বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বেশ সহজেই উঠে এসেছে ভারত। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের জন্য বেশ উত্থান-পতনই ছিল গ্রুপ পর্বে। কাগজে-কলমে হয়তো ভারতের চেয়ে একটু পিছিয়ে নিউজিল্যান্ড, কিন্তু অনেক বেশি নয়। কয়েক বছর ধরেই এ সংস্করণে তারা ধারাবাহিক, গত দুবার ফাইনাল খেলেছে। ভারত আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ৪টি ওয়ানডেই জিতেছে। সেদিক থেকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আজ ভারতেরই মানসিকভাবে এগিয়ে থাকার কথা।
কিন্তু নিউজিল্যান্ড এমন সুশৃঙ্খল ও প্রক্রিয়ানির্ভর একটা দল, যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারে। ব্যাটিং দুই দলেরই দারুণ, ওপরের দিকে রান আসছে, মিডল অর্ডারেও। নিউজিল্যান্ড হয়তো ম্যাচ হেরেছে, কিন্তু কম রান করেনি। অবশ্য রাচিন রবীন্দ্র থাকায় ওদের দলীয় ভারসাম্যটা দারুণ, টপ অর্ডারের একজন ব্যাটসম্যান নিয়মিত বোলিংও করে। ব্যাটিং অর্ডারটাও তাই বেশ লম্বা। হার্দিক পান্ডিয়া না থাকায় ভারতের সেটি নেই।
তবে নিউজিল্যান্ড দলে মিচেল স্যান্টনারের মতো স্পিনার থাকলেও রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদবের কারণে এই জায়গায় ভারতই এগিয়ে। পেস বোলিংয়েও যশপ্রীত বুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ ও মোহাম্মদ শামির হুমকিটা প্রতিপক্ষের জন্য অনেক বড়। এবার প্রথম ১০ ওভারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছে ভারতই (১৯টি)। দুই দলের শক্তির পার্থক্য মূলত বোলিংয়ে। নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ ভারতের মতো নিশ্ছিদ্র নয়।
নিজেদের মাঠে খেলার সুবিধা ভারত পাবে, তবে আজ সব চাপও থাকবে তাদের ওপরই। চাপটা বেশি অনুভূত হবে ম্যাচের কোনো পর্যায়ে যদি তারা পিছিয়ে পড়ে। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সে অর্থে চাপে পড়েনি ভারত। এত সহজভাবে এগোতে থাকলে কিন্তু হোঁচট খাওয়ারও একটা সুযোগ থাকে। আধিপত্য বিস্তার করতে এত অভ্যস্ত হয়ে গেছে দলটা, সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে উল্টোটা হলে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, সেটি দেখার বিষয়। তবে তাদের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানই ম্যাচ জেতানোর মতো, এটা তাদের একটা সুরক্ষা দেবে।
নিউজিল্যান্ডের ওপর তেমন চাপ নেই। দলটা জানে তারা হট ফেবারিট নয়। নিউজিল্যান্ড অবশ্যই চাইবে গতবারের ফলের পুনরাবৃত্তি করতে, আর ভারতও চাইবে ঘরের মাঠে ফাইনালে যেতে। তবে দুটি দলই সাহসী ও আক্রমণাত্মক। এমন ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই স্নায়ুর চাপ থাকবে।
উইকেট কেমন হবে, সেটিও দেখার বিষয়। এর আগে ভারতের কোনো কোনো ম্যাচে স্পিন-সহায়ক উইকেট দেখেছি। তেমন হলে ব্যাটিং-বোলিং দুই দিক দিয়েই ভারতের পক্ষে যাবে। আইসিসি ইভেন্ট যেহেতু, আশা করি ভালো উইকেটই থাকবে। আমরাও দেখতে পাব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক ম্যাচ।
নাজমূল আবেদীন, ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক