.৮৩ গড়ে ৪ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে করেছেন ১২৮৩ রান। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ১৬৩। নাজমুলের এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন—তাহলে কি নেতৃত্বের চাপ কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলছে তাঁর ব্যাটিংয়ে!

ভিন্ন গল্পও অবশ্য আছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে নাজমুলের গড়টা আবার ঈর্ষণীয়। সব মিলিয়ে ৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৫২ গড়ে রান করেছেন ৩৬৪। স্ট্রাইক রেটও ভালো—৯২.১৫। এই দফায় নেতৃত্ব পাওয়ার পর ৩ ম্যাচে ব্যাটিং করেছেন ৮১.৫০ গড়ে। ভারত সফরে অবশ্য অধিনায়ক নাজমুলের ‘প্রিয়’ সংস্করণ ওয়ানডে খেলবে না বাংলাদেশ দল। তাই নাজমুলের এই সফরে যা করার, সেটা বাকি দুই সংস্করণেই করতে হবে।

নাজমুলের অধীনে সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ

অধিনায়ক হওয়ার পূর্বশর্ত পারফর্ম করা—এটা যেমন সত্য, তেমনি সব সময় ‘নিয়ম’ মেনে সবকিছু হয় না। নাজমুলের বেলায়ও হয়েছে এটাই। তিনি বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিয়েছেন ভিন্ন এক বাস্তবতায়। সেই সময়ের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চোখের সমস্যায় খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়লে এবং দলে অন্য কোনো ‘যোগ্য বিকল্প না থাকায়’ দায়িত্ব পান নাজমুল। সঙ্গে তাঁর মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাও দেখেছে বিসিবি। বোর্ডের সেই ধারণা ভুল ছিল না, সেটা নাজমুল প্রমাণও করেছেন।

এই দফায় পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের আগে ‘ঠেকার কাজ’ সামলানোর সময়ও দলকে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। প্রথমবার টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া ম্যাচেই দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর স্বাদ পেয়েছিলেন নাজমুল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অধিনায়ক হিসেবে ভালো করেছেন।

ফিল্ডিং সাজানো, বোলিং পরিবর্তন—অধিনায়কত্বের মৌলিক বিষয়গুলোতে তাঁকে লেটার মার্কস দিয়েছেন দেশের ক্রিকেট–পণ্ডিতদের অনেকেই। শুধু এখন এসব গুণের সঙ্গে নিজের পারফরম্যান্সের মিলন ঘটানোই বাকি!

ব্যাটসম্যান নাজমুলের প্রস্তুতির ধরনটা অনেকটা মুশফিকুর রহিমের মতো

ব্যাটসম্যান নাজমুলের প্রস্তুতির ধরনটা অনেকটা মুশফিকুর রহিমের মতো। অনুশীলনে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করে প্রস্তুতি নিতে ভালোবাসেন তাঁরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে হয়তো সেই সুযোগটা কমই পাচ্ছেন নাজমুল। ভারত সিরিজের আগে সেই সুযোগটা কিছুটা হলেও পেয়েছেন। অনুশীলনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটিং করছেন। এবার অধিনায়ক নাজমুল ছন্দটা খুঁজে পেলেই হয়!