মানব ইতিহাসের সেরা যোদ্ধাদের কথা ভাবুন। ভাবুন আলেক্সান্দার, চেঙ্গিস খান ও জুলিয়াস সিজারের কথাও। তাঁদের সঙ্গে আরেকজন এই সময়ের যোদ্ধাকে যোগ করে নিতে পারেন। তাঁর নাম গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আজ তিনি যে ইনিংসটি খেলেছেন, তা হার মানিয়েছে যুক্তিকেও। ম্যাক্সওয়েলের এক পায়ে খেলা এই ইনিংস মানুষের সামর্থ্যের সীমারও যেন পরীক্ষা নিয়েছে। আজকের প্রদর্শনীটি ক্রিকেট ইতিহাসের অমর হয়ে গেছে। ক্রিকেটভিত্তিক পোর্টাল ক্রিকবাজের লাইভ রিপোর্টের শেষে এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসের মাহাত্ম্যকে।
অবিশ্বাস্য ইনিংস বললেও কম বলা হয়। ৯১ রানে অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেট হারানোর পর সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আরেকটি আফগান–রূপকথার গল্প দেখার। কিন্তু কে জানত, তার চেয়ে অবিশ্বাস্য কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছেন একজন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে রীতিমতো কাতরাতে কাতরাতে ব্যাট করে গেছেন শেষ পর্যন্ত।
তাঁর পরিবর্তে মাঠে নামার জন্য একাধিকবার বাউন্ডারি লাইনের কাছাকাছি এসে ফিরে গেছেন সতীর্থ অ্যাডাম জাম্পা। ফিজিও–অধিনায়কও হয়তো অনুরোধ করেছেন মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার। কিন্তু কোনো কিছুই আজ ম্যাক্সওয়েলকে টলাতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড় আর টর্নেডোকে কে আর রুখতে পারে? আফগানিস্তানও পারেনি।
২২ গজি উইকেটে দাঁড়িয়ে রূপকথার জাদুকরের মতো বিবশ করে রেখেছেন আফগান বোলারদের। একপর্যায়ে আফগানিস্তানেরও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না কী হচ্ছে! তবে আফগানদের হুঁশ ফেরার আগেই ছক্কা মেরে দলের জয়ের সঙ্গে নিশ্চিত করেছেন নিজের দ্বিশতকও। যা কিনা এবারের বিশ্বকাপের প্রথম দ্বিশতকও বটে।
তাঁর এই ইনিংসকে এরই মধ্যে ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক গতি তারকা শোয়েব আখতার। নিজের টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘ম্যাক্সওয়েলের এমন মানসিক ও শারীরিক প্রতিভার সাক্ষী হতে পারাটা সম্মানের বিষয় ছিল। এটা ওয়ানডের সর্বকালের সেরা ইনিংসগুলোর একটি।’
ভারতের সাবেক ফাস্ট বোলার ইরফান পাঠানের বাসায় ম্যাচের আগে দাওয়াত খেয়ে গেছেন আফগানিস্তানের খেলোয়াড়েরা। ম্যাচেও সম্ভবত আফগানদের জয় চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যাট হাতে ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসটি ইরফানের কাছে সারা জীবন মনে রাখার মতোই। তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘কিছু ম্যাচ জেতানো ইনিংস এমন যে, যা দেখার পর আপনি দাঁড়িয়ে করতালি বাজাবেন। ম্যাক্সওয়েলের সারা জীবন মনে রাখার মতো একটি ইনিংস।’
ভারেতর সাবেক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষ্মণের কাছে অবশ্য শুধু ওয়ানডেরই নয়, ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলোর একটি মনে হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘ক্রিকেট মাঠের অন্যতম সেরা ব্যক্তিগত ইনিংসগুলোর একটি। কারও দেখা সর্বকালের সেরা ইনিংসগুলোর একটি। কখনো হার না মানার সেরা একটি শিক্ষা। টেইক আ বাউ ম্যাক্সওয়েল।’ সাবেক ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে, ‘রান তাড়া করতে গিয়ে ২০০ রান। সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ইনিংস। যন্ত্রণার ভেতরেও ম্যাক্সওয়েল অটল ছিল। সারাজীবন মনে রাখার মতো একটি ইনিংস।’
ম্যাক্সওয়েলের এই দুর্দান্ত ইনিংসের জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে পেট কামিন্সকেও। পুরোটা সময় দৃঢ়তা নিয়ে সঙ্গ দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। ম্যাচ শেষে ৬৮ বলে ১২ রান করা কামিন্স বলেছেন, ‘এটা ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংস।’ তবে মাইকেল ভনের মনে হয়েছে, এটিই সর্বকালের সেরা ইনিংস। তিনি বলেছেন, ‘এটা সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ইনিংস। এটা হতে পারে যেকোনো ধরনের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ইনিংস।’